ভেবেছিলাম মীম হয়তো গাড়ির মধ্যে আমার সাথে কথাই বলবে না । স্কুল আর কলেজে ওর সাথে যেমন দাকুমড়া সম্পর্ক ছিল ।
ভয়ে ছিলাম এদিক ওদিক দিয়ে যদি ভুল করেও কোন ভাবে ওর গায়ে টাচ্ লেগে যায় ! আর যদি তখন কিছু বলে ! লজ্জায় মাথা কাটা যাবে ।
বাসের মধ্যে আমার আবার খুব ঘুম আসে । যদি ওর দিকে ঝুকে পড়ি । খুবই অস্বস্তির মধ্যেই যাত্রা শুরু হল ।
মীম প্রথমে জানালার দিকেই তাকিয়ে ছিল । মনে হল লক্ষন ভাল না । ও হয়তো কথাই বলবে না । আজ কালকার মেয়ে দের যা মুড !
কিছু জিজ্ঞেস করবো কিনা ভাবছি এমন সময় মীমই কথা বলল
“ সরি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি ।“
আমার বলা উচিত্ না না কষ্ট কিসের ! কিন্তু আমি বললাম “হ্যা খুব বেশি কষ্ট দিলে ! জীবন শেষ হয়ে গেল ।“
মীম মনে হয় কিছু বোঝার চেষ্টা করছে । তারপর হঠাত্ হেসে ফেলল ।
বলল “ তোমার ইয়ার্কী করার স্বভাব আর গেল না ।“
আমি হাসলাম ।
“এতো ফরমাল হবার তো দরকার নাই । স্যার ফর্মালিটি দেখিয়ে গেল আবার তুমি শুরু করেছ ! আমিতো আর তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি না । দুজন একসাথে যাচ্ছি । কথা বলতে বলতে গল্প করতে করতে যাবো । এতে কষ্টের কি আছে । আর তোমার মত একজনের পাশে বসে যাচ্ছি এটা তো আমার সৌভাগ্য ।“
“ সৌভাগ্য ?”
মীম সরু চোখে আমার দিকে তাকাল ।
“ সৌভাগ্য কোন দিক দিয়ে ?”
“ না মানে এইতো তুমি একটা ভাল মেয়ে । আজ কালতো ভাল মেয়ে পাওয়াই যায় না । তারপর ভাল যায়গায় পড়ছ ! সবচেয়ে বড় কথা তোমার মত সুন্দরীর পাশে বসাটা কি সৌভাগ্যের নয় ?”
“ ঢং কর, না ? তুমি আসলেই আগের মতই আছো । ধাড়িবাজ ।“
“ ধাড়িবাজ ?”
আমি আহত হবার ভান করি । “
“তা নয়তো কি ? মানুষকে খোচা দিতে তোমার খুব ভাল লাগে । তাই না ? স্কুলে থাকতে আমাকে নিয়ে কি সব বাজে কবিতা বানাতে মীম মীম মীম/রোজ খায় ডিম এটা কোন কবিতা হল ?”
“ রোজ খায় না রোজ পাড়ে ডিম ।“ কথাটা বলতে চাই নি মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল । এবার দেখলাম মীম সত্যি সত্যি রেগে উঠল । কিছু করার নেই । বলে ফেলেছি ।
“সরি ! সরি । কিন্তু মীম সত্যি বলছি আমি এবার তোমাকে হেয় করার মিন করে বলি নি । আই রিয়েলি মিন ইট । তুমি সত্যি অনেক সুন্দর হয়েছ দেখতো ।“
এই কথাই মনে হল একটু কাজ হল । রাগ একটু মনে হল কমলো ।
তারপর আস্তে আস্তে ও কথা শুরু করে । তারপর পুরো রাস্তা জুড়ে ওর সাথে অনেক কথা হল । অনেক কথা বললাম । আমি নিজেই ভাবি নি ওর সাথে এতো কথা বলব ।
বাস থেকে নেমে ওকে নিজে হলে পৌছে দিলাম । সিএনজি তে করে ।
যখন ওকে রেখে চলে আসবো তখন কেন জানি আমার একটু খারাপ লাগছিল । আসার সময় ওর মোবাইল নাম্বর নিয়ে আসলাম । নিজের টাও দিয়ে এলাম । বললাম কোন দরকার হলে ফোন দিয়ো ।
ওকে রেখে চলে আসছি এমন সময় মনে হল পিছন ফিরে তাকাই । কিন্তু তাকিয়ে ভুল করলাম । ভেবেছিলাম ও হয়তো তাকিয়ে থাকবে । কিন্তু কোথায় কি ? ও কখন চলে গিয়েছে ভিতরে ।
খানিকটা হতাশই হলাম ।
ভেবেছিলাম ওকে ফোন দিবো না । কি দরকার ?
