আমাদের পরিবারে সবাই ব্যাস্ত মানুষ!বাবা-মা দুজনই চরম ব্যাস্ত যার যার অফিসে, আর আমরা দুই ভাই পড়ালেখা নিয়ে সদা দৌড়ের উপর। টিউটেরিয়াল, ক্লাস, কোচিং সব মিলিয়ে এত ব্যাস্ততায় আজকাল দিন কাটে যে শুক্রবারের দিনটা ছাড়া সবাই একসাথে হওয়াই প্রায় হয়না। কখনও আবার সেদিন টাও দেখা যায় কারও কাজ বা পরীক্ষা পড়ে গেছে, বিশেষত: যদি সপ্তাহের মধ্যে হরতাল থাকে তো । আমি তাই বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম সুন্দর কিছু পারিবারিক মুহূর্ত কাটাতে আর একঘেয়েমিতা দূর করতে আমরা সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে যাব । দেশের বাইরে না হলে দেশের মধ্যেই। আমাদের সবারই আবার সমুদ্রটাই পছন্দ তাই ভেবে দেখলাম কক্সবাজারের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে? ছোটবেলায় বাবা-মার সাথে গিয়েছিলাম কক্সবাজার, তারপর আর যাওয়া হয়নি। আমার প্রস্তাবে সবাই তাই একবাক্যে রাজি!
রোজই কাজের ফাঁকে প্ল্যানিং আর বাজেটের খসড়া করা চলেছিল। ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম, বেশ অনেকগুলো নতুন হোটেল হয়েছে। কক্স টুডে এর ভিউ টা বেশ পছন্দ হল। বাবাও বেশ পছন্দ করলেন। বুকিং দিতে বললাম বাবা কে। মজার ব্যাপার, বাবা তার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এর সিগনেচার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইন বুকিং দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন রুম ফেয়ার এর উপর আমরা ৩০% ডিসকাউন্ট পাচ্ছি। আমরা যেহেতু পিক সিজনে (নভেম্বর এ) যাচ্ছি তাই। অফ পিকে গেলে নাকি সেটা ৫০% হত! যাই হোক, ৩০% ই বা কম কি! তাছাড়া ওখানে রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল এসবেও ভাল ডিসকাউন্ট আছে । আনন্দ যেন আরও কয়েকগুন বেড়ে গেল। যেহেতু রিল্যাক্স করতেই যাওয়া, তাই প্ল্যানিং টা ভালমতই করে নিতে চাইছিলাম।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার পর বুধবার রাতে মাইক্রোবাসে চড়ে বেরিয়ে পড়লাম বাবা মা আর আমরা দু ভাই। হিসাব করে বের হয়েছিলাম যাতে সারারাত জার্নি তে কাটে আর সকাল সকাল পৌঁছে যাই। রাস্তায় তেমন জ্যাম প্ল্যান মতই হল । হোটেল পৌঁছে রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। রুম গুলো সত্যিই বেশ বড়, ছিমছাম আর সুন্দর! ভিউ টাও বেশ সুন্দর ছিল আমাদের দুই রুম থেকে। সার্ভিস ও বেশ ভাল। ওয়েলকাম ড্রিংক দিয়ে।আমাদের বেশ ভাল মত্ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। হোটেল এর রেস্টুরেন্টেই খেয়ে নিয়ে বের হলাম বিচের উদ্দেশ্যে। সুন্দর সময় কাটালাম সবাই মিলে।সমুদ্রের পাড়ের বাতাসে মনে হয় ক্ষুধা কিছুটা বেশীই লাগে ! সন্ধ্যায় খেলাম মাছের গ্রীল ………আহ্! তার কী যে স্বাদ !
পরদিন হিমছড়ি আর ইনানীতে ঘোরাঘুরি । আর বার্মিজ মার্কেট থেকে মায়ের একগাদা শপিং হল। ঘুরাঘুরির চেয়ে আমরা রিলাক্সই বেশি করেছিলাম। দুইদিন থেকে ফুরফুরে মেজাজে ফিরেছিলাম ঢাকায়।
যারা এরকম ব্যাস্ত জীবন কাটান, মাঝে মাঝে কিছু সময় বের করে পরিবারের সাথে এমন একটা ভ্রমণ করতেই পারেন। ভাল লাগতে বাধ্য!!