মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল । রাতে শোবার আগে যখন ফোনটা হাতে নিলাম দেখি ৮৭ টা মিস কল ।
একটা নম্বর থেকে না অনেক গুলো নম্বর থেকে । পরিচিত অপরিচিত ।
কি এমন দরকার হল আমাকে কে জানে ? আগে কাকে ফোন করবো তাই ভাবছি এমন সময় সুমন এসে ঢুকল ঘরে ।
“ফোন ধরিস না ক্যান ?”
“ আরে সাইলেন্ট ছিল । বুঝতে পারি নি । কি হয়েছে । এতো বার ফোন দিছিস ক্যান ?”
“ ত্বন্নী সুইসাইড করেছে ।“
“ মানে ?” বুকের মধ্যে কেউ যেন কেউ আস্তো একটা ছোড়া ঢুকিয়ে দিল ।
“ মানে করার ট্রাই করেছে । হাসপাতালে আছে । তোকে বার বার দেখতে চাইছে ।“
“মানে এখনও মরে নি ।“
“ অপু এমন ভাবে বলিস না প্লিজ ।“
“ কেন বলব না ? আর তুই আমার কাছে কেন এসেছিস ? ও আমার কে ? ও বাঁচল কি মরল তাতে আমার কি যায় আছে ?”
“ অপু প্লিজ এতো জেদ ধরিস না । তুই কি ওকে ভালবাসতিস না ?”
“ হ্যা । বাসতাম । আর বাসতাম বলেই আজ ওকে ঘৃনা করি । তুই তো জানিস ও আমার সাথে কি করেছে ।“
সুমন কিছু বলল না । মোবাইল বের করে কি যেন করল । তারপর আমার দিকে মোবাইলটা দিয়ে বলল “এটা দেখ ।“
“ কি এটা ?”
“ ত্বন্নীর শেষ ফেসবুক স্টাটাস ।“
আমি নিলাম । ওটাতে লেখা “আই এম সরি অপু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ।“
আমি মোবাইলটা ওকে ফিরিয়ে দিলাম । আমার কোন ভাবান্তর হতে না দেখে সুমন বলল “তুই কি বেচারীকে এখনও ক্ষমা করবি না ।“
“ কোন দিনও না । আর তুইতো আমাকে ওর আসল চেহারার কথা বলেছিলি ।“
“ বলেছিলাম । কিন্তু ও বদলেছে ।“
“ ও বদলেছে কিন্তু আমি বদলাই নি ।“
“ ও যদি আজ মরে যায় ?”
“ মরবে না । ওমন মেয়েরা এতো সহজে মরে না । আর আগেই বলেছি ও বাঁচল বা মরলো আমার তাতে কিছু যায় আসে না । তুই এখন যা । তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।“
অনিচ্ছা সত্তেও সুমন চলে গেল ।
আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু শুয়ে পড়লেই কি আর ঘুম আসে ? আমার মনের ভিতর তোলপাড় চলছে । ত্বন্নীকে নিযে তোলপাড় । যতই মুখে আমি জেদ দেখাই মনের ভিতর ওকে নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছেই । কি করব আমি ? ও আমার সাথে যাই করুক না কেন ভাল তো বাসি ওকে ।
ত্বন্নী । ফারহাধা জাবিন ত্বন্নী । আমাদের ক্লাসের সব থেকে স্মার্ট মেয়ে । সব থেকে সুন্দর মেয়ে । আর সব থেকে অহংকারী মেয়ে । ওরিয়েনটেশনের প্রথম দিন ত্বন্নী নিজের উপস্থিতি আর গুরুত্ব খুব ভাল করে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে ছিল । উপরের ক্লাসের ভাইয়ারা তো ছিলোই আমাদের ক্লাসের মোটামুটি সবাই ত্বন্নীর উপর ফিদা ছিল । এবং সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও ছিলাম । ও যখন ক্লাসে আসতো যেন এক ঝড়ো বাতাস মনের মধ্য বয়ে যাচ্ছে । যথন ওর সাথে দেখা হত মনের ঘরে যেন হাজারো বেহালা বেজে চলত । কিন্তু ওকে পাবার স্বপ্ন ওর সাথে বন্ধুত্ব করা এমন কি ওর সাথে কথা বলার কথাও ভাবতাম না কোন দিন ।
কিভাবে ভাবতাম ? ও হল একটা পারফেক্ট মেয়ে । সবার মনের রানী আর আমি ক্ষুদ্র প্রজা । গ্রাম থেকে আসা ক্ষ্যাত মার্কা একটা ছেলে । ওর ধারে কাছে যাবার প্রশ্নই আসে না । আমি যেতামও না । এভাবেই চলে যাচ্ছিল জীবন ।
কিন্তু একদিনের কথা । আমি ক্লাস শেষে হলের দিকে যাচ্ছি ।
এমন সময় পেছন থেকে ডাক “অপু একটু দাড়াবে ?”
