২য় পর্ব
আযান দিয়ে দিয়েছে । আমি টিএসসির সামনে দাড়িয়ে আছি । মীমের আসার কথা এখনই । জানি না ও কি বলবে ।
যদি অপমান করে ? নাহ ! ও এমন টা করবে না । চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিলাম । ও এমন মেয়েই না । তবুও মন থেকে অস্বস্তি ভাবটা গেল না কিছুতেই । জানি না কি বিব্রতকর অবস্থা আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মীম চলে আসল । রিক্সায় করে । ওর হল এখান থেকে মাত্র ২/৩ মিনিটের হাটার পথ । তবুও রিক্সায় । রিক্সা আমার সামনেই থামলো । আমি খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই ওর দিকে তাকালাম ।
ওকে রিক্সা থেকে নামতে না দেখে আমি বললাম “নামবে না ?”
“ তুমি উঠে আসো ।“
আমি ওর পাশে বসলাম । রিক্সা চলতে শুরু করল ।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি ?”
“ চল, গেলেই দেখবা ।“
আমি চুপ হয়ে যাই । আবার সেই অস্বস্তিটা ফিরে আসে । ও যে কি বলবে কে জানে ? আল্লাহ মান ইজ্জত রক্ষা কইরো ।
মীম বলল “ কি এতো ভাবছো ? আর এরকম জড়সড় হয়ে বসেছো কেন ? ইজি হয়ে বসো । আর তোমার কি আনইজি লাগছে কোন কারনে ।“
“ না । আনইজি লাগবে কোন ? আনইজি লাগার কোন কারন নাই ।“
কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরে কিছু ছিল । মীম হেসে ফেলল । আমিও খানিকটা হাসলাম বোকার মত । রিক্সা থামল লেক পাড়ের কোন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে । কোন দিন আসিও নাই আমি এদিকটায় । আর কি এক বিদ্গুটে নাম রেস্টুরেন্টার, ঠিক মত উচ্চারনও করতে পারলাম না ।
“ এখানে কেন ?”
ও কেবল হাসলো । আমি বললাম “আজকের দিনে এরকম জায়গা গুলোতে খুব ভীড় থাকে ।“
ও আবার হাসলো । বলল “এসো তো ।“
এসব রেস্টুরেন্টে ঢুকতে আমার খানিকটা ভয়ই লাগে । আল্লাহই জানে cost কেমন হবে । মানিব্যাগে যা আছে তা দিয়ে মান সম্মান টিকবে ? কে জানে ? আবারও নিজের উপর খুব রাগ হল । কেন যে ঐ কাজটা করতে গেলাম । আজ আমার সত্যি সত্যি খবর আছে । হয় মীম বাঁশ দেবে নয়তো এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বাঁশ দিবে ! ভয়ে ভয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম ।
ভেবেছিলাম খুব ভীড় হবে । কিন্তু একদম ভিড় নাই । অল্প কিছু জুটি বসে আছে প্রত্যেক টেবিলে । আর সব থেকে যে জিনিসটা আমার ভাল লাগলো সেটা হল আলো । সন্ধ্যা হলে যেমন আলো হয় চারিদিকে সে রকম আলো । বলতে হয় অদ্ভুদ এক আলো আধারির খেলা ।
মীম এক ওয়েটার কে যেন কি বলল । ওয়েটার টা আমাদের কে পিছনের দিককার একটা টেবিল দেখিয়ে দিল ।
টেবিলে বসতে বসতে বললাম “একদম ভীড় নেই তো ! আমি তো ভেবেছিলাম অনেক ভীড় হবে ।“
মীম আবার হাসলো । বলল “এটার কথা সবাই জানে না । আর এখানে আসার আগে বুকিং দিতে হয় ।“
আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমার সাথে দেখা করার জন্য এতো আয়োজন !
মীম আমার মুখোমুখী বসে । এতোক্ষন পর মীম কে ভাল করে দেখার সুযোগ পেলাম । অন্য দিনের থেকে আজ ওকে একেবারেই অন্য রকম লাগছে । ও কখনই সাজগোজ সচেতন ছিল না । আজ ও বেশ ভালই সেজেছে । আর এই আলো আধারী পরিবেশে ওকে অদ্ভুদ সন্দর লাগছে । এতোক্ষন পর আমার মনে হল না আমি কোন ভুল করি নি । ওকে কার্ডটা দেওয়া মোটেই ভুল হয় নি ।
“অপু ! কি হল কথা বলছো না কেন ?”
“ তোমাকে দেখছি ।“
মনে হল যেন ও খানিকটা লজ্জা পেল ।
“আজ তোমাকে সত্যিই অন্য রকম সুন্দর লাগছে ।“
এবার ও সত্যি সত্যিই লজ্জা পেল । আমি খানিকটা চুপ করে থেকে আবার বললাম “মীম তুমি রাগ কর নি তো ?”
“ কেন ? রাগ করবো কেন ?”
“ না তোমাকে ও কার্ডটা দিলাম । তুমি হয়তো ভাবো নি !”
মীম কিছু সময় নিলো । তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল “ভাবি নি ঠিক । তবে মনের মধ্যে এমন একটা ইচ্ছা ছিল আমার অনেক দিন থেকেই ।“
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । বলে কি এই মেয়ে !
“মনে আছে তোমার আমি যখন মেডিক্যালে চান্স পেলাম না , তুমি আমাদের বাসায় গিয়েছিলে দেখা করার জন্য , আমি তখন কাঁদছিলাম । তোমাকে দেখে মনে হল যে হয়তো তুমি আমাকে বিদ্রুপ করার জন্য এসেছো কিন্তু তোমার কথাগুলো শুনে আমার খুব ভাল লেগেছিল । আমার তখন মনে হয়ছিল সত্যিই তো এখন আমি কার সাথে কম্পিটিশন করবো ? কার সাথে তর্ক করবো ? কার সাথে ঝগড়া করবো ? নিজেকে কেন জানি সেদিন বড় একা একা লাগছিলো । তারপর তোমার সাথে একসাথে ঢাকা আসা । ফোনালাপ । গল্প । সব কিছুই যেন স্বপ্নের মত ।“ একটানা কথা বলে মীম খানিকটা দম নিলো ।
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে । এক বুক বিশ্ময় আর ভাল লাগে নিয়ে । বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । চমৎকার এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে ।
“ এমন করে কি দেখছো আমার দিকে ?”
মীম অন্য দিকে মুখ ঘোরালো ।
“মীম একটা সত্যি কথা বলব ?”
“ বল ।“
“ আমার মনে হয়েছিল যে তুমি আমাকে খুব ঝাড়ি মারবে ঐ কাজটা করার জন্য । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সাহস করে ঐ কার্ডটা না দিলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত !”
“ ক্ষতি ?”
“ হু । তোমাকে পেতাম কিভাবে ?”
“ এখনও পাও নি বুঝছো ।“
“ পাই নি ?” বলে ওর হাত ধরলাম । ও হাত সরিয়ে নিলো না । নিজেও আমার হাতটা ধরলো আরো ভালভাবে ।
“অপু এই যখন ধরেছো বল যে কোন দিন এই ছেড়ে দেবে না !”
“ ভয় পেয় না । আমি ছেড়ে দেবো না ।“
কতক্ষন এভাবে ছিলাম কে জানে ওয়েটার মেনু এগিয়ে দিয়ে বলল
“স্যার কি আনবো ?”
মেনু আর প্রাইস লিস্ট দেখে আমার আবার সেই ভয়টা ফিরে এল । আজ সন্ধ্যায় সত্যিই আমার খবর আছে ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:০৩