'সেতু বন্ধন' নামে একটা অনলাইন ম্যারেজ এজেন্সিতে পাওয়া গেছে নিরুপমা নামের একজনকে। সার্চ করে জানা গেছে, দুজন ভিক্টিম সুফিয়ান এবং তাসিফ সেটার সদস্য। নিরুপমার বয়স লেখা আছে ২৩, বাড়ি কুষ্টিয়া। এবং প্রোফাইলের কথাগুলো বেশ আকর্ষক- 'সবাই বলে সুদর্শন ও স্মার্ট পুরুষদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তারা মিথ্যে বলে না। আমি আগ্রহী স্মার্ট ও সুদর্শনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই। তবে তার আগে তাদের সঙ্গে কথা বলব। পছন্দ হলে আলোচনা এগোবে। সেটা বন্ধুত্ব থেকে বিয়েতে গড়াতে পারে।' সুন্দরী এক মেয়ের ছবি। রেজিস্টার করেছে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে।
চুপচাপ হাসিবের ব্রিফিং শুনে যাচ্ছেন আইজুদ্দিন। এবার প্রশ্ন করলেন, 'আইপি অ্যাড্রেস জেনেছো?'
-এখান থেকে পাইনি। সেটা পাওয়া গেছে 'নো হোয়ার ইন ব্লগ' নামে একটা সাইট থেকে। বাংলা ব্লগিং সাইট। নিরুপমা এখানে কবিতা লেখে। আরো অনেক কিছুই লেখে। মোটামুটি পুরুষ ব্লগারদের একটা বিরাট অংশই তার ভক্ত। সেটা সে এক্সপ্লয়েট করে মজাও পায় মনে হচ্ছে। ইনটেরেস্টিং ব্যাপার হলো প্রতিটি খুনের আগে তারিখ মিলিয়ে তার পোস্টগুলো দেখেছি আমি। প্রতিবারই সপ্তাহ খানেক আগে তার প্রিয় পুরুষকে নিয়ে সে একটি উত্তেজক কবিতা লিখেছে। মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে সে তার মনের মানুষের খোঁজ পেয়ে গেছে বলে বলছে। তার বিয়ে আসন্ন এ ধরণের কথা বার্তা। খুনের পর কয়েকদিন কোনো সাড়া শব্দ নেই। তারপরের পোস্টেই ডাক্তার বলেছে সে মারা যাচ্ছে কিংবা তার প্রিয় কেউ মারা গেছে এমন লেখালেখি। একটা প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। দীপ্র হাসান নামের কবি এখানে লিখত। দুজনের ইন্টার অ্যাকশন চমতকার। অথচ দীপ্র মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে নিরুপমা কিছুই লেখেনি। বরং পুরুষদের কামলোলুপতা নিয়ে একটি পোস্ট আছে। আমি সব প্রিন্ট আউট নিয়ে এসেছি স্যার।
শুনে খুশী ঝলমল করে উঠল আইজুদ্দিনের মুখ। হাসিবকে খুবই পছন্দ করেন তিনি, কারণ ছেলেটা সত্যিই শার্প। ঠিক কি ধরণের তথ্য তার প্রয়োজন একটু ধরিয়ে দিতে পারলেই বুঝে নেয় বাকিটা। 'সর্বশেষ ভিক্টিম তাহলে কিভাবে রিলেটেড?'
- সে ও 'নো হোয়ারেৱ' লেখে। তবে নিজের নামে নয়। তার নিক 'নীল সমুদ্র'। তার পিসি চেক করে যা দেখা গেছে তাতে নিরুপমার সঙ্গে তার চ্যাটিং হয়। ভাগ্যিস অটো লগইন ছিল, সেখান থেকেই পাওয়া গেল দুজনের কিছু আলাপ সালাপ। শুরুতে বন্ধুত্ব ছিল। বেশ পিঠ চাপড়াচাপড়ি। দুজন কিছু লিখলেই একজন আরেকজনকে জানিয়েছে। সেটা আস্তে আস্তে অন্য দিকে গড়িয়েছে। কিছু আলাপ বেশ ভালগার। তবে মাস তিনেক আগে থেকেই দুজনের যোগাযোগের ঘাটতি দেখা গেছে, নেই বলতে গেলে। এটায় আমি বেশ কনফিউজড।
- সেল ফোন চেক করেছো?
