ওগো বাদলের পরী!
যাবে কোন্ দূরে, ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী!
ওগো ক্ষণিকা পুব অভিসার ফুরাল কি আজি তব?
পহিল্ ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন দেশ অভিনব?
তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পান্ডুর কেয়া-রেণু,
তোমারে স্মরিয়া ভাদরের ভরা নদীতটে কাঁদে বেণু।
কুমারীর ভীরু বেদনা-বিধুর প্রণয় অশ্রু সম
ঝরিছে শিশির-সিক্ত শেফালি নিশ ভোরে অনুপম।
ওগো ও কাজল মেয়ে,
উদাস আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে।
কাশফুল সম শুভ্র ধবল রাশ রাশ শ্বেত মেঘে
তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে।
ওগো জলের দেশের কন্যা। তব ও বিদায় পথে
কাননে কাননে কদম-কেশর ঝরিছে প্রভাত হ'তে।
তোমার আদরে মুকুলিতা হয়ে উঠিল যে বল্লরী
তরুর কণ্ঠ জড়াইয়া তা'রা কাঁদে নিশিদিন ভরি।'
'বৌ-কথা-কও' পাখি
উড়ে গেছে কোথা, বাতায়নে বৃথা বঊ করে ডাকাডাকি।
চাঁপার গেলাস গিয়াছে ভাঙিয়া, পিয়াসী মুধুপ এসে'
কাঁদিয়া কখন গিয়াছে উড়িয়া কমল-কুমদী দেশে।
তুমি চলে যাবে দূরে,
ভাদরের নদী দুকূল ছাপায়ে কাঁদে ছলছল সুরে!
যাব যবে দূর হিম-গিরি শিরে, ওগো বাদলের পরী,
ব্যথা ক'রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি?
সেথা নাই জল, কঠিন তুষার, নির্মম শুভ্রতা-
কে জানে কি ভাল বিধুর ব্যথা- না মধুর পবিত্রতা।
সেথা মহিমার উর্ধ্ব শিখরে নাই তরলতা হাসি,
সেথা রজনীর রজনীগন্ধা প্রভাতে হয় না বাসি।
সেথা যাও তব মুখর পায়ের বরষা-নূপুর খুলি',
চলিতে চকিতে চমকি' উঠ না, কবরে উঠে না দুলি'।
সেথা র'বে তুমি ধেয়ান-মগ্না তাপসিনী অচপল,
তোমার আশায় কাঁদিবে ধরায় তেমনি 'ফটিক জল'।
কবিতাটি সওগাতের ভাদ্র ১৩৩৫ সংখ্যার প্রথম পকাশ পায়। ১৯২৯ সালে "চক্রবাক" কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়। এই কবিতা রচনা করা হয় বেগম ফজিলতুন্নেসার বিলেত গমনের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখায় উদ্দেশ্যে। ফজিলতুন্নেসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী। নজরুলের সাথে কাজী মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে তার ফজিলতুন্নেসার সাথে যোগাযোগ হয়। নজরুল ফজিলতুন্নেসাকে মনপ্রাণ সঁপে ভালবেসেছিলেন, কিন্তু ফজিলতুন্নেসা প্রতিবার নজরুলকে প্রত্যাক্ষান করেন। তার প্রতি নজরুলের অনুরাগের প্রমান পাওয়া যায় কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা নজরুলের চিঠি গুলোতে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:০১