মানবতার খাতিরে মানবতাকে নির্ণায়ক ধ’রে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা মনুষ্যজাতির জন্য স্বাভাবিক। মার্ক টোয়েন বলছেন― যে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চেলে; সে ব্যক্তিত্বহীন। আসলে তাল মিলিয়ে চলা মানে এই নয় যে; স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে হবে। গা ভাসিয়ে দিলে বরং মানবতারই ক্ষতি। রবীন্দ্রনাথ বলছেন- যুদ্ধ করার চেয়ে সন্ধি করার বিদ্যাটা ঢের দুরূহ। কারণ, যুদ্ধ লাগলে যুদ্ধকে যুদ্ধ দিয়েই থামানো যায়। রবিবাবু যে সন্ধি-বিদ্যার কথাটা বলছেন এটা অর্জন করতে যুদ্ধটা করাটা কিন্তু জরুরী। গড়ার জন্যই ভাঙতে হয়। এমনই বাধ ভাঙার আওয়াজ বা স্রোত যদি মানবতার পানে ছুটে চলে আমি শুধু ওতে গা ভাসিয়ে দিবো নে; সাঁতরানোর চেষ্টা করতেও রাজি আছি। এ হলো সামহোয়্যারইন...ব্লগের সাথে আমার মুখ্য বন্ধন। এছাড়াও আরো তিনটে সম্পর্ক রয়েছে―বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও গণমানুষ। ‘অন্ধবিন্দু’ সকলসূত্রে বাঙালি-বাংলাদেশি, বাংলা তার মাতৃভাষা, তিনি বাংলাদেশের গণমানুষদের একজন। থার্মোডায়নামিক্সের সেকেন্ড ল ’র কথাই ধরুন বা নিউটনের থার্ড ল; গণমানুষ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভেসে চলে পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা। পারিপার্শ্বিকতা/পরিবেশ তাকে স্বাধীনতা দিয়েছে কিন্তু তবুও সে পরাধীন। ‘পর’ হচ্ছে আমাদের মানবতা। এবং মানবতার পর হচ্ছে বিবেকহীনতা। বিবেক জন্মগতভাবেই মানব-অঙ্গ। অঙ্গটিকে কর্মক্ষম করতে লাগে কতক শিক্ষা। শিক্ষা যেমনি আসতে পারে পরিবার-সমাজ-জাতি-রাষ্ট্রের দৈনন্দিন অভ্যেস থেকে তেমনি অভ্যেসও নির্মিত হয় ব্যক্তির সাথে প্রকৃতির বোঝাপড়াকে কেন্দ্র করে। মানুষ; রক্ত-মাংস, আবেগ-পার্শ্ববেগ, ভুল-ত্রুটি, লোভ-পাপ আর ভালভাবে বেঁচে থাকার মোহ নিয়ে প্রচলিত সমাজ কাঠামো আঁকড়ে আছি। প্রচলিত পরিধিকে নেগেটিভ সেন্স করতে পারেন আপনারা। আবার বলতেও পারেন, যুগযুগ ধরে চলে আসা পরম্পরা-কৃষ্টি-কালচার দুহাত জড়িয়ে রাখার মধ্যেই তো সামাজিকতা নিহিত। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে বলুনতো, পৃথিবীর কোনও জাতি-গোষ্ঠী কি কয়েক-যুগ আগে যেমন ছিল আজ কী তেমনটাই আছে ? প্রতিজবাব: নেই। আমরা যতোই অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার কক্ষপথে উন্নততর সভ্যতার কথা বলি না কেনও, এ সবই হল উপসর্গ; আমাদের মূল শব্দটি হচ্ছে মনুষ্যধর্ম। পূর্বপুরুষ থেকে উত্তরপুরুষে এক্সটেনশন হতে হতে ক্ষুধা-কামনা-যাতনার অস্তিত্ব যেমন লোপ পায় নি। সে অস্তিত্বে প্রকৃতিমাতা ‘মনুষ্যজাতির’ ইনটেনশনটি কমিয়েও দেয় নি। এই এক্সটেনশন এবং ইনটেনশনের পারস্পরিক যথার্থতা বজায় রাখতে ইউনিভার্সাল ব্যালেন্সের হাতে রয়েছে দুটো অস্ত্র― ১।ভয় ২।আকাঙ্ক্ষা। তাঁর গ্রাহকরূপ অবশ্য পৃথিবীর সকল প্রাণিতে মূর্ত-বিমূর্ত অবস্থায় আছে, কিন্তু মানব প্রজাতিতে সরাসরি মূর্ত। এবং মানুষের মূর্ততা বিচিত্রমুখী। আর এই বিচিত্র-মুখী/হরেক রকমকে আমরা বলে থাকি ‘ইউনিক’।
