আমার বেশ ভাল এক বন্ধু। একসাথে থাকছি, খাইছি, ঘুরছি, কোচিং করছি। আরও কত কতকি করছি তার ইয়ত্তা নাই। ওর বাবা স্ট্রোক করার পর ও যশোর ফিরে যায়। সেখানেই এডমিশন নেয়। আমি যশোর যাইনি কোনদিন। সুযোগ পেলাম এই মাসে যাওয়ার। ভাবছি গিয়া দেকুম বেডা আনন্দে ঘুর ঘুর করব ওর স্বভাবমতন। কিন্তু দেহি মনবেজার কইরা বইয়া আছে।
‘কিরে তর গডনা কি ক দেহি?
কিছুনা দুস্ত আর কিরম যেন বিধবা বিধবা মনে হইতাছে।
কেন বেডা তুইর বউকি মরছেনি?
নারে ওর আইজ বিয়া, ওর বাপ অন্য জায়াগায় দিতাছে।
ত, তুরতো আনন্দে বগল বাজাইবার কতা, কান্দুম কান্দুম করছ ক্যা?
ও মাইয়া ফুন করছে। অনেক কান্নাকাটি করছে।
তো তাতে তোরকি? তরতো তাতে মন খারাপ হওয়ার কথা না।
তা হয়নাই, তবে মাইয়্যা এমন কথা কইছে যে মুইর আতে লাগিছে।
কি কইছে ক না, মনডা একটু ডান্ডা করি। বাসে বহুত কষ্ট হইছে।
রাইতে ফুন দিছে। কয় আমি ব্যাগ গোছাইয়া রাখছি তুমি আইসা নিয়া যাও। কিন্তু আমিতো আমতাআমতা করতাছিলাম। তাইতে বুঝে গেছে যে আমি কিছু করবো না। তখনি আসল জায়গায় আঘাত করছে।
কি কইছে ক না। আরে ক বেটা।
কয়কি, মুরদ নাই প্রেম করবার কইছিলো ক্যাডা বেটা নাদান।
আমি কইলাম ‘হ ঠিকইতো কইছে।
বন্ধু ক্ষেইপা গেছে। আমারে ঝাড়ি কয় ‘এই তোরে কইছে কে আর প্রেম করার মুরদ নাই।
না সেইটা ঠিক আছে। তরে তো কইছে বিয়া করার কতা। বেটা প্রেম কইরা যে বেডা প্রেমিকারে ঘরে আনতে পারে হেতেইতো মরদ।
তরে কইছে ওই মুটিরে বিয়া কইরা কি বাকী জীবন ফ্লোরে রাত কাটামু নাকি। কোনদিন রিস্কায় একসাতে ঘুরতো পারি নাই। অটোতে (ব্যাটারী চালিত যান) অটোতে ঘুরতে হইছে। তাও চিন্তা ছিল অটো না কাইত হইয়া যায়।
আমার খুব হাসি পাইল। তইলে তো ভালই ছিল দুইজনে সমান সমান।
আর কি কইছে কনা।
কইছে বিয়ার পরে নাকি প্রতিদিন একবার কইরা আমার বাসার সামনে দিয়া ওর স্বামীর কাধে মাথা রাইখা হাইটা যাইবো। আর দেখা হইলে কইবো।
কি কইবো ক?
হেইডা ফুন রাখার সময়ও বলছিল।
ক কি কইছে?
বলছে, রাখি ভাইয়া, ভাল থাকবেন।
যাক বেডা দুঃখ করিছনা, তোরতো আবার কপাল ভালা।
তর মনে হয় দুঃখ লাগতাছে?
যাই হোক দুপুরে খাওয়া দাওয়া সাইরা বাইরে বাইর হইলাম। কইলাম চল তোর ক্যাম্পাসে যাই। রাজি হইলো না। যাহোক ছিলাম চারদিন। যে দিন চলে আসবো রাতের টিকিট করছিলাম। দুপুরের পর ওর আরও বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একজন বলল চল বোট গার্ডেন ঘুইরা আসি। দেকলাম ওর মুখ তাতে কালা হইয়া গেছে।
পৌছতে চল্লিশ মিনিট এর মত লাগছে। বেশ সুন্দর একটা যায়গা। তবে জায়গা খুব ছোট। সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পরে না সামনের লেকটার জন্য। খুবই সুন্দর লাগছে আমার। জোরালো বাতাস বইছে বেশ। শীতকাল না হলে বাতাসটা বেশ উপভোগ্য হত। কিছু সময় পর শুনি গোলাগুলির আওয়াজ। জানলাম ফায়ারিং চলছে জলপাই পোশাকওয়ালাদের। এজন্য বোট ও ভাড়া দিচ্ছে না। আশপাশ ঘুরে দেখছি আমি। একদিকে গিয়ে দেখি কাঠের তৈরি মাচার উপর একটা ঘর। ওঠার জন্য আবার সিড়ি রয়েছে। কাছে সাইনবোর্ড এ বিশেষ বার্তা। “কেউ এই ঘরে ১০মিনিট এর বেশী অবস্থান করিবেন না।”
কারন জিগেস করলে বন্ধু হাসি দিয়া কইল, আরে পুলামাইয়ারা দেখবি সবাই এই ঘরে একবার কইরা আইসা থাইকা যাইব। তবে আমি উঠলে ৩০মিনিট এর আগে নামতাম না।
আমি কইলাম ‘চল উইটা দেখি।
তুই উঠবি কি জন্য। কাপল ছারা উঠা নিষেধ।
কইলাম ‘ঐখানতোন লেকটা ভাল দেখা যাইবো।
বন্ধু আর আমি উঠলাম।
আমরা উঠা মাএই এক কাপল ধরমড় কইরা উঠা দাড়াইল। ওমা মাইয়া দেখি আমাগো দেখিয়া দন্তবিকশিত হাসি দিয়া আগাইয়া আসিতে লাগিল। তারপর যা কইল আমি এ শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না মোটেও।
বন্ধুর সামনে দাড়াইয়া বলল ‘ভাইয়া কেমন আছেন। আসেন এই আমার বর, আসেন পরিচিত হই।
আমি হতভম্ব হইয়া দাড়াইয়া রইলাম। আমার দোস্ত কোনমতে একটা হাসি দিয়া নিচে নামিয়া গেল। আমাকে বলল ‘আপনি বুঝি ওর বন্ধু আগেতো কখোনো দেখিনি।
আমি বললাম ‘আই ঢাহাতোন আইছি।
ও তাই, আপনের দোস্তরে নিয়া আইসেন বাসায়।
ঠিক আছে’ কইয়া বাধ্য ছেলের মত মাথা ঝাকাইলাম। তারপর নিচের দিকে নামিয়া আসার সময় তার চোখের দিকে তাকাইলাম। হাসছিল মেয়েটা। আনন্দের হাসি দাত বের করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০৬