“তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল, তাই” একথা বলেই ঈশিতা আবার চুপ হয়ে গেল ।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
আশ্চর্য এখানে কান্নার কি হল ? আমি এমন কি বলেছি ? আশ্চর্য ! আর সব থেকে অবাক করার বিষয় হল ও আমাকে তুমি করে বলতেছে ক্যান ??
ঈশিতা কাঁদছে । আর আমি অসস্তি এবং বিশ্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি । ও আজ এমন অদ্ভুদ আচরন কেন করছে ? খানিকটা অসস্তি নিয়ে ঈশাতার হাত ধরলাম ।
বললাম “ তুইতো জানিস আমি কখন কি বলি তার ঠিক নাই । প্লিজ তুই কিছু মনে করিস না । আই এম সরি ।“
কিছুক্ষন পর ওর কান্না থামল । নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে ও বলল “ তুই কেন সরি বলছিস ? তোর কোন দোষ নাই । আসলে আমি কেমন জানি অদ্ভুদ আচরন করছি । আমি জানি আমার বিহেইভে তুই খুব অবাক হচ্ছিস । আমি তোকে অসস্তিতে ফেলে দিয়েছি । আমি তোকে কথা দিচ্ছি বিকেলের পর তোর কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে ।“
অসস্তি খানিকটা কমলো । তুমি থেকে তুই তে তো এসেছে । অনেক্ষন পর ও আমার দিকে তাকাল । ওর চোখে এখনও খানিকটা পানি লেগে আছে । কি অদ্ভুদ সুন্দর যে লাগছে ওকে । খুব ইচ্ছা হল ওর চোখে পানি টা মিছে দিই । দিতে পারলাম না অসস্তি লাগার কারনে ।
ওকে বললাম “ কি করবি এখন বল ?”
“ জানি না ।“
“ আরে না জানলে কেমন করে হবে ? সময়তো কাটাতে হবে, নাকি ?”
ও বলল “কোখা থেকে ঘুরে আসি চল । তোর সাথে তো কখনও কোথাও যাওয়া হয়নি ।“
“ কোথায় যেতে চাস বল ?”
“ চল কোথাও ।“
“ আচ্ছা চল ।“
বাচ্চা ছেলে মেয়ে দের মত সারা দিন খুব ঘুরলাম ।লালবাগ কেল্লা, শিশুপার্ক , জাদুঘর আরো কত জায়গায় । জাদুঘর থেকে যখন বের হলাম তখন বিকেল প্রায় শেষ ।
ও বলল” চল পিছন দিকে যাই ।“
জাদুঘরের পিছনে বিশাল শান বাঁধানো পুকুর । দুজন ঐ পুকুর পাড়েই বসলাম ।
ঈশিতা খানিক্ষন চুপ করে থেকে বলল “আজ তোকে অনেক কষ্ট দিলাম তাই না ?”
“ না কষ্ট হবে কেন ? আমাদের সময়টা অনেক সুন্দর কাটলো না একসাথে ?”
ও হাসলো । বলল “জানিস অপু এই পুরো পৃথিবীতে আমি যতক্ষন তোর সাথে থাকি ততক্ষন আমার সময় খুব ভাল কাটে ।“
বললাম “তোর সাথে আমার সময়ও খুব কাটে” ।
ঈশিতা আমার চোখের দিকে তাকালো । ওর চোখে অন্য কিছু ছিল । ও অন্য কিছু বোঝাতে চেয়েছে । আমার অসস্তিটা আবার ফিরে আসতে শুরু করে ।
ও বলতে থাকে “এবার তোকে কিছু কথা বলি । কথা গুলো কাউকে বলিস না কেমন !”
ও আমার দিকে তাকালো আবার । অদ্ভুদ সেই দৃষ্টিতে ।
“জানিস যখন আমি এইটে পড়ি একজনের প্রেমে পড়েছিলাম । কি ভালই না বেসেছিলাম ঐ ছেলেটাকে । নিজের মন প্রান উজার করে । কিন্তু ঐ ছেলেটা আমার বিশ্বাসকে এমন ভাবে ভেঙ্গেছিল যে ছেলে মানুষের উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গিয়ে ছিল । বিশ্বাস উঠেছিল ভালবাসার উপর থেকেও ।কখনও আর কাউকে মনের ভিতর প্রশয় দেই নি । সব কিছু ভাল চলছিল । কিন্তু তুই এসে সব কিছু ওলট পালট করে দিলি । তোর সাথে মিশার পর নিজেকে যেন নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম । আর কিছুতেই নিজেকে তোর প্রেমে পড়া থেকে বিরত রাখতে পাড়লাম না । আমি জানি না তুই আমাকে গ্রহন করবি নাকি ফিরিয়ে দিবি, তোকে কেবল এই কথাটা বলতে চাই যে আমি তোকে ভালবাসি ।“
আমি যে কি বলব বুঝতে পারছি না ।
ও বলতে থাকি “ আমি সত্যি তোকে অনেক ভালবাসি । তুই যখন আমার আশেপাশে থাকিস সব কিছু যেন অন্য রকম হয়ে যায় ।তোকে ছেড়ে যেতে মন চায় না । কত বাহানায় তোর কাছে ফোন করি । কেবল তোর সাথে কথা বলব বলে । আজ সারা দিন তুই আমার সাথে ছিলি আমার যে কি ভাল লাগছিল তোকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না । এটাকে ভালবাসা না বললে আর কি বলে, বল ?”
তারপর ও একটু দম নেয় ।
“ অপু তুই আমাকে ইচ্ছা করলে ফিরিয়ে দিতে পারিস কিন্তু প্লিজ আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না । বল করবি না । বল !!”
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৪৫