সামহোয়্যারইন...ব্লগের সাথে আমার যে চারটি সম্পর্কের কথা বলছিলুম, সেগুলোও আমার পক্ষ থেকে অত্যন্ত ‘ইউনিক’। যদিও ব্লগটি ব্যবহারের সকল শর্তাবলী সম্বন্ধে অবগত হ’য়ে ‘অন্ধবিন্দু’ র ব্যক্তি মানুষটি এই নিকটিকে নিবন্ধন করেছিলেন। এবং তার ব্লগিং আচরণ সেসব শর্তাবলী মেনে চলতে যথেষ্ট আন্তরিক। আমি জানি, সামহোয়্যারইন...ব্লগ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ, মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্লাটফর্ম। তবে এখানে প্রকাশের রীতিনীতি ব্যবহারের শর্তাবলী(টার্মস এন্ড কন্ডিশন) মারফত নিয়ন্ত্রিত। সামহোয়্যারইন...ব্লগ, আমাকে উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের উৎসাহ/অধিকার দিয়েছে এবং স্বাধীনতার ব্যাপকতা-মস্তিষ্কটিকে ড্র করছে এই ব’লে “যতক্ষণ না তা রাষ্ট্রীয় আইন বা অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।” ব্যক্তি আমার যখন, সে শিক্ষাটুকো আছে যা রাষ্ট্রীয় আইন ও অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি মানবতার খাতিরে মানবতাকে নির্ণায়ক ধ’রে তাল মেলাতে জানে। তাই সামহোয়্যারইন...ব্লগ আমাকে নিরাপদ মনে করতেই পারে। আবার আমিও ততক্ষণই এ বাধ ভাঙার আওয়াজ বা স্রোতে সাঁতরানোটাকে নিরাপদ জ্ঞান করছি যতক্ষণ ইহা আমার চারটি সম্পর্ককে সমভাবে মূল্যায়ন করে যাচ্ছে।
যাচ্ছে কি ? এর উত্তর আমি কখনো সামহোয়্যারইন...ব্লগ থেকে একক-বিবেচিত দৃষ্টিতে নেই নি। এ বিবেচনা সংশ্লিষ্ট-বোধ সম্পর্কিত ধারনাগুলোকে বিশেষ জ্ঞান কর্তৃক যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিক্ষিত হবার পরই সিদ্ধাতে আনা হয়। ব্লগটি আমাকে আজ পর্যন্ত আশাহত করে নি। হ্যাঁ! এর পরিচালনা বা এতে প্রবেশকৃত বাতাবরণ নিয়ন্ত্রণের যে চিন্তা-ধারাটি রয়েছে তার সাথে আমার দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু তা সামান্য। যদি কখনো তা বোল্ড হ’তে শুরু করে। আমি অবশ্যই ব্লগটিতে পোস্ট করে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মসিদ্ধ যোগাযোগ করে জানাবার পক্ষপাতী। অন্যত্র একে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাটা আমার বিবেচনায় অসঠিক একটি কাজ।
ব্লগে নিবন্ধিত অর্থাৎ ব্লগটির ব্যবহারকারী হিসেবে যদি আমাকে ব্লগার বলেন। হা! তাহলে আমিও একজন ব্লগার। মন্তব্যের উত্তরে, ব্লগের কারিগরি প্রক্রিয়াটি আমাকে ‘লেখক বলেছেন’ উল্লেখে লেখক ব’লে পরিচয় করিয়ে দেয়। হা, যিনি লিখেছেন তাকে লেখকই-যে বলবে! তবে আমি নিজেকে ব্লগার বা লেখক ভাবতে অনিচ্ছুক। কারণ বর্তমান ইন্টারনেট-বিশ্বে ব্লগার ক্রিয়াটির যে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ দাঁড়িয়েছে; আমার পক্ষে, সেটিতে ধারণ করতে পারার মত সময় ও শ্রম বিনিময় করা সম্ভবপর নয়(অনাকাঙ্ক্ষিত কতক ঘটনা বাংলাদেশে সাধারণ মানুষদের মাঝে ব্লগার উপাধিটিকে অত্যন্ত বাজে ভাবে হেয় ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। অসামাজিক/বিকৃত মস্তিষ্ক/কুশিক্ষায় শিক্ষিত/মানসিকরোগী স্বল্পসংখ্যকদের দায় পুরো