somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালিয়াটি প্রাসাদ : প্রথা থেকে রূপকথা

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাস দেখতে গিয়েছিলাম। রূপকথার ঝুলি নিয়ে ফিরলাম পাথুরে নগরে। প্রাসাদ কথন আর সুরকির গন্ধ লেগে আছে নাকে। দস্তুর মত মোটা থাম, ঘাড় ব্যাথা করবার মতন সিলিং দেখতে দেখতে আচমকা যেন ১৭ শতকে ফিরে যেতে হয়েছে। একসময় মনে হল সুবৃহৎ অট্টালিকা গিলে খেয়েছে অতীত সেইসাথে ঐতিহ্যও। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সাথে যেন হাওয়ায় মিলিয়েছেন প্রজাদের সেইসব জমিদারবাবুরা।




তথ্যের যুগে গুগলবাবু জানান মহেশরাম সাহা নামে জনৈক ছোট্ট এক কিশোর ভাগ্য অন্বেষণে বালিয়াটীতে আসেন। ভাগ্যন্বেষণে আসা সেই মহেশপুত্র গণেশ রাম একসময় লবণের ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি করেন।
গণেশ রামের চার ছেলের মধ্যে একজন হলো গোবিন্দরাম। তিনি বিয়ে করেন বালিয়াটীতে। তার ঘরে জন্ম নেয় চার ছেলে। যথাক্রমে আনন্দরাম, দধিরাম, পণ্ডিতরাম ও গোপালরাম। এই চার ভাইয়ের পৃথক ব্যবসা ছিল। ওই চার ভাই থেকেই বালিয়াটী গোলাবাড়ী, পূর্ববাড়ী, পশ্চিমবাড়ী, মধ্যবাড়ী ও উত্তরবাড়ী নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ির সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ১৭৯০ সালে ওই চার ভাইয়ের মাধ্যমেই বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর গোড়া পত্তন হয়।




শুরু হয় জমিদারি। উঠতে থাকে দালান বাড়তে থাকে প্রতিপত্তি। ব্যবসায়িক পরিবার হিসেবে উন্নীত হওয়ার পর মাসলোর ত্বত্ত্ব অনুযায়ী জমিদারি কিনে নেন তৃতীয় প্রজন্মের হাত ধরেই জমিদারির পত্তন। তারপর শুধুই গল্প। কালক্রমে যা হয়ে গেছে উপন্যাস।




ভাবা যায় এই বাড়ির ছেলে কিশোরীলাল রায়। যার অনুদানেই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও সেইসময় ছিল জগন্নাথ কলেজ। ১৮৮৪ সালের সেই স্থাপত্যের নমুনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে এখনও দেখা যায়। এ বাড়িরই জামাই প্রখ্যাত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা(আর.পি সাহা)।জমিদারির এক প্রাণপুরুষ শাম্বিকা চয়নের মেয়ে কিরণ বালাকে বিয়ে করেন তিনি।


এককথায় বলতে গেলে মূল জমিদার বাড়ি ছাড়াও পুরো বালিয়াটি জুড়েই রয়েছে এই পরিবারের বিভিন্ন স্থাপনা। যার অধিকাংশই এখন আর নেই। পূর্ববাড়ি, পশ্চিমবাড়ি(এস.বি লিংক থেকে নেমেই বাম দিকে), গোলাবাড়ি, মধ্যবাড়ি, উত্তরবাড়ি।


দূর থেকে চোখে বালিয়াটি জমিদারির স্থাপনাগুলো দেখার মতন দৃশ্য। কখনও মনে হয় মুঘল স্থাপনা তাহলে আরও কত বৈচিত্রময়। চার সিংহ দরজা স্মরণ করিয়ে দেয় বংশের প্রথম চার সিংহপুরুষের কথা। ঢুকলেই চোখে পড়বে বহুতল চার ইমারত। যাঅনেকেই বহুতল বললেও আসলে দোতলা। কিন্তু দেখার মত। বিশেষত রংমহল। যেখানে একসময় জলসা বসত। রোশনাই দিতো ইংল্যান্ড থেকে ফরমায়েশ করে আনা ঝাড়লন্ঠন।সেই বাতিতে আজও খোদাই করা জমিদারদের নামের অদ্যোক্ষর।




