(পূর্বের পোষ্টের পর - Click This Link)
সেতু একটি ছোট খাট চাকুরী পেলেও মন দিয়ে কাজ করতে পারতো না কারন প্রতিমাসে কমপক্ষে দুই বার ফৌজদারি আদালতে হাজিরা দিতে হতো, আর হাজিরা দেয়ার পরে শুরু হতো মামলার তারিখ পড়ার ঝামেলা। আইনজীবি নিজেও চাইতেন না মামলাটি খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হোক, কারন যত বেশী তারিখ তার তত বেশী ফিস।
কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে যখন সেতু ক্লান্ত শ্রান্ত সে সময়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হলো এবং গত ঈদুল আযহার ছুটির পূর্বে শেষ কার্যদিবসে কুচক্রি মহলের সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ফৌজদারী মামলায় সম্মানে বেকসুর খালাস পায় সেতু আর মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ও দূর্ণীতির কারণে এবং নীরিহ ছাত্রদের হয়রানী করার দায়ে অভিযুক্ত করে পুলিশ বিভাগকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলা জয়ের পর আবেগে কেঁদে ফেলে সেতু, সেদিন আমরা ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এই একটি মাত্র মামলার জন্য দীর্ঘ চারটি বছর ধরে প্রতিমাসে দুই থেকে তিন দিন আদালতে হাজির হতে হয়েছে ওকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মুখ, পরোপকারি সেতুকে ধর্ণা ধরতে কোর্টের কেরানী মুহুরীদের কাছে, কি যন্ত্রনাদায়ক অভিজ্ঞতা একবার ভেবে দেখুন।
ঈদের ছুটির পর সেতু অফিসে গিয়ে প্রথমে তার বস কে জানিয়ে দিলো সে চাকুরী ছেড়ে দিবে, কারণ সে আর ও পড়াশুনা করতে চায এবং যার জন্য তাকে ঢাকায় যেতে হবে। বস ছাড়তে নারাজ, কারণ সেতুর মত দক্ষ এবং সৎ কর্মী পাওয়া যে কোন সংস্থার জন্য ভাগ্যের, নিজেকে সে প্রমাণ ও করেছিল, প্রমোশন আর ইনক্রিমেন্টের বন্যায় ভেসেছে তার প্রথম কর্মজীবনে। কিন্তু সেতুর এক কথা সে পড়বে এবং জেলা শহরে থেকে তা সম্ভব নয়। অবশেষে বসের পীড়াপিড়িতে আরও কিছুদিন সময় দিলো সে বসকে।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক হিসাবে চাকুরী নিয়ে সেতু চলে আসে ঢাকায়, এবং পড়াশুনার চেষ্টা শুরু করে। কথা হয় প্রতিদিন ওর সাথে, এখন ও কোথাও ভর্তী হয়নি সে, জিজ্ঞাসা করেছিলাম দেরী করছে কেন, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো - "২০০৪ এর দেনা এখন ও শুধিতে পারি নাই রে সখি, দুই এক মাসের মধ্যে শোধ হয়ে যাবে তারপর এ দেশে আর থাকবো বলে আমা করছি না"।
পরবর্তী পর্বঃ সেতুর ব্যক্তিগত জীবন (প্রেম) এবং বর্তমান অবস্থা