কণ্ঠ শুনে মনে হল দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো ।
ত্বন্নীর মুখে নিজের নাম কখন যে শুনবো এটা আমি কোন দিন আশাই করি নি । আমি দাড়ালাম ।
“ হাই ।“
এতো টাই নার্ভাস হয়ে পড়লাম যে হ্যালো টাও বলতে পারলাম না । কোন রকম একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ত্বন্নী খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে বলল “ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে পারি ?”
“ বল ।“
“ একচুয়ালী কথা না, অভিযোগ । তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে ।“
“ অভিযোগ ?” আমি অবাক হই ।
“তুমি আমাকে এড়িয়ে চল কেন ?”
কিছুই বলতে পারলাম না । বোকার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া । তাছাড়া আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে ত্বন্নী আমার সাথে কথা বলেছে ।
সেইদিন রাতে ঘুম তো আর আসেই না । কত কিছুই না মনের জানালায় উকি মারে । মন ছুয়ে যায় কত অজানা রঙে । তারপর আসতে আসতে ত্বন্নীর সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায় । মোবাইলে কথা হতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
পড়ব পড়ব না করেও আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই । জীবন যেন এক নতুন পথে চলতে থাকে । যে পথে কেবল ত্বন্নী ছাড়া আর কিছুই নেই ।
আমি ভাসতে থাকি নতুন স্বপ্নে । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগে না । আমার ও লাগলো না ।
যে দিন আমি ঠিক করেছি যে ওকে বলব সেদিন সব যেন কেমন অন্যরকম হয়ে যায় । সকালবেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় সুমন কে আসতে দেখলাম । ওর মুখ থমথমে ।
আমি বললাম “ কি হয়েছে ?”
“ তোর সাথে কথা আছে ।“
“ বল ।“
‘ এখানে না । আয় আমার সাথে ।“
বলে এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে গেল ওর রুমে । নাস্তাও ঠিক মত শেষ করতে দিল না । আমরা মুখো মুখি বসলাম ।
“ তোকে একটা কথা জিঞ্জেস করবো সরাসরি উত্তর দিবি ।“
আমি বললাম “আচ্ছা দিবো । কি হল এমন ?”
“ তুই কি আজকে ত্বন্নী কে প্রোপোস করার কথা ভাবছিস ?”
আমি খানিকটা চমকালাম । ইতস্তর করে বললাম “তুই কিভাবে জানিস ?”
“ শুধু আমি না পুরা ভার্সিটির সবাই জানে এটা । তুই কি বুঝতে পারছিস না ত্বন্নী তোকে নিয়ে খেলা করছে । তোর কি মনে হয় ও সাথে মিশছে কেন ? তোর কোন আইডিয়া আছে ?”
আমি কোন কথা বলতে পারি না । সত্যি তো আমার তো কিছুই নেই যে ও আমার সাথে মিশবে ।
সুমন বলল “ত্বন্নী ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছে যে তোকে ওর প্রেমে ফেলবে । তারপর সবার সামনে তোকে হেয় করবে । আজ সবাই রেডি হয়ে আছে মজা দেখার জন্য ।“
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মানুষ এমনটা কেমন করে করে ? কারো ইমোশন নিয়ে কিভাবে খেলে ?
(চলবে)