মিশুক মুনীর । পুরো নাম আশফাক মুনীর মিশুক, দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ব্রডকাস্ট জার্নালিসম বিষয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে। ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণকারী মিশুক মুনীরের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। শিক্ষকতার চেয়ে ক্যামেরা হাতে কাজ করাটাই ছিলো তার সবচেয়ে পছন্দের। যখন দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ হয়নি তখন সেই টানেই তিনি ছুটতেন দেশের বাইরে। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ইউরোপেরে বিভিন্ন জায়গায় বিবিসির ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া তিনি কানাডার রিয়েল টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্ট অপারেশন হিসেবে কাজ করেছেন। নিজের হাতে গড়ে তোলেন একুশের সংবাদ টিম। নাম পান বাংলার সায়মন ড্রিং। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু বিদেশের জন্য নয় দেশের জন্যই দেশে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের বিকাশেই কাজ করতে চাইতেন মিশুক মুনীর। সেকারণে গত বছর দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।
মিশুক মুনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (১৯৭৯-১৯৮৩) পাস করেন। ১৯৮২-৮৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন জাতীয় জাদুঘরের অডিওভিজুয়াল কর্মকর্তা হিসেবে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোদস্তুর সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একুশে টিভির বার্তাপ্রধান (পরিচালনা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি টরন্টোর ব্রেকথ্রো ফিল্মস, জে ফিল্মস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স ক্যামেরাপারসন ও প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। কানাডার রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্কের হেড অব ব্রডকাস্ট অপারেশন্স হিসেবে দীর্ঘ আট বছর কাজ করেন তিনি। সর্বশেষ গত বছর তিনি এটিএন নিউজে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও তিনি লিবিয়ার সংকটের সময় সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের সংবাদ সংগ্রহ করতে নিজেই ছুটে যান। মিশুক মুনীর একাডেমি অব কানাডিয়ান সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশনের এবং কানাডিয়ান ইনডিপেনডেন্ট ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং কানাডিয়ান সোসাইটি অব সিনেমাটোগ্রাফির সহযোগী সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ছবি রানওয়ের প্রধান চিত্রগ্রাহক ছিলেন মিশুক মুনীর। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে মুক্তমঞ্চে এই ছবির প্রদর্শনী করেছেন তাঁরা। এছাড়া জেমিনি অ্যাওয়ার্ড জয়ী রিটার্ন টু কান্দাহার এবং সিচুয়েশনাল ক্রিটিক্যাল, লিটল মিরাকলস, হার্টবিট, ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম প্রামাণ্যচিত্রে কাজ করেছেন মিশুক মুনীর।
মিশুক মুনীর সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে: প্রথম আলো । বিডিনিউজ২৪ । বাংলানিউজ২৪ ।
দ্যা রিয়েল নিউজের ওয়েব সাইটে মিশুক মুনীর-কে নিয়ে লেখা হয়েছে :
We called him TRNN employee 001. He was the first person to work with me on the project, starting in 2004. He fought tirelessly and was a critical reason why TRNN became a reality.
ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে দ্যা রিয়েল নিউজে করা তার একটি প্রতিবেদন এখানে :
ইরাকে তুর্কী হামলা নিয়ে দ্যা রিয়েল নিউজে করা তার একটি প্রতিবেদন এখানে :
সারাজীবন ক্যামেরার পেছনে থাকা এ মানুষটি সবসময়ই ক্যামেরা এড়িয়ে চলেছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্বেও কখনো প্রচারে আসেননি। নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন একুশের সংবাদ টিম। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক জার্নালিজমে মেধা আর প্রযুক্তির সমন্বয় করতে চেয়েছেন সারা জীবন। বিদেশের জন্য নয় দেশের জন্যই দেশে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের বিকাশেই কাজ করতে কানাডার নিরাপদ জীবন ছেড়ে চলে এসেছিলেন দেশে....
কিন্তু হায় !! আমরা তাকে ধরে রাখতে পারলাম না....
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ ভোর ৫:১৯