খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে নীলুর হলের সামনে দাড়িয়ে আছি । অনেক করে বলার পর ওর রাগ পড়েছে । কিন্তু দেখা হবার পর ও যা যা শর্ত দিয়েছে তা কি করা হবে ?
করতে পারবো তো ?
না হলে তো ও আবার রাগ করবে । যেমন টা কাল করেছিল ।
অবশ্য রাগ করাটা ওর ঠিকই আছে । দোষটা আমারই ছিল । কাল যখন ওকে হলের সামনে নামিয়ে দেই মুখ দেখে বুঝতে ছিলাম ও রাগ করেছে । আর রাগ হলেই ও আমার ফোন রিসিভ করে না । সকাল বেলা এতো বার ফোন দিলাম । ধরলই না । আমারও রাগ হল খানিকটা । মোবাইলটা ছুরে ফেলে দিলাম । অবশ্যই বিছানার উপর ।
আচ্ছা বুঝলাম আমার ভুল হয়েছে ।
মানুষের ভুল হতে পারে না ?
রাগ করতে পারো ।
তাই বলে এতো !
আমার কলটা কি রিসিভ করা যায় না ? অন্তত আমার দিকটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিতে হতে । তাই না ?
আর ভুল শোধরানোর সুযোগও দেওয়া উচিত্ । তা না , কোন যোগাযোগ নাই । কোন সুযোগও নাই ।
যাক আমার কি ?
আমার কি এতো ঠ্যাকা ?
আমিও আর ফোন করবো না ?
কিন্তু পারি না বেশিক্ষন থাকতে ।
আবার ফোনটা হতে নিই । নীলু বান্ধবীকে ফোন দিই । নীলুর রুমেই থাকে ও ।
“অপু ভাই । নীলু সাথে ঝগড়া হয়েছে ।“
“ কেন আমি তোমাকে এমনি ফোন দিতে পারি না ? আমি তোমার বান্ধবীকে আর ফোন দিবো না ।“
“ দেখেন যা পারবেন না তা বলবেন না ।“
কথা সত্যি । ওকে ফোন না দিয়ে আমি থাকতে পারবো না । খানিক্ষন চুপ থেকে বললাম “কোথায় সে ?”
“ শুয়ে আছে । ওর শরীর খারাপ ।“
“ কি হয়েছে ?”
“ কাল রাত থেকে নীলুর জ্বর ।“
“ এখন কি অবস্থা ? ডাক্তার দেখিয়ছো ?”
“ না । ও কিছু করতে দিচ্ছে না । বলছে আমি কষ্ট পেলে কার কি ? আমাকে কেউ ভালবাসে না । আমার কথা কেউ শোনে না ! আমি কথা কেউ শুনবো কেন ? আমি অনেক জোড়াজুড়ি করলাম । শোনেনি ।“
আমি কি বলবো ? আমার উপর ও রাগ করে এমনটা করছে । এমনটা করার কোন মানে আছে !
“ আচ্ছা ভাইয়া কাল আপনি ওর হাত ধরেন নি কেন ? নীলু খুব রাগ করেছে । এতো করে বলার পরও কেন ধরলেন না ?”
“ আসলে ….”
“ দাড়ান দাড়ান আমার কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে লাভ নাই । যাকে দেওয়ার দরকার তাকে দিবেন ।“
“ কিন্তু তোমার বান্ধবী তো ফোনই ধরছে না । প্লিজ ওর কাছে একটু ফোনটা নিয়ে যাও না !”
“ আচ্ছা ধরেন । দেখছি !”
একটু পর নীলুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম । ও ওর বান্ধবী কে বলছে
‘কে ? অপু ?’
‘ হ্যা ।‘
‘ ওকে বল আমি ওর সাথে কথা বলব না ।‘
‘ আমি পারবো না । তুই বল । আমি ফোন রেখে গেলাম যা বলার তুই বল ।‘
তার ২/৩ মিনিট কোন সাড়া শব্দ নাই । একটু পর বললাম “নীলু ?? আছো ?”
কোন সাড়া নাই । আরো মিনিট খানেক পরে মহারানীর সাড়া পাওয়া গেল ।
“হু বল ।“
“ ডাক্তারের কাছে যাচ্ছ না কেন ?”
“ শোন তোমার কাছে কৈফত্ দেবো না । তুমি যখন আমার কোন কথা শুনো না আমি তোমার কথা শুনবো কেন ?”
“ আচ্ছ বাবা আমি খুব সরি । ঐ দিন আমার ভার্সিটির এক ছোট ভাই ছিল পাশে । ওর সামনে কিভাবে তোমার হাত ধরি বল ?”
কিছু সময় নিরবতা ।
“ আমি সরি । সত্যি আমি খুব সরি ।“
নীলু খানিকটা অভিমান আর অভিযোগের সুরে বলল “তুমি সব সময় এমন টা কর । কখনও নিজ থেকে আমার হাত ধরো না । আমি ধরতে চাইলেও না হু না হু করো । কেন কর এমন ?”