অন্দরমহলে ঢোকা বারণ। দুইশর মত ঘরে তালা দেয়া রয়েছে। দো’তলার রেলিং-এ মরচে ধরেছে কারুকাযে নয়। তেমনি জমিদারির ইতিহাসেও মরচে ধরেছে… কিন্তু ঐতিহ্যে নয় সেটা পেছনের পুকুরঘাট দেখলেই বোঝা যায়। দরজার ফাঁক দিয়ে অন্দরমহলের ভেতর দেখলাম। মহলের ভেতরটা খোলা মাঝে কুয়ো রয়েছে। ভাবলাম এখন জমিদারি আমল হলে নিশ্চয়ই আমায় চাবুকপেটা করা হত।


জমিদারবাড়ি থেকে বেরিয়ে দিঘী সমান পুকুর পাবেন। সেটার ওপারে গিয়ে ছবি তুলতে পারেন বাড়ির। এখানে রয়েছে যাত্রামঞ্চ যেখানে এখন দূর্গাপূজা হয়। ভাবা যায় না একসময় এখানে কলকাতার যাত্রা পার্টি আসতো।


১৯৬৫ সালের কোন একদিন নৌকা নৌকা জিনিসপত্র বোঝাই করে জমিদাররা দেশত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকে এসব মহল। স্থানীয় লোকজনরা যথেষ্ট সততার পরিচয় দিলেও বেহাত হয়ে যায় অনেককিছু। আমরা তো আজ গিয়ে শুধুই পালংক, কিছু ঝাড়বাতি, ইংলিশ আলনা, আলমারি আর টুকটাক কিছু জিনিস পেয়েছি। একসময় এ বাড়ি সরকারি অফিসে পরিণত হয়। কিছুর প্রয়োজন হলেই এ বাড়ির জিনিসপত্র ব্যবহার করা হত। জাদুঘরের কর্মচারী ইব্রাহিম ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাকিস্তান পিরিয়ডে তৎকালীন গভর্নর মুনায়েম খান এক অনুষ্ঠানে আসবেন বলে এ বাড়ির রূপার সিংহাসন নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেটাই কোন এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা বা মুনায়েম খানের নিজেরই পছন্দ হলে সেটা সাথে করেই নিয়ে যান। শুনতে শুনতে একসময় দীর্ঘশ্বাস পড়লো।

মিউজিয়াম কিউরেটরের মুখে শুনলাম এ পরিবারের বড় অংশই নাকি আজ ওপার বাংলায়। মাঝেমাঝে নাকি অনেকে আসেনও দেখতে। তবে এ পরিবারের একজন এখনও প্রাচীণ বৃক্ষের মত বেচে বর্তে আছেন সহস্র স্মৃতি আর সাম্রাজ্য হারানোর বেদনা নিয়ে। নামটা সঠিক মনে নেই। তবে তিনিও নাকি স্বাধীনতার পর অথবা পূর্বে তিনবার নিজেদের জমিদারি থেকে খাজনা তুলেছিলেন। তারপর আর হয়নি… বিলুপ্ত প্রথা একসময় রূপকথা হয়ে গেল।

এসব শুনছিলাম আর ভাবছিলাম। ভারতীয় অফট্র্যাকের মুভি 'Lootera' তে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণার পরদিন বরুণকে(রণবীর সিং) কে জমিদার বলতে থাকেন… “দুনিয়া পালটে গেছে বরুণবাবু। আপনারা ইংরেজদের কাছ থেকে আজাদ(স্বাধীণ) হয়েছেন। আর আমরা আজাদির কারণে বরবাদ হয়েছি।



৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×