- এটা স্যার আরো ইন্টেরেস্টিং। ভিক্টিমদের কারো কোনো মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। তবে নিরুপমা প্রায়ই মোবাইলের মডেল বদলানো নিয়ে পোস্ট দেয়। মানে প্রথম দুটো খুনের পর দিয়েছে। আমি চেক করে দেখেছি সুফিয়ান আর তারিফের সঙ্গে মডেল মিলে গেছে দুবার। দীপ্র তেমন দামি সেট ব্যবহার করত না। কিন্তু তারটাও হাওয়া। নীল সমুদ্র বা আরিফের মডেলটাও বেশ দামিÑ নোকিয়া এন-নাইন্টি থ্রি। এটা নিয়ে এখনও কোনো পোস্ট পড়েনি। তবে আগামী কয়েকদিন নিরুপমা কিছু লিখবে না।
- লিটারালি ইন্টেরেস্টিং। খুনী সবসময়ই শিকারের কিছু না কিছু নিয়ে যায় স্মারক হিসেবে। ট্রফি বলতে পারো। নিরুপমা এক ঢিলে দু পাখি মারছে। সে রেকর্ড নিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে, আবার সেট কাজে লাগাচ্ছে। এটা আসলে তার এক ধরনের কনফেশনও বলতে পারো, যে সে খুন করেছে। দারুণ। আর কিছু?
- আরেকটা কনফিউশন আছে স্যার। আসিফের ডেডবডির পাশেও ব্লাড স্টেইন পাওয়া গেছে, সঙ্গে লম্বা চুল। কিন্তু ডিএনএ ম্যাচ করছে না। খুনী কি দুজন নাকি!
- এটাও তোমার ভাষায় ইন্টেরেস্টিং। ভেরি ভেরি ইন্টেরেস্টিং। লোকেশন বলো।
- স্যার মোহাম্মদপুর। একটা উইমেন রিহ্যাব সেন্টার। দুঃস্থ-পতিত মেয়েদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করছে এনজিওটা। নাম 'আলোর দিশা'। এখানে ছবি মিলিয়ে নিরুপমাকে পাওয়া গেছে। আসল নাম ডক্টর নাজমা হাসান। প্রাইভেট মেডিকেল থেকে পাশ করেছে। সাইকোলজিকাল থেরাপির ওপর শর্ট কোর্স করে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিয়েছে গত বছর নভেম্বরে।
- চলো একবার ঘুরে আসা যাক। তার আগে আরেকটা তথ্য। এখন কার সঙ্গে দহরম-মহরম চলছে নিরুপমার?
হেসে দিলো হাসিব।
-'সুইট জেন্ডার' নামের একজন তাকে বেশ পটাচ্ছে। নিরুপমা প্রশ্রয়ও দিচ্ছে। কিন্তু তার পক্ষপাত হেমন্তের দিকে। হেমন্তও কবিতা লেখে। নিরুপমা তার ওখানে কবিতা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছে দেখা গেল। দুজনের ছোট্ট একটা তর্ক মতো হয়েছিল। তারপর নিরুপমা সারেন্ডার করে হেমন্তের ভক্ত বনে গেছে। দুটো কবিতা উতসর্গ করেছে তাকে। আইপি ট্র্যাক করে জানা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার ছাত্র। বাবা সেখানকার অধ্যাপক। ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টারেই থাকে।
- হুমম। হাতে সপ্তাহখানেক সময় আছে অবশ্য। নিরুপমার সঙ্গে দেখা করাটাই জরুরি। জাস্ট আ সোশাল কল। তারপর হেমন্ত উদ্ধার করা যাবে।
আইজুদ্দিন কিভাবে এক সপ্তাহর ডেডলাইন দিলেন মাথায় ঢুকল না হাসিবের। কিন্তু তর্কে গেল না।
ছয়.
স্যার সৈয়দ রোডে মাঠের পাশে তিন তালা বিল্ডিং। নিচে বড় সাইনবোর্ড। সকাল এগারোটার মতো বাজে। হাসিবকে সঙ্গে নিয়ে গেট পেরুলেন আইজুদ্দিন। দারোয়ান পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। নিচতলা ওয়ার্কশপ। মেয়েরা হাতের কাজ শেখে এবং করে। থাকে তেতলায়। দোতলায় অফিস। কাউন্সিলররা ওখানেই বসেন। সিড়ি ভেঙে ওঠার পর হাতের ডান দিকেই কাউন্সিলিং রুম। মেয়েরা নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলে এখানে। চারজন কাউন্সিলর, যার দুজন মেয়ে। একজন অধ্যাপক অন-কল আসেন। রুমে নক করতেই দরজা খুলে দিল আয়া মতো একজন। 'কারে চান?'
'আমরা ডাক্তার নাজমা হাসানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি', উত্তর দিল হাসিব।
-আফায় তো নাই। আফার বিয়া শুক্কুরবার। হ্যায় তো ছুটি নিছে।
কথাটা শুনে থমকে গেল দুজন।
'কার সঙ্গে কথা বলছো সালমা খালা'- সুরেলা কণ্ঠে কেউ বলে ওঠে পেছন থেকে। 'আপনারা?' বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় আগন্তুকদের দিকে।
পরিচয় দিল হাসিব। নিজের এবং আইজুদ্দিনের। ভদ্রমহিলা গদগদ চোখে তাকালেন অধ্যাপকের দিকে, 'স্যার আপনার লেখা আমি প্রচুর পড়েছি। আমার কোর্সে ছিল। আমি শায়লা হক। কাউন্সিলর। আসুন, বলুন আপনাদের কি সাহায্য করতে পারি।' ত্রিশ বা তার একটু বেশি হবে বয়স। বেশ ধর্মভিরু বোঝা গেল। মাথায় স্কার্ফ। যদিও ঘুরতেই কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল দেখা গেল। কপালে দাগ পড়েছে।
বসলেন আইজুদ্দিন। চুপচাপ। পাশ থেকে হাসিবই মুখ খুলল, 'আমরা নাজমা হাসানের ব্যাপারে একটু জানতে এসেছি।'
- কি হয়েছে নাজমার? ওর তো বিয়ে! এ শুক্রবারেই। ছেলেও ডাক্তার। এমডি। বিয়ের পর দুজনেই চলে যাওয়ার কথা বাইরে।
'বিয়েটা সম্বন্ধ করেই তো হচ্ছে, নাকি?' জানতে চাইলেন আইজুদ্দিন।
- হ্যাঁ। একটু টেনে বললো শায়লা। 'ছেলে ওর কাজিন। প্রেম না থাকলেও বিয়েটা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা।'
'আচ্ছা! নাজমা লেখালেখি করে নাকি?' বলেই একটা কবিতার বই তুলে নিলেন টেবিলে রাখা বইয়ের স্তুপ থেকে। ওপরেই ছিল। 'নিরুর জন্য পঙক্তিমালা'। লেখক দীপ্র হাসান।
'সেটা তো জানি না। আমি আসলে ওকে চিনি বেশিদিন হয়নি। এখানে জয়েন করার পরই পরিচয়। বইটা অবশ্য নাজমার। ওর সব কিছু আমার টেবিলেই রাখে।'
আড়চোখে সামনে রাখা মোবাইলটার দিকে তাকাল হাসিব। সাধারণ সেট। নোকিয়া ১৬১০। আড়াই হাজারের বেশি হবে না দাম।
'কিন্তু নাজমা হঠাত এমন কি করেছে যে আপনারা তাকে খুঁজছেন?' উদ্বেগ নিয়েই বলল শায়লা।
'আপনি যতটা গুরুতর ভাবছেন তেমন কিছুই না', বলে উঠলেন আইজুদ্দিন। 'আচ্ছা ওর কম্পিউটারটা দেখা যাবে?'
'ওই তো পাশের টেবিলেই বসে নাজমা। সারাদিন চ্যাটিং। বিরক্ত হয়ে আমি ল্যাপটপ ব্যবহার করা ধরেছি।' সামনে বন্ধ থাকা কালো বাক্সটা দেখিয়ে দিল শায়লা।
হাসিব বসে গেল। খুলল। যা যা দেখা দরকার দেখে নিল। আইজুদ্দিন এবার শায়লাকে বললেন, 'আমাদের এই সাক্ষাতকারটা দয়া করে গোপন রাখবেন। আগেই বলেছি তেমন কোনো ঝামেলার কিছূ হয়নি। বরং আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা দিন। প্রয়োজনে আমরা যোগাযোগ করব।'
-লিখুন। জিরো ওয়ান সেভেন ওয়ান সিক্স..’