ব্লগার-সমাজ কেনো নেবেন। বাংলা ব্লগে এমন অনেক ব্লগার আছেন যাঁরা মানবতা, দেশ ও দশের সেবায় অনলাইনে অফলাইনে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের লেখা দিয়ে সমাজের নানা গোঁড়ামি-ভণ্ডামি-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর-দরিদ্রতামুক্ত-সুখী বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে লালন করছেন। সুতরাং আমি আশাকরি ধীরে ধীরে সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে এ অপবাদটিও ঘুচে যাবে)। পৃথিবীর গুণী লেখকেরা যা লিখে গেছেন যেমন আমাদের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি যাঁদের লেখালেখিতে সমৃদ্ধ হয়েছে― তাঁদের লেখা পড়ার পর নিজেকে লেখক বলতে বড় লজ্জা লাগে। তাই আমি লেখক নই, ব্লগারও নই।
ব্লগে খ্যাত কোনও সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক বা সেলিব্রেটিদের লেখা/পোস্ট খোঁজ করতে আসি নে। এখানে তথ্য বা তাত্ত্বিক জ্ঞান তল্লাসেও আমার আগ্রহ নেই। আমার নিকটে প্রচুর গ্রন্থ আছে। বই সংগ্রহের নানা মাধ্যম আছে। অনলাইনে বিশ্বস্ত বহু সাইট আছে। যা থেকে আমি আমার প্রয়োজন পূরণ করে নিই। সংবাদ/নিউজ জানার জন্য প্রধান মিডিয়াগুলো ২৪ ঘণ্টা পাশেই থাকে। জিজ্ঞাসা হ’তে পারে, তাহলে ব্লগে কি করছি আমি! ‘সামহোয়্যারইন...ব্লগ’ নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। এর মূলে রয়েছে অনলাইন সমাজের গণমানুষ, যারা ব্লগটিতে অবাধ চলাচল করতে পেরেছে ও পারছে। একটা কালের কথা―যখন বাংলায় লিখতে হ’লে এই ‘সামহোয়্যারইন...ব্লগ’ সে সুবিধা প্রদানকারী একমাত্র প্লাটফর্ম ছিল। কালে কালে সময় গড়িয়েছে; প্রাযুক্তিক সহজলভ্যতায় অন্যান্য আরও বাংলা-ব্লগিং প্লাটফর্ম এসেছে। তবে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ব্লগটি আজও তাঁর অবস্থান ধরে রেখেছে। নিজেকে আধুনিক-শৈল্পিক-মানবিক করে তুলেছে আরও। আমি ব্লগে আসি আমার দেশের গণমানুষ, নাগরিকদের ভাবনা জানতে। তারা দেশে থাকেন, প্রবাসে থাকেন―তাঁদের ভাবনায় থাকে দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে জীবন-যাপন, বিভিন্ন অন্তরায়, সমস্যা-সমাধান, ধর্মচিন্তা, এবং জীবিকা-মুখী দর্শন। কেউ ডায়েরির মত করে লিখে যান আত্মনুভূতির কথা, তো কেউ তার অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকাশ করেন ব্যক্তি জীবন ও পরিপার্শ্ব-পরিস্থিতির বর্ণন। আমি ব্লগের সেসব লেখায় পাঠক হই, বুঝার চেষ্টা করি কেমন আছে আমার বাংলাদেশ। এ দেশের সাধারণ জনতা কেমন করে ভাবছে। কি তাঁদের প্রত্যাশা। কোথায় কতটা তাঁদের হতাশা-ক্ষোভ-অভিমান। সাধারণ মানুষের চিন্তাও যে কতখানি অসাধারণ হ’তে পারে তার অন্যতম প্রমাণ এই ‘সামহোয়্যারইন...ব্লগ’। আবার ভাববেন না যেনও আমি হয়তো অসাধারণ। না! আমি তেমন কেউই নই। বরং নগণ্য ও অতীব-নির্বিশেষ। গরিব গরিব ভাই ভাই; সাধারণ আমজনতা আমরা, আমাদের লিখিত/ব্লগিত চিন্তা-চেতনায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই। গণ-মানুষের জীবন-ভাবনারাজ্য-অভিজ্ঞতাও যে বিশাল এক বই, জানেন তো ?
সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ফেসবুকের বর্ণিল-রঙে রঙিন হ’তে আমাদের জনসাধারণ ওখানেই বসতি স্থাপন করেছেন। আগের মত সে জনসমাগম ব্লগটিতে আর দেখি নে। আমারও তেমন একটা আসা হয় না। তবে টান রয়ে গেছে ব্লগের নীল আঙিনায়। যে বন্ধন ছিন্ন করাটাও অনুচিত। তাই ফিরে ফিরে আসি, সহব্লগারদের সাথে দুটো ভাবনা-মত আদান-প্রদান করি। নিকটি থেকে ব্লগে খুব একটা লেখা পোস্ট করা হয় নি। ব্লগের খাতায় লিখতে বসেছি, কারও পোস্ট দেখলাম, পড়লাম, মন্তব্য লিখলেম; ঘড়িতে তাকিয়ে অতঃপর লগআউট! ড্রাফটে এমন বেশ ক’টি পোস্ট অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে যা শুরু করেছিলাম আর শেষ করা হয় নি। আরেকটা বিষয় কাজ করে, সবাই লিখে যাচ্ছে; আমি না-হয় পাঠক হয়েই থাকলাম। সব মাধ্যমে লিখতে হবে কেন! এত লিখে কি হয় ? হাহ হাহ হা।
তাই অন্ধবিন্দুকে তার নিজের ব্লগ-পাতায় পাবেন না। তিনি দেখা দেবার চেষ্টা করেছেন অন্যদের করা পোস্টে কৃত-মন্তব্যে। মন্তব্য-পঠন-মতামত-ব্লগিং নিয়ে অনেক কথা যা প্রায়ই শুনি―লেখা না পড়েই মন্তব্য, তোষামোদি প্রশংসা, মন্তব্যের বদলে মন্তব্য, হিট, মাল্টিনিক, সিন্ডিকেট, গ্রুপিং, হেনো-তেনো আর কি কি যেনোও আছে এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। এসব নিয়ে ভাবার মত সময় কই। আমি চাইও নে এতদ তুচ্ছ বিষয়ে তার ব্যয়/অপচয় করতে। পৃথিবী মঙ্গলে চলে গেছে, বিজ্ঞানের এতগুলো শাখা-প্রশাখা দিনদিন তার বিস্তার ঘটিয়ে চলছে, বিশ্বসাহিত্য-ইতিহাস-সঙ্গীত-সংস্কৃতিতে নতুন নতুন সব নিরীক্ষা-ধর্মী গবেষণামূলক কাজ হচ্ছে। ওসবে খেয়াল নেই, লেখাপড়ার খবর নেই, কৌতূহল শূন্যতে এমনি যারা অনলাইনে পড়ে আছে যতসব চাইল্ডিশ কাজকারবার নিয়ে―এদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমি দোয়া করি আল্লাহ সুমতি দিন। গুণে-মানে-জ্ঞানে বড় হোক, পরিণত হোক।
কে ব্লগার, কোথায় লিখলে ব্লগার, কিভাবে লিখলে ব্লগার, কি বিষয়ে লিখলে ব্লগার; এসব প্রশ্ন আমার নিকট মৌলিক মনে হয় নে। মৌলিক প্রশ্নটি হচ্ছে, হোয়াট ইজ দ্যায়ার ইনটেনশন এন্ড ভিশন। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক বিপ্লব ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আগামীকাল নয়া নামের নয়া কোনও ফোর্সের আবির্ভাব হতে পারে। ব্লগার নাম/উপাধির ভাষান্তর হতে পারে। ঠিকতাই, ব্লগার বলতে আমি সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে চাই নে। আমার হাইপোথিসিস/কনসেপ্ট এখানটাতে; তিনি একজন ব্লগার―অনলাইনের যিনি বা যাঁহারা: কেবল নিজের আবেগ বিবেচনায় রেখে মতামত প্রকাশ করেন না বরং বিবেকের সাথে প্রজ্ঞার যথাসম্ভব প্রয়াগ ঘটিয়ে উক্ত মতামতটিকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করেন। তিনি সমস্যা লিখেন সমাধানের মত করে। তিনি নাগরিক সাংবাদিকতা করেন আড়ালের সংবাদ নিয়ে। তিনি গণ-মানুষের জন্য কথা বলেন ঠিকই তবে সেটা হয় কুসংস্কার ও প্রচলিত ভুল মুক্ত। তিনি তার লেখা/সুকুমার বৃত্তিতে থাকেন আপোষহীন তাদের সাথে; যারা অশুভ কোন মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য, প্রকৃত সত্য ও তথ্য লুকিয়ে লেখালেখি করে জনতার চোখে ভেলকি লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি তার সৃজনে সতর্ক থাকেন এবং তর্ক-সমালোচনায় হোন সু-তার্কিক। তাহলে যিনি অনলাইনে দিনলিপি রাখছেন, অথবা লিখছেন তাঁর ব্যক্তিবিশেষের কোনও অনুদাত্ত স্বর। তিনি কি ব্লগার নন ? উত্তরে বলবো অনলাইনে যে যাই করুক, ব্লগার উপনামটি আসলে তার কাজের ধরন হওয়া উচিত দায়িত্বশীল। ইন্টারনেটের কল্যাণে যে কেউ খোলা খাতায় লেখার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রচুর অনাবৃত তথ্য রয়েছে হাতের নাগালে। এখন উইকি জাতীয় সাইট থেকে লিংক উল্লেখ করে উক্ত-বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন এমন ব্যক্তি/ভার্চুয়াল নিক তুলে ধরছেন তার মতামত। আমার ভাল লাগে এ প্রয়াসটি। কারণ যত জানা যায় প্রশ্ন করার বা উত্তর দেবার ক্ষমতাও তত বাড়তে থাকে। তবে এও গণনায় রাখতে হবে, তথ্য মাত্রই নলেজ নয়। ত্রিশ-চল্লিশ বছর পড়াশোনা করে কোনও বিষয়ের উপর জ্ঞাত হওয়া আর দু-চার ঘণ্টা পড়েই জান্তা হবার মধ্যে বিশাল পার্থক্য। পারিশ্রমিক হোক বা বিনা-অর্থে, ব্লগারগণ সবসময়ই অনলাইনের এলিট শ্রেণি। হয়তো আজ থেকে আরও দশ বছর পর পৃথিবীর মানুষ প্রায় পুরোপুরি ইন্টারনেট-নির্ভর হয়ে পড়বে। বাস্তবিক জগতে যেমন বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ ভূমিকায় রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ব্লগার জাতটি অনলাইনের সে ভূমিকায় নিজেদের প্রতিধ্বনিত রাখবেন। আমরা সাধারণ জনতা, হোক্সে বিভ্রান্ত হবো বারংবার। ব্লগারগণ হবেন না। দে নো দ্যা ওয়ে টু―নট বি।
আমি লেখকের নাম দেখে লেখা-টেখায় মন্তব্য করি নে। আগে লেখা তারপর লেখক। লেখকের নাম বিচার করে পড়ার ইচ্ছা থাকলে কমিউনিটি ব্লগে আসার দরকার কী! লেখার মান যেমনই হোক, বিষয়বস্তু/বক্তব্যে জোর-যুক্তি থাকলেই; আমার জন্য যথেষ্ট, পারলে/সময় পেলে মন্তব্য রাখার চেষ্টা করি। কাউকে মিথ্যা প্রশংসা করি নে, উচিত মূল্যায়নে পিছপা হই নে। লেখার-মত যত বিপক্ষের হোক না কেনও আমি ঋণাত্মক সমালোচনা করি নে। মতামত রাখি লেখক/লিখিয়ে/রকম লিখেছেন ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে। যিনি সখের বসে লিখছেন, কখনো লেখক হবার ইচ্ছেও নেই তাকে ব্যাকরণ-প্রকরণের অলিগলি দেখিয়ে ভয় পাইয়ে দিই নে। আমার ব্লগে কে আসল-গেলো তার সাথে আমি কার/কাদের ব্লগে যাচ্ছি এর সংযোগ একদমই নেই। এক দুই তিন করে পৃষ্ঠা পড়ে পড়ে পোস্টে যাই। কে হিট, কে ফিট, কার ফলোয়ার বেশি, কে কোন দলের হয়ে লেখেন, কার লেখায় মন্তব্য করলে লাইম-লাইট পাবো, কে রাজা, কে প্রজা, কে মিসকিন―আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার এট অল। যুক্তি-তথ্য-বিজ্ঞান আছে, গালাগাল বা