ভেবেছিলাম ত্বন্নীকে দেখতে যাবো না । কিছুতেই যাবো না । কিন্তু না গিয়ে পারলামও না ।
ত্বন্নীর ভাই এসেছিল । এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো । আমি না করতে পারলাম না কিছুতেই । আর না যাওয়াটা অমানবিক হত ।
ওর অবস্থা নাকি খুব ক্রিটিক্যাল । দুএক বার নাকি চেতনা এসেছিল । বার বার নাকি আমার নাম নিয়েছে !
গাড়ি চলছে হাসপাতালের দিকে আর আমি ভাবছি ত্বন্নীর কথা ।
সেদিন সুমনের কাছ থেকে সব শোনার পর আমার সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেছিল । আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন আমি আর এই পৃথিবীতে নাই । একজন মানুষ আর একজনের সাথে এমনটা কেমন করে করতে পারে ? আমার মনটা কি একটা বাজির সমান ? এতোই ক্ষদ্র আমি ?
তবুও ভার্সিটিতে গেলাম । ত্বন্নী যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল ।
ওর সামনে যখন দাড়ালাম তখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এত সুন্দর একজন মানুষ আমার সাথে এমন একটা ঘৃন্য খেলা খেলতে পারে ।
ত্বন্নী আমাকে বলল “এতো দেরী হল কেন ? আমি কতক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি ।"
তারপর হেসে বলল "তুমি যেন কি আমাকে বলবে আজ ?”
আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । তারপর বললাম “কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ সরি”
ত্বন্নীকে একটু চমকাতে দেখলাম । ও মনে হয় আমার কাছ থেকে এটা আশা করে নি ।
“সরি আমি বুঝতে পারলাম না তুমি কি বললে ?”
আমি বললাম “তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ বাজি ?”
“ হ্যা । বাজি । আমাকে প্রেমে ফেলানোর বাজি । আমাকে নিয়ে খেলা করার বাজি ।“
কিছুক্ষন ত্বন্নী কোন কথা বলতে পারলো না ।
“শোন অপু তুমি যেমন টা ভাবছো তেমন না । আই ক্যান এক্সপ্লেইন ।“
“ আমি কোন ব্যাখ্যা শুনতে চাইছি না । আমি শুধু জানতে চাই তুমি বেট ধরেছিলে কি না?”
ত্বন্নী কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । তারপর মাথা ঝাকালো ।
কি জানি হয়ে গেল আমার ! মাথা যেন আগুন ধরে গেল । কষে এক চড় মেড়ে বসলাম ।
“আমি কখনও ভাবিও নি তুমি এমন টা করবে ! এতো সুন্দর চেহারা তোমার । মনটা এতো কুৎসিত কেন ?? আমার নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে যে তোমাকে আমি ভালবেসেছি ।“
কথা গুলো ওকে কিভাবে বলেছিলাম কে জানে । তারপর চলে আসি ওখান থেকে ।
পরের এক সপ্তাহ বলতে গেলে একেবারে বিচ্ছন্নই ছিলাম সবার কাছ থেকে । কারো সাথে কোন যোগাযোগ করি নি । একাই নিজের মন বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম । তারপর যখন ক্লাসে গেলাম সবাই যেন আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতে লাগল ।
ত্বন্নীর মত মেয়েকে যে আমি চড় মেড়ে বসব এই কথা হয়তো কেউ ভাবে নি । সবার কথা বলছি কেন আমি নিজেই তো ভাবি নি । নিজের ক্লাস রুমটাকে কেমন জানি অচেনা লাগছিল । কদিন আগেও জীবন টা কত সহজ ছিল । আর এখন জীবন টা কত জটিল হয়ে গেলো । ত্বন্নী আসলো তারও কিছুক্ষন পরে ।আগের মত হাসি খুশি না । আজ আর চেহারায় সেই আত্মবিশ্বাসের হাসি দেখতে পেলাম না । তারপর এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।
সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু আগের সহজ সরল জীবনের সুর কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠল ।
তারপর একদিন । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । কেউই বলতে গেলে আসে নি । একটা ফরম জমা দিতে হবে বলে আমি এসেছিলাম । না হলে আমিও আসতাম না । হেডফোনে গান শুনছিলাম আর বৃষ্টি দেখছিলাম ।
এমন সময় দেখি ত্বন্নী আমার দিকে আসছে । প্রথম ওকে ইগনোর করা চেষ্টা করি । কিন্তু লাভ হয় না । ও আমার সামনে এসেই বসে । ইশারায় হেড ফোন খুলতে বলে । একসময় ছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য মন টা সবসময় অপেক্ষা করে থাকতো । কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন ।
আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম । ও আমার পথ আটকালো । বললাম “সমস্যা কি ?”
“ তোমার সমস্যা কি ? আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে নাকি ! অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ তো দিবে ?”
“ ক্ষমা চেয়ে কি করবা তুমি ? কোন দরকার আছে ?”
“ আছে ।‘
“ কোন দরকার নাই । কোন লাভ নাই । কারন আমি কোন দিন তোমাকে ক্ষমা করবো না । কোন দিনও না ।তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণ্ণা হচ্ছে । পথ ছাড়ো । যেতে দাও ।“
ত্বন্নী কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল ।এতো কঠিন কথা শুনে ওর অভ্যাস নেই । দেখলাম ওর চোখে দেখলাম পানি জমতে শুরু করেছে ।
জল ভরা চোখ নিয়ে ও বলতে লাগল “একথা সত্যি যে তোমার সাথে আমি মিশতে শুরু করেছিলাম বেট ধরেই । কিন্তু বিশ্বাস কর তোমার সাথে মিশার সময় আমার মন আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছিল । আমি সত্যি সত্যি আমাদের রিলেশন টা স্থায়ী করতে চেয়ে ছিলাম । আমি তোমার উপর সত্যি সত্যি ফল করতে শুরু করেছিলাম ।ইনফ্যাক্ট আই হ্যাভ অলরেডি ফলেন ইন লাভ উইথ ইউ । আর এই কয়দিনে তুমি আমি আরো বেশি বেশি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি । অপু প্লিজ আমার কথা টা বিশ্বাস কর ।“
খুব ইচ্ছা করছিল ত্বন্নীর কথা গুলা বিশ্বাস করি ! কিন্তু বেলতলায় একবার যাওয়াই ভালো ।
“কথা শেষ হয়েছে তোমার?”
ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো আহত চোখে ।
“তুমি বিশ্বাস করছ না আমার কথা ?”
“করার কোন কারন নেই । আর শোন তোমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ । আসলে তা কিন্তু না । সারা জীবনে তুমি কখনও কারো কাছ থেকে রিজেক্টেড হও নি তো তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে । আমি করেছি । তোমার আগে পিছে সব সময় তুমি ছেলেদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছ ! আমি করছি না তাই আমার প্রতি তোমার আকর্ষন জন্মেছে । আর এটাকে আর যাই বলুক ভালবাসা বলে না!”
“অপু ….... “
ত্বন্নী আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে সুযোগ দিলাম না ।
গাড়ি থেমে গেছে । মনেহয় চলে এসেছি । হাসপাতালে.....।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১