ফোন দিলাম ।
আরো চার দিন পর ।
আর গাধার মত ফোন দিলাম রাতে ।
রাত কথন প্রায় ১২ টা ।
“হ্যালো” মীমের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ।
“ হ্যালো । ভাল আছো ?”
“ এতো রাতে ? কোন দরকার ছিল ?”
কি আশা করেছিলাম আর কি উত্তর এলো ।
“না মানে খোজ খবর নেবার জন্য ফোন দিলাম ।“
“ অপু কিছু মনে করো না আমার খুব মাথা ধরেছে । পরে কথা বলি ?”
“ হ্যা হ্যা কোন সমস্যা নাই । পরে কথা হবে ।“
বলেই ফোন কেটে দিলাম । নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা হল কষে । এমন নিজে সেধে কেউ অপমানিত হতে যায় !
আর মীমকে ফোন দেবো না বলে ঠিক করলাম । হয়তো আর ফোন দেওয়া হতো না যদি না !
যদি না পরদিন সকালে মীম ফোন দিতো !
পরদিন সকালে মীমের ফোনেই ঘুম ভাঙ্গলো ।
“ এখনও ঘুমাচ্ছ?”
আমি কিছু বললাম না । বুঝতে চেষ্টা করছি ও কেন সকাল সকাল ফোন দিলো ।
“ আমি একটু ঘুমাই বেশি ।“
“ অপু আমি আসলে সরি বলার জন্য ফোন করেছি ।“
“ সরি ? তুমিতো সরি বলার মত এমন কোন কাজ কর নি ।“
“না কাল রাতের ব্যবহারের জন্য আমি সরি ।“
আমি খানিকটা অবাক হলাম ।
মীম বলল “আমার ওভাবে ফোন রাখা একদম ঠিক হয় নি । তোমার নিশ্চই খারাপ লেগেছে । আসলে কাল বিকাল থেকে আমার মেজাজটা খুবই খারাপ ছিল । এই জন্য । আই ডিডেণ্ট মিম দ্যাট । প্লিজ তুমি কিছু মনে কর না ।“
ভদ্রতা করে কিছু বলতে হয় ।
তাই বললাম “ইটস ওকে । তবে আমার কিন্তু সত্যি খারাপ লেগেছিল ।“
“ অপু আমি সরি তো বললাম ।“
“ না ঠিক আছে । বললাম আর কি ।“
মীম কিছুক্ষন কোন কথা বলল না ।
তারপর আমি বললাম “তো আমি কি এখন তোমাকে ফোন করতে পারি ?”
“ অবশ্যই । যখন ইচ্ছা ।“
তারপর যেন সব ঠিক হয়ে গেল । ঐ দিন রাতে মীমই আমাকে ফোন দিলো । এর পর থেকে আমাদের রিলেশন ভাল হয়ে গেল । মধুরও । প্রতিদিনই আমরা কথা বলতে লাগলাম । প্রথমে ফোনে তারপর সরাসরি । দেখা হত কথা হত । ঘোরাঘুরিও হত ।
সবকিছুই ভাল চলছিল এমন সময়ই এই আহাম্মকেল মত কাজটা করলাম । কেবল কার্ড দিলেও না হয় কথা ছিল । কার্ডের মধ্যে কাব্যিক বিদ্যা প্রয়োগ না করলেই কি হত না !!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫১