১.
সামিহা। সাড়ে পাঁচ বছরের ভাতিজি।
সেদিন দেখি গোসল করে খালি গায়ে বসে আছে। প্যান্ট পড়ছে, তাতে লাইনে লাইনে ফুটা।
জিজ্ঞেস করলাম, মামনি, পেন্টুতে ফুটা কেন? একবার তাকায় আবার কার্টুনে মনোযোগ দিলো।
আবার জিজ্ঞেস করলাম, মামনি, এই ফুটাগুলো কি স্টাইল?
এইবার সে কার্টুন অফ করে জবাব দিলো, নাআআ এগুলা স্টাইল কেন হবে। পেন্টু ছিঁড়ে গেছে।
বুঝলাম যে এখনো ব্রেইন ওয়াশ হয়নি, ঘিলু অটুট আছে।
দুষ্টুটা গতবার আমার প্রিয় চশমা ভাঙছে। সে চশমাকে চমশা আর লিপস্টিককে পিশ্টিক বলে।
যাহোক, তার মা জানালো ছিদ্র সে নিজেই করে। স্কুলের দেয়া হোমওয়ার্ক করতে বসালে সে পেন্সিল দিয়ে তার পরনের প্যান্ট ফুটা করে, রাবার ছিঁড়ে। নতুন অভ্যাস।
২.
নাফিসা।
সামিহার বাবার মামাতো বোন।
পিচকি। ক্লাস ওয়ানে পড়ে মনে হয়।
আমরা সবাই সেদিন সামিহার ফুপির বিয়ে (আমার আপু) খেয়ে একসাথে ফিরছিলাম। নাফিসা, সামিহা, যুবায়ের (নাফিসার বড় ভাই, ফোরে পড়ে), আমাদের আরেক ভাই একসাথে বসেছি। যুবায়ের গল্প শুরু করছে, এক দেশে ছিলো এক রাজা। তার সাত রানী।.................
বাচ্চাদের সাথে দুষ্টামি করতে অনেক মজা। ফোড়ন কাটলাম, রাজার কেন সাত রানী? তুমি রাজা হলে সাতটা বিয়ে করবা?
পিচ্চি কনফিউজড।
নাফিসা: আল্লাহ তাহলে আমার সাত ভাবি হবে। কিন্তু আমার তো একটা ভাই!
(নাফিসা বুঝলো জিনিসটা খারাপ।)
নাফিসা আবার: (খেপছে ততক্ষণে) শয়তান রাজা। বদমাইশ রাজা। রাজাকে লাথি দিয়ে বের করে দেয়া উচিৎ।
এই পিচকি আমায় "বুড়া বাবু" বলে ডাকে। আমার ঘরোয়া ডাকনাম বাবু আর আমি জব করি, তাই বুড়া বাবু। আপু ডাকে না কখনোই।

৩.
আদৃতা।
সাড়ে সাত বছরের ভাগনি। সবচেয়ে ট্যাটনা। এর সাথে দেখা হয় কম। যখন মোটামুটি কথা বলতে শিখেছে, ওর মাকে ফোন দিলে ও ধরে বলতো, হ্যালো আমি আদৃতা। নাও এখন আম্মুর সাথে কথা বলো।
এবারের আগে যেবার ওদের বাসায় গেলাম, তখন আরো ছোট, পাঁচ সাড়ে পাঁচের মতো বয়স। সবজি খেতে চায় না, বিশেষ করে বেগুন। আপা সবজি দিয়ে নুডলস রান্না করছে। মেয়ে আর দুলাভাইকে পাশাপাশি নুডলস বেড়ে দিয়ে গেছে টেবিলে। আমিও হঠাৎ জুটে গেছি খাবার সময়। পিচ্চি বেজার মুখে শুধু চামচ নাড়েচাড়ে, খায় না।
হঠাৎ,
- খালামনি, তোমাকে আরেকটু দেই?
- না।
- নাও না, খেতে ভালো হয়েছে। আমার আম্মুর রান্না খুবই ভালো।
(নজর তার নিজের প্লেটের দিকে)
- আম্মুর রান্না ভালো তো তুমিই খাও।
আদৃতা চুপ।
একটু পর,
- বাবা, একটু নাও, খেতে ভালো হয়েছে।
- তুমি খাও।
- বাবা, নাও না! সবজি (বেগুন) খেতে হয়। সবজি খেলে শক্তি হয়।
- শক্তি হয় তো তুমি খাও, শক্তি লাগবে না তোমার?
আদৃতা চুপ।
শেষ পর্যন্ত বেগুন সবজি নুডলস ওকে খেতেই হয়েছিলো। দুই ঘন্টার বিনিময়ে।
৪.
আবার আদৃতা।
সেবার ওর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। আড়াই বা পৌনে তিন বছর চলছে। হাত ভর্তি চুড়ি পড়ে, আপার বড় বড় বালা, ওর কনুই পার হয়ে উপরে উঠে যায়। কপালে বিশাল লাল টিপ, এবড়ো-থেবড়ো করে লাল লিপস্টিক দেয়া। আর মাথায় ছোট্ট একটা খেজুর ঝুঁটি।
- মামনি, কি করেন?
- ডাব খুঁজছি।
- ডাব কি হবে?
- সোনাবাবুর বাবা অফিস থেকে ফিরে ডাব খাবে।
- সোনাবাবুর বাবা কে মামনি?
- উফ খালামনি তুমি কিছুই জানো না। সোনাবাবুর বাবা খুব টায়ার্ড, সে ডাব ছাড়া আর কিছু খায় না।
- ছবি দেখাও। মেয়ে জামাইকে দেখি।
কই থেকে যে পুরানো কাগজ বের করলো, সুপুরুষ এক মডেলকে দেখিয়ে বলল এইটা সোনাবাবুর বাবা। সে আপার ভাঙা ফোন নিয়ে মহা ব্যস্ত। নিজেই নাকি ভাঙছিলো।
- হ্যালো, ওগো শুনছো? সোনাবাবুর জন্য খেলনা নিয়ে আসবে তো।
কদিন আগে গেলাম ওদের বাসায়। বসার ঘরে পুতুলের সংসার সাজানো। সোনাবাবুর বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেলো। এখন সোনাবাবুর বাবা আর নাই কিন্তু সোনাবাবুদের সংখ্যা তিনগুন হয়ে গেছে।
৫.
বিয়ে বাড়িতে গেছি।
বর-বউ স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে।
আমার সামনের সারিতে দুই পিচ্চির গপ্পো।
পিচ্চি ১: এরা এতো কাছে লেগে লেগে বসে আছে কেন?
পিচ্চি ২: হুম। এরা এখন থেকে রাতে একসাথে থাকবে।
আমি প্রার্থনা করতে চাইলাম পিচকি দুইটা আরো কিছু বলার আগেই আমরা সবাই যেন বধির হয়ে যাই। কিন্তু কান দুটো কেমন চেয়ে রইল আরো কি বলে শুনতে পাবার জন্য।
নাহ আমিও দুষ্ট হয়ে গেছি!