শুনে গেল হাসিব। নিরুপমার প্রতিটা নাম্বার ওর মুখস্ত। এটা রেকর্ডে নেই।
হেমন্তের সঙ্গে সাক্ষাতটা হলো বেশ চমকপ্রদ। পুলিশের গাড়ি দেখে দৌড় দিয়েছিল। পরে ধরে আনা হয়েছে। দৌড়ের কারণ জানালো বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাম্প্র্রতিক অবস্থা। ও ভয় পেয়েছে পুলিশ ওকে ধরে নিতে এসেছে ভেবে। অল্প বয়স। তেইশের বেশি হবে না। কিন্তু কথাবার্তা চল্লিশের মতো। প্রচুর পড়াশোনা করে বোঝা গেল। নিরুপমার কথা বলতেই একটু থমকে গেল। তারপর যা যা প্রশ্ন করা হলো বলে গেল। এ পর্যায়ে এসে আইজুদ্দিন একটু আলাদা কথা বলতে চাইলেন ওর সঙ্গে। দুজনের ঘণ্টাখানেক সিটিংটা হাসিব কাটিয়ে দিল চা সিগারেট খেয়ে। জাম হয়ে আছে মাথাটা। ফেরার ঠিক আগে এসএমএস এল হেমন্তের সেলে। পড়ে আস্তে করে আইজুদ্দিনের দিকে বাড়িয়ে দিল সে। পড়লেন, তারপর নিজের ফোন বের করে একটা কল করলেন। মুচকি হেসে ঢুকিয়ে রাখলেন পকেটে।
সাত.
রাত ৯টা। গুলশানের একটা রেস্ট হাউজ। ৩১২ নাম্বার রুমে বসে ঘামছে হেমন্ত। এসির কনকনে হাওয়াও তার ঘাম শুকোতে দিচ্ছে না। আলাভোলা ছেলে, স্পষ্টতই নার্ভাস। তার পাশে আধো আঁধারে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন আইজুদ্দিন। বারান্দার দিকে দরজার পাশে হাসিব। প্রত্যাশিত এসএমএসটি এসেছে। এসেছে নিরুপমা।
নক হতেই দরজা খুলে দিল হেমন্ত। 'ব্লগের কেউ জানে না তো' বলে রিনরিনে গলাটা ভেসে এলো। 'ইউ লুক সো সেক্সি..' এ পর্যায়েই লাইট জ্বেলে দিল হাসিব। 'ওকে, নিরুপমা অর হোয়াটয়েভার ইউর নেইম ইজ। নড়াচড়া করবেন না একদম। হাত ওপরে।' বেরেটার মাজলটা ঠিক মুন্ডু বরাবর তাক করে রেখেছে।
শায়লা হককে চেনার কোনো জো নেই। লাল টকটকে লিপস্টিক। আইল্যাশ আর চিকমিকিতে সারা মুখে একটা বিকট ভাব। সেই সঙ্গে পোষাকটা আরো উৎকট। নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা প্রবল। তারপরও সবমিলিয়ে লাস্যময় ভাবটা একদমই ফোটেনি। হেমন্তর অবশ্য তাকে আধারেই নিরাবরন করার শর্ত ছিল ম্যাসেজে। চোখেমুখে একটা উদভ্রান্ত ভাব। 'তুমি পুলিশ ডেকেছো! তুমি পুলিশ ডেকেছো!! তোমরা পুরুষরা সব বেইমানের জাত, সব বেইমান' হিস্টিরিয়া গ্রস্থের মতো চিতকার করতে লাগল সে। তার আগে হাতকড়া গলিয়েছে হাসিব। হ্যান্ডব্যাগটা তুলে নিলেন আইজুদ্দিন। খুঁজতেই পেয়ে গেলেন সেখানে যা যা থাকার কথা। সার্জিকাল স্কালপেল, স্টিলের নিডল। এর বাইরে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট। মোবাইল ফোন। বড় কর্ড।
আট.
