পশু কোরবানী মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন ধর্মীয় রীতি। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল সকলের জন্য কোরবানী দেয়া ওয়াজিব। আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য কোনভাবেই ধর্মীয় বিধি বিধান আলোচনা করা না, কারন ব্লগে অনেক পন্ডিত আছেন যাদের সারাদিনের একমাত্র কাজ হইল ধর্মীয় পোস্ট দিয়া নানারকম ত্যানা পেচানো। যে দুই লাইন পারে, সেও এই বিষয়ে লিখে যে একশ লাইন পারে, সেও লিখে। যাইহোক, এত সব পন্ডিতের ভীড়ে আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক ও নিয়ম অনুসারে কোরবানী সম্পন্ন করার তওফিক দেন, সেই প্রার্থনাই করি।
এবার আসি আমার পোস্টের মুল উদ্দেশ্য নিয়া। আমার পোস্টের মুল উদ্দেশ্য হইল, আপনি যদি আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হন এবং কোরবানী দেয়ার নিয়ত করেন, তাহলে কিভাবে কোরবানীর পশু কিনবেন এবং নিজেকে প্রতারনা ও ঠকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবেন। নিচের ধাপ গুলো ফলো করেন।
সবার আগে বলে নেই যে, গরু দুই বছর এবং ছাগলের ন্যূনতম বয়স ছয় মাস না হলে কোরবানি আদায় হবে না। সুতরাং প্রথমবার কোরবানীর পশু কিনতে গেলে প্লীজ তা খেয়াল রাখুন। তাছাড়া এখন অনেক মানুষ আছে যার ট্যাবলেট দিয়ে গরু মোটাতাজা করে। এই সব গরুর গায়ে টিপ দিলে দেখবেন হাত ভেতরে ডেবে গেছে। এই সব পশু কিনবেন না। যদি কোন গরুর চামড়া বা শিং বা খুরে কোণ ক্ষত থাকে তাহলে তা না কেনাই ভালো। অনেকেই বলেন এবং বাস্তবে দেখিয়েছেন যে পশুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় এবং নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
প্রথমত, আপনি পশু কেনার আগেই আপনার বাজেট ঠিক করে নিন। এই বাজেটের মধ্যে আপনাকে রাখতে হবে, হাট থেকে গরু কেনার চালান পত্রের খরচ বা হাসিল, বাসা থেকে হাট বেশি দুরে হলে, পিকাপ বা ট্রাক ভাড়ার খরচ, গরুর খাওয়ার খরচ।
আমি গরু কেনার জন্য এই বছর প্রথমে বাজেট করছিলাম ৫০ হাজার টাকা। পরে হাটে গিয়ে গরু পছন্দ হবার পর হাসিল, আনা নেয়ার খরচ, খাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে দেখি আরো ৫/৬ হাজার টাকার খরচ হবে। তখন বাজেট কমিয়ে ৪০ হাজারে আনি। তারপর বাসার কাছাকাছি বা যেখানে গরুর দাম তুলনামুলক স্বস্তা হবে, সেখানে অফিসের পর রাতে গিয়ে খোঁজ করতে থাকি। দুই দিন ঘুরার পর আমি একটি ধারনা পেয়ে যাই। ফলে গতকালই আমি গরু কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই।
দ্বিতীয়ত, দামাদামিতে জিততে হলে প্রথমেই গরুর মালিককে আপনার জিজ্ঞেস করতে হবে এবং আপনাকেও যাচাই করতে হবে গরুটিতে আনুমানিক কত কেজি মাংস হবে? তারপর বাজার দর দিয়ে সেটার সাথে ক্যালকুলেশন করলেই আপনি বুঝবেন আপনি জিতছেন না ঠকছেন
আমাকে প্রথমে যে গরুটি দেখানো হয়েছিল, সেটার দাম চাওয়া হয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কত কেজি মাংস হবে? রাখাল বলল, তিন মনের কাছাকাছি হবে! মনে মনে হাসলাম। আমার চোখ বলল, গরুটিতে সর্বোচ্চ দুই মণ বা তার একটু বেশি মাংশ হতে পারে। সেই হিসাবে একটা হিসাব করলাম, দুই মণ মানে ৮০ কেজি মাংস। বর্তমান বাজার দরে ৮০ কেজি মাংসের দাম ৪০,০০০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ও আমার কাছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বেশি চাইল।
এইভাবে বিভিন্ন করে গরু দেখে যাচাই করে, শেষমেষ দুই মণের কাছাকাছি একটি গরু কিনলাম ৪২ হাজার টাকা দিয়ে। মাশাল্লাহ যারাই দেখেছেন তারাই আমার কেনা গরুটির দাম ৬০ হাজার টাকার কম বলেন নি। টাকার কথাটা বললাম, ক্রেতা হিসেবে আমি কেমন জিতেছি, তা বুঝানোর জন্য।