আমি বলার কিছু খুজে পেলাম না ।
“আচ্ছা সত্যি তুমি আমাকে ভালবাসো করো তো ?”
“ হ্যা । বাসবো না কেন বল ! তুমি জানো না তোমাকে কত ভালবাসি ?”
“ তাহলে এতো অস্বস্তি কেন ?”
“ আচ্ছা আর হবে না এমনটা । বিশ্বাস কর । আর কখনও হবে না ।“
“ না আমি বিশ্বাস করি না ।“
“ প্লিজ বিশ্বাস কর । আর কোন দিন আমি এমন টা করবো না । তুমি এবার যখন আমার হাত ধরতে বলবে আমি তখনই তোমার হাত ধরবো ।“
“ তবুও আমাকেই বলতে হবে । নিজ থেকে ধরা যায় না ?”
“ ওকে! তুমি যা বলবে তাই হবে । এখন প্লিজ ডাক্তারের কাছে চল ।“
“ না যাবো না ।“
“ কেন যাবে না ? আমি তো সব কিছু মেনে নিলাম । এখনও যাবে না ?”
ও কিছু সময় চুপ করে থাকলো । “আচ্ছা যেতে পারি তবে আমার তিনটা শর্ত মানতে হবে তোমাকে ।“
কি আর করা । মহারানীকে শান্ত করার জন্য মানতে তো হবে । “
“ওকে । তুমি যা বরবে তাই হবে । কি করতে হবে বল?”
“ শর্ত নাম্বার এক হল বিকালবেলা আমাকে তুমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবা ।“
“ আচ্ছা ।“
“ শর্ত নাম্বর দুই হল যতক্ষন রিক্সায় থাকবো আর যতক্ষন পাশাপাশি হাটবো সব সময় আমার হাত ধরে থাকতে হবে ।“
“ সবসময় ?”
“ হ্যা , সবসময় !”
“ আচ্চা ঠিক আছে । তিন নম্বরটা কি ?”
“ তিন নম্বর শর্ত হল যখন তুমি আমাকে হলে নামিয়ে দিবে তখন আমাকে কিস করতে হবে ?”
“ কি বললে তুমি ?”
বলে কি এই মেয়ে ? মাথা ঠিক আছে তো ? আমি আবার বললাম “তুমি কি বললে ?”
“ কি বলেছি শুনেছো তুমি । আমি দ্বিতীয় বার বলব না । যদি রাজি থাকো তাহলে বিকেল বেলা এসো । আর কোন কথা হবে না । বাই ।“
“নীলু শোন নীলু ………….”
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না । কি আর করা ! আসতে হলো । আমাকে যে আসতেই হয় ।
একটু পরেই নীলু বেড়িয়ে এল ।
“ রিক্সা নেব ?
“ হু ।“
সারা রাস্তা আমি ওর হাত ধরে থাকলাম । অস্বস্তি তো লাগছিল কিন্তু ভালও লাগছিল খুব । আর সব থেকে বড় কথা হল ওকে খুব হ্যাপি লাগছিল । ওর মুখে একটা আনন্দের ঝিলিক ছিল । ওটা আমার ভাল লাগছিল খুব ।
ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর অনেকক্ষন ঘুরলাম । পুরোটা সময় ও একবার আমার হাত ছাড়ে নি । সবই ঠিক ছিল ঝামেলা বাধলো সন্ধ্যার সময় ওকে হলে নামিয়ে দেওয়ার সময় ।
ও আমার সামনে দাড়িয়ে । বলল ”তিন নম্বর শর্ত । মনে আছে তো ?”
“ নীলু !! চারিদিকে এতো মানুষ জন রয়েছে !!”
“ আমি কোন কথা শুনবো না । যদি তুমি এখন চলে যাও আমি সারা রাত এখানে দাড়িয়ে থাকবো । মনে রেখো ।“
আমার ভয় হল । ও সত্যি এমনটা করবে । আমি জানি ও এমনটাই করবে ।
এখন আমি কি করি ?
কি করি !!
আমি কি করবো ভাবছি কিভাবে কিস করবো ভাবছি , ঠিক এমন সময় করেন্ট চলে গেল । চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার ছেয়ে গেল মুহুর্তের মধ্যে ।
ঠিক তখনই নীলু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিস করল । সেই অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । কতক্ষন ঐ রকম ভাবে ছিলাম জানি না ।
ও যখন আমাকে ছেড়ে গেল তখন আলো জলতে শুরু করেছে । গেটের কাছে গিয়ে ও আবার ফিরে চাইলো । আমি তখনও দাড়িয়ে । বিশ্ময় ভাবটা তখনও কাটে নি । নীলু হাসলো । তারপর গেট দিয়ে ভিতর চলে গেল ।