ব্লগে টিপাই মুখ টপিক নিয়ে খানিকটা মাতামাতি হয়ে গেল। ভারতীয় বাংলাভাষী ব্লগারদের উপস্থিতিতে আলোচনা ভিন্ন মাত্রা পেল। সেই সব আলোচনায় দিগন্তদাদার একটি কমেন্ট পড়ে ভাবলাম। কমেন্টা ছিল –
দিগন্ত বলেছেন: @কিছুকিছু - টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। একদল বলে ক্ষতি, আরেকদল বলে লাভ হবে। সবথেকে মজার কথা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেও একাধিক রকমের ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে - কেউ বলেন গরমে নাকি বেশী জল আসবে কেউ বলেন গরমে নদী শুকিয়ে যাবে। কোনো ভাবেই দুটো একসাথে হতে পারে না, এটা যে কোনো সাধারণ বুদ্ধিতে বোঝা সম্ভব। গরমকালে জল বেশী এলে কি কি ক্ষতি তা নিয়ে লেখা দেখলাম, কিন্তু গরমকালে জল বেশী এলে যে লাভ হবে তা কেউ বলছেন না। কেউ বলার চেষ্টা করলে তাকে ভারতের দালাল বলা হচ্ছে। (একই বক্তব্য ব্রহ্মপুত্র সম্পর্কেও।)বাঁধের লাভ-ক্ষতি দুটো পাশাপাশি রেখে কাউকেই বিশ্লেষণ করতে দেখলাম না। অথচ লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ না হলে পরে আরো বাঁধ হবে - তখন কি হবে?
আমার লেখা পড়তে পারেন সময় থাকলে।
সবথেকে অবাক লাগে রমেশচন্দ্র সেনকে সবাই মিলে আক্রমণ করেন (এর মধ্যে অনেকগুলো ধর্মীয় আক্রমণ - যদিও ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী সৈফুদ্দিন সোজ সম্পর্কে কি মত এদের তা জানা যায় না)। উনি তো সরকারের প্রতিনিধি মাত্র - ব্যক্তিগত মত উনি দেন নি। আর আগের দেশপ্রেমিক সরকারের দেশপ্রেমিক মন্ত্রীরা কি কি করেছেন জানতে পারি কি? ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে দেখেছিলাম বাংলাদেশে ফারাক্কা বড় ইস্যু - ফারাক্কার জলচুক্তি বাতিল করার দাবী। কিন্তু দেশপ্রেমিক সরকার ক্ষমতায় এসে চুক্তি মেনেই চললেন, বিরোধিতাও করেন নি। অথচ চুক্তিতে বলাই আছে প্রতি পাঁচ বছরে চুক্তি রিভিউ করার সুযোগ আছে - চুক্তিতে আপত্তি থাকলে আন্তর্জাতিক কোর্টে যাবার কথাও বলা আছে। তারা কোনোটিও করেন নি। তারা ১৯৯৭ সালের জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক আইনটিতেও স্বাক্ষর করেন নি যা বাংলাদেশের আইনি অবস্থানকে দুর্বল করেছে।
-----------------------------------------------------
বাস্তবতা হল, আমরা হয়ত দিগন্ত বা তারমত কিছু ভারতীয় ব্লগারকে হাতের কাছে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে দেশপ্রেম দেখাচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এইসবের কোন দাম নেই। সেখানে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েই কূটনৈতিক খেলা খেলতে হবে। আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বক্তব্যই আমাদের মতামত হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃতি পাবে। তাই নিজের ঘর দরজার ফুটো বন্ধ না করে, অন্যলোকে কেন তাকাল সেটার বিচার চাওয়া বৃথা। আমরা অহেতুক নিজেদের তামাশার উপাদানে পরিনত করছি।
আমি মনে করি ভারতীয়দের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমাদের একবার ভাবা উচিত আমাদের অবস্থানটা আসলে কোথায়। তারপরই নিজেদের মানসম্মান রেখেই কথা বলা উচিত। মনে রাখতে হবে, যাদের জন্য আমরা আর বিব্রত, তাদেরই আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় আমরা চেতনা সহকারে নির্বাচিত করে থাকি। ভুল যায়গায় চেতনা ফালাবার গ্লানি আমাদের টানতেই হবে।