ইহা একটি চিরাচরিত রাজা রানীর রুপকথার গল্প, কারো সাথে মিলে গেলে সেটা হবে কাকতালমাত্র, এইজন্যে লেখককে কোনভাবেই দায়ী করা যাইবে না...
রানী ইলাবতীর আগেকার সুখের জীবন আর রহিল না। ইচ্ছেমত ঘুম হইতে উঠা, প্রাতঃভ্রমনে সখাদের সহিত ইতঃস্তত ভ্রমন, রাজপুত্র, কোটালপুত্র, মন্ত্রীপুত্রদিগের সহিত কবুতরের মাধ্যমে পত্র বিনিময়, এইসব নতুন রাজা সহ্য করিবে না বলিয়া প্রজ্ঞাপন জারি হইয়াছে। নতুন রাজার বিষয়টা এইবারে একটু খোলাসা করিতে হয়।
সোমনগর রাজ্যের রাজার দুই কন্যা, ইলাবতী আর কলাবতী। ইলাবতীর রুপে মুগ্ধ হইয়া পার্শ্বদেশের আরেক রাজন ইলাবতীর পানিপ্রার্থী হইবার জন্যে আগ্রহ জ্ঞাপন করিয়াছেন। কিন্তু ইলাবতী এহেন অস্থিতিশীল রাজনকে মানিয়া লইতে নারাজ বিধায় রাজা আক্রমন করিয়া সবাইকে বন্দী করিয়া ইলাবতীকে জোরপুর্বক বিবাহের সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। বিবাহের দিন ধার্য হইয়াছে। আসন্ন কোজাগরী পুর্নিমার দুইদিন বাদে ইলাবতীর বিবাহ। যেদিন এর কথা কহিতেছি সেই দিন ছিল কোজাগরী পুর্নিমা। ইলাবতী অনেক কষ্ট পাইয়া ভাবিল, এই অস্থিতিশীল রাজনের সাথে বিবাহের পুর্বে সখীগনের সহিত একবার জলকেলী করিতে পারিলে মন্দ হইত না। ঘড়া ভর্তি করিয়া আড়ং দুধ, মধু, কাচাহলুদ, চন্দন, বসরাই গুলাব, মসলিন আসিল। মসলিন দেখিয়া ইলাবতীর কিঞ্চিত শরম লাগিতে লাগিল, এই পরিধেয় কিভাবে পরিধান করিবে ইলাবতী।
সে যাই হোক, সেই মস্ত দীঘির তলদেশে ছিল কুমির রাজার বসবাস। কুমির রাজা বহুকাল পুর্বে এই রাজ্যের ই রাজা ছিলেন, কোন এক মুনির অভিশাপে অদ্য রাজা কুমির । সেই কুমির রাজ্যের রাজপুত্র সত্যবিক্রম অনিন্দ্যকান্তি পুরুষ, স্তিতিশীল পুরুষ। কিন্তু সমস্যা একটাই, ইহার নিম্নদেশ কুমিরের। স্থিতিশীল হইয়াও কাহারো সহিত কোনরুপ কর্ম সম্পাদন করিতে পারিতেছে না এইটা নিয়া রাজপুত্রের মনে বেজায় কষ্ট, মনের দুঃখে সত্যবিক্রমকে হরহামেশাই দিঘীর জলে সাতার কাটিতে দেখা যায়। আমাদের ইলাবতী যখন মসলিন পরিধান করিয়া জলকেলী করিতে উদ্যত তখনই সত্যবিক্রম ইলাবতীকে দেখে। চন্দ্রের আলো যখন ইলাবতীর অঙ্গে পরিয়া চকচক করতেছিল তখন সত্যবিক্রম ভাবিয়াছিল, ইহা একটি ইলিশ মাছ। সে আনন্দ সহকারে অগ্রসর হইয়া বিস্ফোরিত নেত্রে দেখিল, আরে, ইহা যে মনুষ্যনারী। মনুষ্যনারীর অনেককিছুতেই সত্যবিক্রম বিস্মিত হইল এবং প্রেমযমুনায় পতিত হইল। আরো ভালো করিয়া ইলাবতীকে অবলোকনের উদ্দেশ্যে সত্যবিক্রম সহসা স্বপিঠে ইলাবতীকে লইয়া এক দৌড়ে আপনকক্ষে প্রবেশ করিল। ইলাবতী এতক্ষনে কিছু ঠাহর করিবার অবস্থানে আসিল।
একি! উনি কে! উনি কি স্বর্গের দেবতা? এত স্থিতিশীল পুরুষ এতকাল কোথায় ছিল? ক্বিয়দক্ষন ভালোভাবে নিরিক্ষা করিতেই ইলাবতী বুঝিল ইহার নিম্নদেশ কুমিরের। দেখিয়া ইলাবতী কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়িল, নিম্নদেশ না থাকিলে কেমনে কি হইবে? ইলাবতী ক্রন্দনের হেতু বুঝিতে পারিয়া সত্যবিক্রম ইলাবতীর মসলিন হইতে নেত্র সরাইয়া বলিল, “কন্যা, ইহা কোন সমস্যা নহে, সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে মুনি আছেন, ঊনার কাছে তোমার এই মসলিন নিয়া যাইতে পারিলেই আমি পুনরায় পরিপুর্ন পুরুষ হইয়া উঠিব।” শুনিয়া এইবার ইলাবতীর নেত্র আনন্দ অশ্রুতে পরিপুর্ন হইল, সে আনন্দ সহকারে মসলিন বিসর্জন দিল। সত্যবিক্রম জীবনে এই প্রথম একটা মিথ্যা কথা বলিল, মুনি মসলিন নিয়া যাইতে বলেন নাই, খালি হাতে গেলেও হইত।
এর পরের কাহিনী সরল, সত্যবিক্রম মুনিদর্শন করিয়া পুর্নাঙ্গ স্থিতিশীল পুরুষ হিসাবে আবির্ভুত হইয়া ইলাবতীকে বগলদাবা করিয়া অত্যাচারী অস্থিতিশীল রাজার নিকট যাইয়া একখান হুঙ্কার দিয়া বলিল, "দূরে যায়া মর!"। অস্থিতিশীল কিছু স্থিতিশীল এর নিকট কখনও টিকিতে পারিয়াছে বলিয়া আপনারা শুনিয়াছেন কখনো?
অতঃপর উহারা সুখে শান্তিতে দিন গুজরান করিতে লাগিল। (Happily ever after)
পরবর্তী উপাখ্যানঃ প্রিন্সেস কলাবতী উপাখ্যান।