প্রবাস = পরবাস।
প্রবাসী = যারা পরের দেশে বাস করে।
নিজের দেশ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের কিছু মানুষকে বেচে নিতে হয় প্রবাস। কারন আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থান ও শিক্ষা সচেতনতার প্রচুর অভাব। তাই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হিসাবে তারা প্রবাস জীবন বেচে নিতে বাধ্য। এই প্রবাসীদের অবস্থা অনেকটা বনবাসীদের মতো।
প্রবাসীরা যেমন বঞ্ছিত রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে, তেমনি বঞ্চিত পারিবারিক সুবিধা থেকেও। শুধু মাত্র পাসপোর্ট দিয়ে বিমান বন্দরের সীমানা পার করে দিলেই আর এদের খবর নেওয়ার কেউ থাকেনা। সেই সাথে দেশে বসবাসকারীদের মনেও খুব একটা শ্রদ্ধা নেই প্রবাসীদের জন্য। কিন্তু এই প্রবাসীরাই নিজের জীবনের সব সাদ-আহ্লাদ বাদ দিয়ে নিজের শ্রম দিয়ে যাচ্ছে দেশের জন্য।
একদিকে যেমন দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে এক একজন প্রবাসী এক একটি পরিবারকে সচ্ছল ভাবে চালিয়ে নিচ্ছে।
এই প্রবাসীরা আমাদের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে সেটা অনেকের অজানা। দেখে নিন নিচের তালিকায়।
(১) প্রায় সময় মাসের পুরো বেতন বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। কারন বাবার ওষুধ, সংসারের খরচ, ছোট ভাইবোনের এডমিট ফী। সব পরিশোধ করার জন্য অনেক সময় নিজের বেতনে পোষায় না। তাই অন্যের কাছ থেকে ধার নিয়ে। নিজের থাকা/খাওয়ার খরচ না রেখেই সব টাকা পাঠিয়ে দেয় দেশে। যাতে করে দেশে যারা আছে তাদের কোন অসুবিধা না হয়।
(২) মৃত্যুশয্যায় পড়ে আছে কারো মা/বাবা। জীবনের শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য চিৎকার করে বলে আমার মানিক কে একবার দেখে মরতে চাই। কিন্তু ইচ্ছে করলে ও অনেকে নিজের মা/বাবা ও আপনজনদের লাশ পর্যন্ত দেখতে সক্ষম হয়না।
(৩) সদ্য বিয়ে করা প্রাবসী। ছুটি কম বলে অনেক সময় মাত্র ১০দিন ও প্রিয়তম স্ত্রীর সান্নিধ্যে থাকতে পারেনা।
(৪) কত গ্রীষ্ম চলে যায়, আম-কাঠালের গন্ধও জোটেনা। কত বর্ষায় বৃষ্টির ফোঁটা দেখেনা। কত শীত চলে যায় শীতের পিঠা খাওয়া ছাড়ায়।
(৫) ঈদে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামাকাপড় নিশ্চিত করে ঠিকই। কিন্তু নিজে সেই পুরনো জামা গায়ে দিয়েই চালিয়ে দেয়। অনেকের ঈদের দিন ও কাজ থাকে বলে রুম থেকে ও বের হয়না।
আর প্রবাসের বেকারত্ব, ঠিকমতো বেতন না পাওয়া, ভিসা দালালের খপ্পরে পড়ে নিজের ভিটেমাটি শেষ সম্বল বিক্রি করে এসেও যখন বৈধ কাগজপত্রের দেখা না পেয়ে ফেরারি আসামীর মতো জীবনযাপন করা তো আছেই।
আমাদের অনেকের বাবা, ভাই আছে প্রবাসে। আমরা নিজেরাও জানিনা উনারা কিভাবে/কি কাজ করে উপার্জন করে। খবর নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করিনা। মাসে মাসে আমার ভাগের টা তো আমি পাচ্ছিই।
নিজের জীবনের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে যারা আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য এতকিছু করে। আমরা তাদের কে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে রাজী নই। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যারা থাকে তাদের তো কোন দাম ই নাই। কথার কথা আমরা বলে ফেলি “দুবাই অলার বেইল (ভ্যালু) নাই”।
কখনো কি কেউ এই ব্যাপারে ভেবেছিলাম ??
কখনো কি তাদেরকে সম্মান করেছি ??
কিন্তু একজন প্রবাসী হাজারবার মরে। কখনো নিজের অস্তিত্বের কাছে। কখনো নিজের মনের কাছে। অথচ তারাও ও দেশের সৈনিক। আসুন আমরা প্রবাসীদের প্রতি অবহেলার দৃষ্টিতে না তাকিয়ে তাদের দিকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:১১