বর্তমান বাংলাদেশে হরতাল একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। হরতাল শব্দটি শুনেনি এমন লোক বাংলাদেশ এ খুজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে।
হরতাল নিয়ে জণমনে আতংক উপমহাদেশে অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। কে বা কাহারা হরতাল এর প্রবর্তন করেছেন তা নিয়ে আমার স্টাডি করা হয়নি । হরতাল মূলত রাজনীতিক দলের হাতিয়ার । এই হাতিয়ার জণ স্বার্থ কায়েমের চেয়ে বরং রাজনীতিক নেতাদের হীণস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহৃ ত হচ্ছে। বলা চলে যে হরতাল রাজনীতিক দলের একটি উৎসব। বিরোধী দল এই উৎসবের আয়োজন করে, সরকার দল এই উৎসবে বাঁধা প্রদান করে। এই উৎসব আয়োজনের টাকা পয়সা অর্জিত হয় সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে। আজকে রাজনীতির কাল প্রবাহে বিরোধি দল একের পর এক হরতাল দিয়ে যাচ্ছে। যদিও সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ ও উজ্জীবিত তরুণের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে আইন জারি করে হরতাল বন্ধ আহবানের, কিন্তু সরকার দল আদৌ আইন করে হরতাল বন্ধ করবে কিনা তা বলা মুস্কিল।
সময়ের পরিক্রমায় তাদেরকেও যে বিরোধী দলে যেতে হবে। সেই ভয় এর ক্ষেত্র থেকেই হয়তোবা তাঁহারা হরতাল বন্ধ করার উদ্যোগ নেবেননা। খারাপ কি ? ভালোইতো!
হরতাল হলে বিনা টিকেট এ সিনেমার একশ্যান পার্ট ইনজয় করা যায়। ছোট বেলায় যখন বাংলা সিনেমা দেখতাম তখন নায়ক নায়িকার শরীর থেকে প্রবাহিত কৃত্রিম রক্ত দেখে গা শিহরে উঠত। পরে বুঝলাম যে ঐ গুলো আসলে কৃত্রিম। বাস্তবে এতোটা আতংকময় পরিবেশ দেখার সৌভাগ্য অথবা দূভাগ্য কোনটাই হয়নি। কিন্তু এখন হরতাল এ যা দেখছি তা শুধু সিনেমার কাহিনী নয়, কঠিন বাস্তবতাকেও হার মানায়। হরতাল মানে কতোগুলো লাশের জন্য জাতির অপেক্ষা , হরতাল মানে কতোগুলো অনাহারী মানুষের না খেয়ে থাকার গল্প, হরতাল মানে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হওয়া কোন ও নিরীহ মানুষের লাশ হয়ে ঘরে ফেরা , হরতাল মানে আগুনে ঝলসে যাওয়া কোন ও তরুণ তরুণীর আর্তনাদ, হরতাল মানে বিশ্বজিতদের অকালে চলে যা ও য়া, হরতাল মানে নিহত সন্তানের পাশে দাড়িয়ে দুখিনি মা এর আর্তনাদ।
হরতাল মানে আমার আপনার মতো সাধারন মানুষকে পিছিয়ে দেয়ার চিন্তাধারা। শত প্রতিকূলতার মাঝে ও হোঁচট খেয়ে আমরা যখন শান্তিতে বসবাস করতে চাই তখন রাজনীতিবিদদের তা স হ্য হয়না। কি অপরাধ করেছি আমরা সাধারণ জনতা?? আমরা পিকেটিং করিনা, চাঁদাবাজি করিনা, মাতলামি করিনা, ইভ টিজিং করিনা, অন্যের পেটে লাথি মারিনা, টিউশনি করে নিজেদের পকেট খরছ যোগাই, না খেয়ে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াই, নাম করা রেষ্টুরেন্ট এর পাশে শুধু খাবারের গন্ধটুকু নেই, খাওয়ার সাধ্য হয়না। এটাই কি আমাদের অপরাধ?? বিলাস বহুল জীবন যাপন করার সাধ্য আমাদের নেই, তবে এটাই কি আমাদের অপরাধ?? আমরা আপনাদের এই বিলাস বহুল লাইফ স্টাইল এর পাশে বসবাসকারী সাধারন মানুষ। আপনাদের ছেলে মেয়রা যখন আমাদের টাকা দিয়ে বিলাস বহুল গাড়িতে চড়ে বেড়ায় , আমাদের ঠাই হয় তখন ভাঙ্গা কোন ও অটোরিকসায়। আপনাদের ছেলে মেয়রা যখন খাবার নষ্ট করে বিলাস বহুল হোটেল এ বসে, আমরা তখন এক কাপ চা এর জন্য দাড়াই রাস্তার পাশে কোন ও টি স্টল এ ।
আপনাদের ছেলে মেয়েরা যখন উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়, আমাদের ঠাই হয় তখন দেশীয় কোন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আপনাদের ছেলে মেয়েরা যখন নির্বিগ্নে তাদের স্টাডি শেষ করে, আমাদের তখন মুখোমুখি হতে হয় সেশন জটের কবলে। আপনাদের এই হরতাল উৎসব আমাদের জীবনের সব ভালো লাগা গুলো কেড়ে নিচ্ছে। আমাদেরকে আপনারা মানুষ মনে করেন না, কিন্তু ভোটের আগে আমাদের ভোটের জন্য পা ধরতেও দ্বিধা বোধ করেন না। বিজয় লাভ করে আপনারা ভুলে যান আমাদের কথা। আপনারা জনসভায় যা বলেন , বাস্তবে তা কখনই করেন না । আপনাদের দুমুখো কারেক্টার নিয়ে আজ ও আমরা সংশয়ে থাকি। আপনাদের এই হরতাল উৎসবে বেঁচে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।
দেয়ালে যখন পিঠ থেকে যাবে তখন আপনারা কেউ ছাড় পাবেননা। আপনাদের এই দুমুখো কারেক্টার পরিবর্তন করুন, তা না হলে জনতার হাতেই আপনারা লান্জ্ঞিত হবেন। অন্যায় বেশিদিন কোন ও সভ্যতায়, কোন ও যুগে টিকে থাকতে পারেনি। এই যুগেও তা টিকে থাকতে পারবেনা। আমরা শান্তি চাই। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা চাই।
হরতাল নামক কলংকজনক অধ্যায় থেকে মুক্তি চাই। আপনাদের হরতাল উৎসব কেনো আমাদের শান্তির পথ অবরুদ্ধ করতে চায়???
আমরা কি ক্ষতি করেছি আপনাদের??
দেশটা কি আপনাদের একার?
আপনারা কি আদৌ আমাদেরকে এই দেশের অংশ মনে করেন? যদি তাই মনে করেন তবে কেনো আজ আমরা বন্দি আপনাদের এই হরতাল উৎসবের চার দেয়ালে? একই সূর্যের নিচে বসবাস করে ও কেনো আজ আমরা অবহেলিত??
-১৯/০৩/২০১৩