আমি কখনই ফুটবলের হার্ডকোর সমর্থক ছিলাম না। ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটটাই কেন জানি বেশী টানে। তবু বিশ্বকাপ বলে কথা। একটু হুড়াহুড়ি না করলে মানুষজন মুর্খ কইব, তাই মুলত লাফালাফি শুরু করলাম। আর লাফালাফি করতে গেলে একটা দল লাগবে। তাও যেন তেন দল না, হয় আর্জেন্টিনা নয়ত ব্রাজিল। নয়ত লাফালাফি জমব না। এইসব করতে করতেই গতবারের বিশ্বকাপে কি হয়েছিল সেটা মনে করতে যেয়ে দেখলাম কিছুই মনে নাই। তখন বের করলাম গতবার আর্জেন্টিনা বিদায় হইসিল বইলাই আমার কিছু মনে নাই, সুতরাং আমি আর্জেন্টিনা। সাথে আরো দুইডা দল খুঁইজা বাইর করতে হইব যাতে আর্জেন্টিনা বাদ হইলে নিজের পিঠ বাচানো যায়। সুতরাং সাথে যোগ হইল জার্মানি (আমি ব্যক্তিগত ভাবে ক্লোসা রে পছন্দ করি, তাই জার্মানি), আর গতবারের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে ইতালী, তাই তিন নম্বর হিসাবে ইতালী।
যাই হোক, দল তো হইল, এইবার প্লে গ্রাউন্ড ঠিক করতে হইবে। প্রাথমিক ভাবে প্লে গ্রাউণ্ড হিসাবে ফেসবুক আর মোবাইল নির্ধারিত হইল। প্রথমেই যেটা করলাম ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার হিসাবে আপত্তিকর একটা ছবি দিলাম। কার্টুন বাচ্চা আর্জেন্টিনার পতাকা গায়ে দিয়া ব্রাজিলের পতাকার উপর হিসু করতেসে। এইটা দেয়া মাত্র খেলা শুরু হয়া গেল। কয়েকজন তো পতাকার অবমাননা কেন করতাসি সেইটা নিয়া সিরিয়াস আলুচনা শুরু কইরা দিল। এই মধ্যে আমার প্রিয় একজন ব্লগার হামাও আছে। এম্নিতে আমি ফেসবুক খুব একটা ব্যবহার করি না। কিন্তু বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে আমার সহদলের লোকদের সবার স্ট্যাটাসে লাইক দিতে শুরু করলাম। আর ব্রাজিলের পুলাপাইনরে কাটাসম কমেন্ট।ব্যস, খেলা তুঙ্গে ...
এইবার আসি খেলা প্রসঙ্গে। খুব আগ্রহ নিয়া খেলা দেখতে বসলাম। ব্রাজিলের প্রথম খেলা দেইখা ভালই লাগল। আর ম্যারাডোনার লাফালাফি দেইখা বিরক্ত লাগল। এর মধ্যে ব্রাজিলের সেকেন্ড খেলা দেইখা মুগ্ধ হইলাম। কাকা, রবিনহো আর ফ্যাবিয়ানোর সমন্বয় ভালো লাগল, যদিও ফ্যাবিয়ানো পোলাডা বেশী ঢং করে। জার্মানির খেলা ভালো লাগল, কমপ্লিট একটা দল মনে হইল, সাথে স্পেন। ডেভিড ভিয়া রেও জটিল লাগল। কিন্তু সেকেন্ড রাউন্ড শেষে এমন একটা পরিস্থিতি হইল যে আমার বাছাই করা তিনটা দল থেইকা যেকোন একটা ফাইনালে যাইব, একটু দুঃখ পাইলাম, আর ব্রাজিলের নিস্কন্টক রাস্তা দেইখা আমার প্লে গ্রাউন্ডে (ফেসবুক) আক্রমনের ধার বাড়ায়া দিলাম।এইবার জমল মজা। ব্রাজিলিয়ান রা মনে করে ওয়ার্ল্ডকাপ টা তাদের জন্যেই বানানো হইসে। তাদের এই মনোভাব খেলা আরো জমায়া তুলল। অবশেষে আমার খেলার শেষভাগ আসল নেদারল্যান্ড আর ব্রাজিলের খেলার দিন। দুপুর থেইকাই ফেসবুকে তুমুল আক্রমনের উপ্রে রাখলাম। এইডাও কইলাম যে ব্রাজিল হারলে রেডিসন বুফে ডিনার খাওয়ামু। আমি মোটামুটি শিউর আছিলাম যে ব্রাজিল জিতব, তাই এই আক্রমনটা করছিলাম। কিন্তু হায় ঈশ্বর, একি হইল! ব্রাজিল আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখল না। খেলার জিতার পরে ফেসবুকে ল্যাপ অফ অনার দেয়ার পরে একটু একটু খারাপ লাগতে লাগল। কালকের থিকা আমার খেলা শেষ। পুলাপাইন ঝিমায়া যাইব। ২ মাস পরে আরেকটা বিশ্বকাপের আয়োজন করা হউক, আমি আবার খেলা শুরু করবার চাই।
এর মাঝে মোবাইলেও ছোটখাট খেলা খেলতে শুরু করলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাজিল গোল খাইবার পরে একজনরে এমএমএস করলাম, “লিখে রেখ, এক ফোটা দিলেম শিশির ...”। সে আমার রিপ্লাই দিল, “সাগরে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়?”
২০১৪ সালে আরেকটা বিশ্বকাপ। আমি সিউর ততদিনে অনেককিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে। দুনিয়া যেমনে ঘুরতাসে। আবেগ, সুযোগ, খেলা দেখার সময় হবে কিনা জানি না। সুতরাং অফিসিয়ালি এইবারের ওয়ার্ল্ডকাপেই আমি অবসর নিতাসি।
আর্জেন্টিনা জিন্দাবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪৮