১ম পর্বঃ
Click This Link
২য় পর্বঃ
Click This Link
৩য় পর্বঃ
Click This Link
৬/
বাংলাদেশে এমন কিছু কিছু পদবী আছে যেগুলো দেখলে হিন্দু কি মুসলমান বোঝা যায় না। চৌধুরীর মত সরকার ও সেরকম একটি, তার উপরে বিশ্বজিত নাম হওয়ায় "বিশ্বজিত সরকার" কে সবাইই নাম শুনে ধর্মে হিন্দুই ভেবে বসে। তাতে অবশ্য তার কখনো কোন সমস্যা হয় নি। আজ সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো যখন তার আপন ভাই মোহাম্মদ সরকার কে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ শিবির সন্দেহে।আপন ভাইকে ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে পুলিশের জেরা। বিশ্বজিত নামের মধ্য বয়স্ক এই লোককে নিজের মুসলমান পরিচয়কে প্রমাণ করতেই যে পরিমাণ নাজেহাল হতে হচ্ছে, তাতে তার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে যে কত কাঠ খড় পোহাতে হবে কে জানে, ভাবলেন তিনি।
মোহাম্মদ সরকারকে সবাই চেনে মাহী নামে। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করা নির্ভেজাল মানুষটি আর দশজন সাধারণ বাঙ্গালির মতই রাজনীতি বোঝেন কম। জামাত শিবিরের কথা যেমনভাবে আর সবাই জানে তিনিও তার বেশি কিছু জানেন না। কিন্তু সে কথা এখন আর কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে কি? মাহীর অস্থির লাগে। এবং অসহায়।
ঘটনাটা অনেকটা এরকম- তার কলিগ রুহুল আমীনের সাথে তার পরিচয় বছরখানেক। দুইজনে পাশাপাশি ডেস্কে কাজ করায় যেমন হয়। লাঞ্চটা একসাথেই করতেন অফিসের পাশের ছোট খাটো হোটেল গুলোতে। রুহুল আমীন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন, যেমনটা আরো অনেক মুসলমানই মানেন, করেন, যেমনটা মাহীও করতেন। অফিস আওয়ারে নামাজের সময় হলে পাশের মসজিদে জামাত আদায় করতেন। কখনো ভাবেন নি সেটা কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রুহুল আমীনের কোন কথায় বা কাজে মনে হয়নি লোকটি শিবির বা এরকম কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারে! রুহুল আমীন নাকি পুলিশের উপর হামলায় সেখানে ছিলো, শিবিরের কর্মী। তাহলে যখন পুলিশ পিটালো তখন রুহুল সাহেবকে না ধরে, দুইদিন পর এসে মাহীকে গ্রেফতার করার কি মানে সেটা মাথায় ঢোকে না মাহীর। তার দোষ তিনি রুহুল আমীনের সাথে লাঞ্চ করতেন, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। তাই গা ঢাকা দেয়া রুহুল আমীনের আড্ডার খোঁজ নিশ্চয় তিনি জানেন! অদ্ভুত যুক্তি!
সত্যি সেলুকাস বড় বিচিত্র এই দেশ। মন্দিরে পুঁজো দিলে তখন সেটায় ধর্ম-পালন হয়, সাম্প্রদায়িকতা, গোড়ামী নয়, কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়লে অবশ্যি তুমি শিবির, জামাতী, আর তা যদি নাও ও হও , সাম্প্রদায়িক গোঁড়া তো অবশ্যই!
মাহীর মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে যেই ইন্সপেক্টর তার চার্জে আচ্ছে, যখন পিটায়ে পিটায়ে জিজ্ঞাসা করে রুহুল আমীন কোথায় তখন তাকে জিজ্ঞাসা করতে "আচ্ছা ভাই আপনার সাথে যারা চাকরি করে কে কোন দল করে আপনি জানেন সবারটা? কেউ যদি আপনাকে নিজে থেকে না বলে সে কোন দল করে, তার সাথে যদি এরকম বিষয়ে কোনদিনই আপনার কথা না হয়, আপনি কিভাবে জানবেন সে জামাতী না হিজবুল তাহির নাকি শিবির? "
মাহী জানেন এসব বলে লাভ নাই, এই দেশের পুলিশদেরকে কারো কথা শোনার ট্রেনিং যদি দেয়া হয়ে থাকে সেটা শুধুমাত্র তার উপরওয়ালাদের। এই দেশে তলে তলে সব দল একে আরেকের বিয়াই লাগে, উপরে উপরে রাজনৈতিক নাটক, আর সেই নাটকে বলি হতে হয় মাহীদের।
এই দেশে কেউ যুক্তির কথা শোনে না, এই দেশে মানুষ হুজুগে চলে, হুজুগে কাজ করে, হুজুগে মানুষ মারে, তারপর নিরপরাধ মানুষ মরলে হুজুগে ভাংচুর করে, তাড়পোড় আবার সব ভুলে গিয়ে নতুন কোন হুজুগে গা ভাসায়।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৬