“এভাবে বাচ্চা মেয়ে মত মন খারাপ করলে চলে ?”
আমি খানিকটা চমকালাম । সত্যি আমার মন খারাপ । সকাল বেলা আব্বু আমাকে আচ্ছা করে বকেছে । আর পরিস্কার বলে দিয়েছে নতুন কোন মোবাইল তিনি কিনে দেবেন না । তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল বাবার উপর ।
কেবল তো মোবাইলই সে চেয়েছিলাম । এখনকার মোবাইল টা পুরানো হয়ে গেছে । বান্ধবীদের কাছে সব নতুন নতুন ফোন । আর আমারটা কত পুরানো । সকালবেলা আব্বুকেও আজেবাজে বলেছি ।
একটা মোবাইল কিনে দিতে পারে না !
“ কি ব্যাপার নীলু কথা বলছো না কেন ?”
আরে এই লোকটা কে ? আর এ কেমন করে জানে যে আমার মন খারাপ ?
আমি নম্বরটা আর একবার দেখলাম । আননোন নাম্বার ।
“কে আপনি ?”
লোকটার আমার কথা মনে হল কানে গেল না ।
লোকটা বলল “তুমি যে সকালবেলা করে তোমার বাবার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করলে এটা কি ঠিক হয়েছে ? তোমার বাবার মন কিন্তু খুব খারাপ হয়েছে ।“
সত্যি সকালবেলা করে আব্বুর সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে ।
“সে সব সময়ই তো তোমার ইচ্ছা পুরন করতে ট্রাই করে । তুমি কি জানো তোমার জন্য মোবাইল কেনার জন্য তোমার রফিক আংকেলের কাছ থেকে টাকা ধার করার কথা ভাবছে । এটা কি ঠিক হল বল ? আর তুমি তার সাথে কি ব্যবহারটাই না করলে !”
এই টুকু বলেই লোকটা লাইন কেটে গেল । আর আমার মাঝে এক অনুশোচনা বোধ দেখা দিল ।
ছিঃ কি করলাম আমি ? সামান্য একটা মোবাইলের জন্য আব্বুকে এমন ভাবে কষ্ট দিলাম ?
চোখে হাত দিয়ে দেখি চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কাঁদতে কাঁদতেই আব্বুকে ফোন দিলাম ।
“হ্যালো আব্বু !”
“ কি রে মা কি হয়েছে ?”
“ আই এম সরি আব্বু । আমাকে তুমি মাফ করে দেও ।“
“ আরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন ? তুই তো এমন কিছু করিস নি ।“
“ না আব্বু আমি খুব খারাপ কাজ করেছি । তোমার সাথে এমন ব্যবহার করা আমার একদম ঠিক হয়নি । আমাকে তুমি মাফ করে দেও ।“
“ আগে কান্না থামা । আমি কিছু মনে করি নি । আর তুই আমার কাছে চাবি না তো কার কাছে চাবি বল !”
কান্না সামলাতে কিছু সময় লাগলো । বললাম “আব্বু আমার কোন মোবাইল লাগবে না । আর তুমি খবরদার রফিক আংকেলের কাছ থেকে টাকা ধার করবে না ।“
“কি বললি ?”
“ হ্যা আমার মোবাইল লাগবে না ।“
“ আচ্ছা ঠিক আছে লাগবে না । কিন্তু আমি যে রফিকের কাছ থেকে টাকা ধার করবো তুই কিভাবে জানলি ?”
“ জেনেছি । ও তোমার শুনতে হবে না ।“
“ আচ্ছা ঠিক আছে । করবো না । এখন রাখি । পরে কথা বলি ?”
ফোন রাখার পর আমার মনটা ভাল হয়ে গেল আপনা আপনি । ঠিক তখনই আবার ফোনটা বেজে উঠল । সেই অপরিচিত নম্বর । ফোন রিসিভ করলাম ।
“এই তো গুড গার্ল । এখন কত ভাল লাগছে না ?”
“ হু ।“
“ আপনি কে বলুন তো সত্যি করে । এতো কিছু কিভাবে জানেন ।“
“ জানি । আমি তোমার সব কথা জানি । আর তুমি একটা খুব ভাল কাজ করেছ তোমার বাবা টাকা ধার করতে মানা করে । রফিক সাহেব লোকটা ঠিক সুবিধার না ।“
আরে এই লোকটা এতো কিছু জানে কিভাবে ? আসলেই রফিক আংকেল কে আমি একদম পছন্দ করি না । আমাদের বাসায় কয়েক বার এসেছে । কেমন যেন একটা চোখের দৃষ্টি । আমার দিকে কেমন করে তাকায় । আমি ওনার সামনেই যাই না । আমি আবার বলি “কে আপনি ? আমার সম্পর্কে এতো কিছু জানেন কিভাবে ?”
“ বললাম না আমি তোমার সব কিছু জানি ।“
লোকটা হাসতে থাকে । কেন জানি লোকটার হাসি আমার কাছে খুব ভাল লাগে ।
এর থেকে আবীররের ফোন নিয়মিত আসতে থাকে ।
হ্যা । ও নিজের নাম আবীর বলে । আবীর আমার সম্মন্ধে সব কিছু জানে । আমি কথন কি করি না করি কি খাই না খাই সব কিছু । প্রথম প্রথম খুব অবাক লাগতো তারপর সব স্বাভাবিক হয়ে যায় । আমি মোটামুটি ওর কথা তেই চলতে থাকি । ওর সব কিছুই ঠিক আছে ।
কিন্তু দেখা করতে চাইলেই কেন জানি গরিমসি করে ।
আমি বলি “তুমি আমাকে প্রতিদিন দেখ আর তোমাকে দেখতে পারি না । তুমি যদি আমার সাথে দেখা না কর তাহলে কিন্তু তোমার সাথে আমি আর কথা বল বলবো না । তোমার ফোনও ধরবো না ।“
শুনে আবির হাসে । বলে “যদি ফোন না ধরে থাকতে পারো তাহলে ধরো না ! তবে আমি যতদুর জানি তুমি পারবে না । কিছুতেই পারবে না ।“
কথা সত্যি । ও ফোন করলে আমি না ধরে থাকতে পারবো না । এভাবেই চলতে থাকে ।
(চলবে)