সাথে শক্ত সামর্থ কাউকে রাখুন, যেন আপনার পশুটিকে সামলে সহজে বাড়িতে আনতে পারে
আমার চোখের সামনেই দুই দিন আগে এক ভদ্রলোকের গরু দড়ি ছিড়ে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বেচাকে পুরো হাতির ঝিল দৌড়াদৌড়ি করে গরুটাকে ধরতে হয়েছিল। আমার কাছে নিখাদ বিনোদন হলেও, যার সমস্যা হয় সেই টের পায়।
খাজনার (হাসিল) হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য হাটের বাইরে থেকে পশু কিনবেন না। এতে লাভবান হওয়ার চেয়ে চোরাই পশু কেনার আশঙ্কা থাকে বেশি।
দয়া করে এই কাজটি করবেন না। এতে দুই টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক সময় আপনার লাখ টাকা ও সম্মান দুটোই নষ্ট হবে। প্রয়োজনে ৫ টাকা কম দিয়ে পশু কিনুন, নিয়ম মেনে চলুন। হাসিল ছাড়া যে কোন গরুকে যদি কেউ চোরাই হিসেবে দাবি করে তাঁকে যেমন আপনি দোষ দিতে পারবে না, এটা যে আপনার কেনা গরু তা প্রমাণ করতেও মহা ঝামেলায় পড়বেন
এছাড়া কিছু সাধারন বিষয় আছে, যা আপনারা হয়ত সকলেই বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা বা নিউজ মিডিয়ার কল্যানে জানেন। তা আবারও উল্লেখ্য করে দিলামঃ
* হাটে যাওয়ার সময় নিজের টাকা-পয়সা সাবধানে রাখবেন।
* হাটে খুব একটা ভালো পোশাক না পরাই ভালো। দাগ বা ময়লা লাগার আশঙ্কাই বেশি।
* হাতে সময় নিয়ে পশুর হাটে যান, এতে ধীরেসুস্থে, দেখেশুনে পশু কিনতে পারবেন।
* গরুর কুঁজ মোটা টানটান হলে গরু সতেজ, সুস্থ হয়।
* পশু কিনেই হাট থেকে পশুর জন্য খাবার কিনে ফেলুন।
* হাট থেকে পশু আনার সময় পাটের দড়ি দিয়ে পশুকে ভালোভাবে বেঁধে আনুন। না হলে পশু গাড়ির শব্দে ভয় পেয়ে দৌড় দিতে পারে।
* কোরবানির আগেই কসাই ঠিক করে রাখুন, না হলে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
* মাংস কেটে রাখার জন্য পরিষ্কার চাটাই সংগ্রহে রাখুন।
* কোরবানিতে ব্যবহারের জন্য ছুরি, দা, বঁটিতে ধার দিয়ে রাখুন।
* কোরবানির মাংস সমভাবে বণ্টনের জন্য আগে থেকে দাঁড়িপাল্লা জোগাড় করে রাখুন।
* মাটিতে পড়ে থাকা পশুর রক্তে ছিটানোর জন্য ব্লিচিং কিনে রাখুন।
* জবাই করার আগে পশুকে ভালোভাবে গোসল করাতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। এতে চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।
* পশু মাটিতে শোয়ানোর সময় লক্ষ করতে হবে দেহে যেন কোনো প্রকার চোট না লাগে। এতে চামড়া থেঁতলে অথবা ছিড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* চামড়া ছাড়ানোর জন্য মাথা বাঁকানো অর্থাৎ ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষর আকারের ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
* কোরবানির পশু বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় জবাই করুন।
* জবাই করার পর রক্ত, মলমূত্র, হাড়, বর্জ্য ইত্যাদি যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখবেন না। এতে পরিবেশ দূষিত হবে।
* পশুর রক্ত ও বর্জ্য মাটির গর্তে পুঁতে ফেলুন।
* রক্ত ছড়িয়ে থাকা স্থানে পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন।
এই সব তথ্য মোটামুটি কপি হতে হতে মুল লেখকের নামই হারিয়ে গেছে। তাই এই অংশের কৃতজ্ঞতা আমাকে নয় যিনি লিখছেন, তাকেই দিয়েন।
যদি এই তথ্যগুলো আপনাদের কাজে লাগে তাহলে আমার খুব ভালো লাগবে। সবাইকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক। ইয়ে দেখুন তো জিতছি না ঠকছি?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