উন্মাদীয় টোন নেই এমন যেকোনো লেখাই আমার গুরুত্ব ও মনোযোগের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। আমি মনে করি, গঠনমূলক আলোচনা ও উৎসাহজনক সমালোচনা করেই ব্লগে ব্লগারদের মধ্যকার বিশুদ্ধ বন্ধু-সুলভ সম্পর্কটি গড়ে তোলা সম্ভব। এতে যেমন পোস্টগুলো যথাযথভাবে পঠিত হয়, পাশাপাশি পোস্টে কৃত মন্তব্যগুলোও প্রাসঙ্গিক থাকে এবং পোস্টদাতা ও মন্তব্যকারী উভয়ের মধ্যে আস্থা-স্থাপন হয়। এভাবে গড়ে ওঠা সম্পর্ক ঠুনকো হয় নে। অন্যথায় ভার্চুয়াল ব্যক্তি সংযোগসমূহ মেকি মাত্র, যতক্ষণ একটিভ আছেন তো ততক্ষণ আপনাকে মনে রাখছে জগতের বাসিন্দারা। যবে থেকে অফলাইন হলেন, আপনার সকল উপস্থিতিও উধাও। দলকানা ও প্রচারকাঙাল মন-মানসিকতা অপছন্দ করি। চাটুকারিতা ঘৃণা করি। খুব বিরক্ত হই কপি পেস্ট পোস্ট দেখলে। ইংরেজি/অন্যভাষা থেকে অনুবাদিত পোস্টে মূল লেখকের নাম ও লিংক অনুল্লেখ থাকলে কষ্ট পাই; এটা হচ্ছে জাতের কষ্ট। কারো বিশ্বাস-মত-অবিশ্বাসে অসভ্য নোংরা আক্রমণ দেখে ব্যথিত হই প্রচণ্ড।ব্লগিং করি বা লেখালেখি; মানুষ হিসেবে আমরা সকলেই সমান। তাই আমাদের ব্যবহার, কথার ভাষা, মিথষ্ক্রিয়ায় অন্তত ন্যূনকল্পে সততা, শ্রদ্ধা, মানবিক বোধ, পরমত সহিষ্ণুতা, ও ভালবাসা থাকা কি ন্যায়সঙ্গত নয়!
আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক যে কেবল সমুদ্র উপত্যকায় খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল― মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে ‘আইজাক নিউটন’ তাঁর আত্মকথায় লিখেছিলেন। মহাত্মা ম্যান্ডেলা বলেন― তুমি যদি মানুষের সাথে সে ভাষায় কথা বলো যা সে বুঝে, তবে তোমার কথা তার মাথা পর্যন্ত যেতে পারে। তুমি যদি মানুষের সাথে তার ভাষায় কথা বলো তবে তার ঠিকানা হয় হৃদয়। যে সমাজে দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয়, অহংকার ফ্যাশনের রূপ পায়। অযোগ্য, মিথ্যাচারী, নীতি-আদর্শহীনদের মধ্যমণি করে হৈ-হুল্লোড় হয় আর গুণী-সৎ-বিচক্ষণদের জায়গা মেলে ডাস্টবিনে; সেথা কোন ভাষায় কথা বলাটা যুক্তিযুক্ত এবং কিসের সন্ধান করা যায়, ভেবে ভেবে দ্বিধাগ্রস্ত হই প্রায়ই। মাদার তেরেসার কথাটা আমাকে আলোড়িত করে― আমরা নিজেরা মনে করে থাকি আমরা যা করছি, তা হয়তো সমুদ্রের এক এক বিন্দু জল। কিন্তু সমুদ্রও অল্পতর; আমাদের এই এক বিন্দু জলের অনুপস্থিতিতে।
এ সকল কথা বলতে বলতে ভুলে যাই নি, শিক্ষা প্রদান-আদায় পদ্ধতির কথা, জনসংখ্যা, বেকার সমস্যা, রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসা ইত্যাদি উপাদানগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের সাথে। তাই আসমানের দিক তাকিয়ে লম্বা শ্বাস ছেড়ে ইতি টানছি.... লেখার।
আমি আশাবাদী―
বাংলার কৃষকের মতো
আমি আশাবাদী নই, তার লাঙলটির মতো।
২২ পৌষ ১৪২২
অন্ধবিন্দু | সামহোয়্যার ইন...ব্লগ
চিত্র: পিথাগোরিয়ান থিওরম-ভাস্কারা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১১