মাননীয় প্রধানমন্ত্রী;
আপনাকে খোলা চিঠি,বন্ধ চিঠি কোনোটাই লিখতে চাই নাই,লিখতে বাধ্য হলাম। আপনি ক্ষমতায় আসছেন ১ বছর ও হয় নাই এখনো কিন্তু যা শুরু হইছে তাতে আপনার ক্ষমতার আরো ৪ বছর সামনে আছে ভাবতেই রাতে ঘুম আসে না
আপনি এইবার আপনার নির্বাচনের ইশতেহারে বলেছিলেন "ডিজিটাল বাংলাদেশ" বলে একটা দেশ গড়বেন। আপনার এই কথায় আমার মতো অনেক তরুণ তাদের মহামূল্যবান ভোটটি আপনাকে দিয়ে আসছিলো যাদের মধ্যে অনেকে জীবনে প্রথমবার ভোট দিছে এইবার। যাই হোক,ভোট হইলো, আপনি ২০০র উপরে আসন নিয়ে বিজয়ী হলেন। আমরা মহাখুশী। জীবনের প্রথম দেয়া ভোট তাইলে বৃথা যায় নাই।
ঘটনা এই পর্যন্ত ভালোই ছিলো কিন্ত এর পর থেকে যা হচ্ছে তার কোনোকিছুই আমরা চাইনি,ভাবিওনি যে এমন হবে। আপনার দল ক্ষমতায় আসার পর দলের ছাত্র সংগঠন যা শুরু করলো তা বলার বাইরে। বাংলাদেশে তো আপনার দলই প্রথম দল না যারা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসছে কিন্তু আপনার দলের ছাত্র সংগঠনকে দেখে মনে হলো যে জীবনে এই প্রথম এই দেশে কোনো দল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসলো। তারা যা শুরু করলো তার সোজা অর্থ দাঁড়ায় এই যে, দেশের মানুষ তাদের ভোট দিছে যেন তারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাস(!!!!)মুক্ত করে। এই লক্ষ্যে তারা দিন-রাত কি অক্লান্ত পরিশ্রমই না করছে। ইশ, তাদের জন্য দিলের ভেতর থেকে ভাতের বলক ওঠার মতো দুঃখের বলক উঠতেছে
যাই হোক,শেষপর্যন্ত আপনি বাধ্য হলেন আপনার দলের ছাত্র সংগঠনটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে।কিন্তু তারপরও অবশ্য ঝামেলা এমন কিছু কমে নাই,সমস্যার ও কোনো সমাধান হয়নাই,মাঝে আমাদের আবু বকরের মতো কিছু মেধাবীকে হারাতে হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম না কিন্তু আপনি কি একবার ও ভেবে দেখেছেন যে এই জাতি আপনাকে এই নির্বাচনে কতো বেশি বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছিলো! নির্বাচনের আগে এমন জাগরণ,এতো বেশি প্রচারণা,এতো বেশি জঙ্গণকে সচেতন করার চেষ্টা মনে হয় না অতীতে কোনোদিন হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে,এতো বেশি মানুষ মনে হয় কোনোদিন এর আগে একটা দলকে এতো বিপুল ভোটে জয়ী করে নি স্বাধীনতার পর। তাদের আশা-ভরশা আপনি এইভাবে নষ্ট করে দিচ্ছেন এইটা কি ঠিক বলুন!! আপনিতো নিজে শিক্ষিত একজন মানুষ,দেশের বাইরে থেকে লেখাপড়া করে আসছেন,অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলেন ও। আপনার কাছথেকে এমন কিছু পাওয়ার জন্যতো জাতি প্রস্তুত ছিলো না।আপনি কি একবার ও ভেবেছেন যে আপনি আসলে দেশের কোটি কোটি মানুষকে অপমান করলেন আপনার দলের এই কাজগুলা দিয়ে!!!
রাজনীতি আমার আলোচনার বিষয় না,তাই আর আগাতে চাইনা ওই ব্যাপারটা নিয়ে। এখন আসি আপনার স্বপ্নের "ডিজিটাল বাংলাদেশে'। এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ,এই যুগে যুব সমাজ়ের একটা বড়ো অংশ তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত তাই আপনি যখন "ডিজিটাল বাংলাদেশ"এর কথা বলেছিলেন,তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি আশাবাদী হয়েছিলো আর তাই নির্বাচনে দেশের তরূণ সমাজের ভোটের একটি বড়ো অংশ(বলতে গেলে প্রায় পুরাটাই) আপনি পেয়েছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে আপনার সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আসলে আমাদের সবাইকে আরো একবার ভাবতে বাধ্য করেছে যে আমরা নির্বাচনে আসলে একটা বড়ো ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট "ফেসবুক" বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ হিসাবে বলেছেন যে একজন আপনার এবং আপনার মন্ত্রীদের নিয়ে কিছু ছবি ফেসবুকে ছেড়েছে। আপনার জ্ঞান কতোদূর জানিনা কিন্তু আপনি এইটা জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অনেক ছবি ফেসবুকে আছে যা তার দেশের কেউই ইন্টারনেটে ছেড়েছে। এই জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়নি,আমেরিকাতে ফেসবুক ও বন্ধ হয়ে যায়নি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নিয়েও ফেসবুকে কম রং-তামাশা হয়না।
কিন্তু আপনি আমাদের দেশে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আপনি ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছেন তাও অনির্দিষ্টকালের জন্য। যে আপনি বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা সেই আপনিই কিভাবে এমন "অ্যানালগ" টাইপের একটা সিদ্ধান্ত নিলেন তা খালি আমার না,অনেকেরই বোধগম্য না। ব্যক্তি-স্বাধীনতা,তথ্য-স্বাধীনতার এই যুগে আপনার এই সিদ্ধান্ত যেন অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপতের মতো। আপনি আসলে ফেসবুক বন্ধ করে কি প্রমাণ করতে চান!! যে ফেসবুক বন্ধ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!!! যদি এমন মনে করেন তাহলে বলতেই হয় যে ম্যাডাম আপনি আসলে এখনো অনেক অন্ধকারেই আছেন। এইযূগে কোনো সামাজিক কার্যক্রম বন্ধ করে কখনোই কোনো অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব না,যদি তাই হতো তাহলে ওসামা বিন লাদেনের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলেই পৃথিবী থেকে সন্ত্রাসবাদ উবে যেতো।
অনেক কথা বলে ফেললাম,আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ,সারা দেশের অনেক কাজ আপনাকে করতে হয় তাই বেশি সময় আপনার নষ্ট করবো না। শেষে একটা কথায় বলতে চায় যে ম্যাডাম এই দেশের যে মানুষগুলা আপনাকে এতো ভালবেসে,এতো বিশ্বাস করে এতো ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিলো, আপনি দয়া করে তাদের এই বিশ্বাস,ভালোবাসা নষ্ট করবেন না। দয়া করে ফেসবুক যতো দ্রুত সম্ভব চালু করে দিন নাহলে জনগণের ক্ষোভ বাড়বে বই কমবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের দোহায় দিয়ে ক্ষমতায় এসে যা দেখালেন তাতে জানটা ভরে গেছে,আর দেখতে চাইনা।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ভালো থাকবেন আর দয়া করে দেশের মানুষকে ভাল রাখার চেষ্টা করবেন।