'প্রাথমিক কিছু সূত্রেই বোঝা যাচ্ছিল খুনী মেয়ে। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার কোনো জো ছিল না। এক পর্যায়ে তুমি দুজন খুনীর ব্যাপারে সন্দেহ জানিয়েছো। আমাদের এই কারেন্ট সিরিয়াল কিলিংয়ে একটা ব্যাপার তুমি খেয়াল করেছো কিনা জানি না, খুনের সময়সীমা। দুটো খুনের মধ্যেকার ফারাক। ঠিক ২৮ দিন পরপর খুন হচ্ছে। এই ২৮ দিন একটি বিশেষ সময়সীমা। মেয়েদের ঋতুচক্র। খুনী তার রজঃস্রাবের সময়টাতেই ততপর হয়ে উঠেছে। তাই খুন ঠিক কবে হবে বা হতে যাচ্ছে এটা বের করা কঠিন কিছু ছিল না।'
বলে যাচ্ছেন আইজুদ্দিন। এবার নির্বাক ও মুগ্ধ শ্রোতা হাসিব।
-শায়লার এমন হয়ে ওঠার মোটিভ কি? খেয়াল করেছো কিনা ওর কপালে একটা দাগ। পুরো কালো নয় কিন্তু, কিছুটা নীলচে। ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে ওর আঙুলের গিট এবং কনুইয়েও আছে একইরকম দাগ। হাঁটু অবশ্য আগেই সংক্রমিত হয়। এটাকে বলে 'ব্লুজ সিন্ড্রম'। একটা হরমোনাল ডিসঅর্ডার। এতে মেয়েদের মেনুপজ টাইম এগিয়ে আসে, মেনস্ট্রুশনও খুব পেইনফুল হয়। ওর ইন্টারমিডিয়েট স্টেজ চলছিল। এ পর্যায়ে সেক্সুয়াল আর্জ বেড়ে যায় এবং সঙ্গমে তীব্র ব্যাথার কারণেই সঙ্গীকে খুন করার ইচ্ছে জাগে। ব্লুজ সিন্ড্রমে চুল পড়ে যায়। দেখেছো তো মাথায় একটা স্কার্ফ পড়ে শায়লা। ওর মাথার চুল আসলে ন্যাচারাল উইগ। তুমি ভিক্টিমের পাশে ব্লাড স্টেইন আর চুল পেয়েছো। স্টেইনের সঙ্গে শায়লার ডিএনএ মিলবে। চুলের সঙ্গে মিলবে না। তোমার কনফিউশনের এটাই কারণ। লেট স্টেজে এলে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত শায়লা। সে ক্ষেত্রে খুনের সংখ্যা তার পিরিয়ডের সময় বেড়ে যেত।
পুরো ব্যাপারটাকে সাইকো-সোমাটিক ডিসঅর্ডারও বলতে পার। শায়লা যথেষ্ট সুন্দরী নয়। মেধাবী সন্দেহ নেই। হয়তো পড়ার জন্য চুল বাধার সময় পায়নি। এই মেঘে মেঘে বেলা হতেই সমস্যার শুরু। বান্ধবীদের হয়তো ভালো বিয়ে হয়েছে, তার পাত্র জোটেনি। কিংবা জুটলেও হয়তো তার অতিরিক্ত বাছাবাছিতে গা উজাড় অবস্থা। সম্ভবত সে সেতু বন্ধনে আগে রেজিস্টার্ড হয়েছিল। নাজমার ছবিটা সে হুট করেই ব্যবহার করেছে। ভিক্টিমদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে নিরুপমা নামেই। প্রত্যেক ভিক্টিমের সঙ্গেই তার একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু শায়লা জানত তার সঙ্গে মুখোমুখি হলে সেটা টিকবে না। এটাই ওর মধ্যে স্পিট পার্সোনালিটির জন্ম দিয়েছে। হেমন্তের সঙ্গে দেখা করার সময়ই বুঝেছ সে কি ধরনের পোষাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাইত। সবাইকে উত্তেজিত করার পরই সে তার আসল রূপ দেখাতো। আর সেই দেখে ফেলার পর চোখ উপড়ে নেওয়ার পালা। তার আগে স্টিলের সিরিঞ্জটা ঠিক মেডুলা অবলঙ্গাটা বরাবর ঢুকিয়ে প্যারালাইজড করে দিত ভিক্টিমদের। ছেলেরা মেয়েদের ভোগের সামগ্রী ভাবে- এমন একটা রাগও কাজ করত যখন সে তাদের স্কালপেল দিয়ে স্ট্যাব করত। সবই তলপেটে।
তোমার লিংক ধরে আমি সারারাত পড়ে গেছি নিরুপমার ব্লগ। প্রতিটি কমেন্ট অ্যানালাইজ করেছি। তার লগিং টাইম দেখেছি। ল্যাপটপের কথা বলায় আমার একটা অঙ্ক মিলে গিয়েছিল। ব্লুজ সিন্ড্রমের রোগী রাতে ঘুমাতে পারে না। সারক্ষণ একটা ফ্যান্টাসি ঘিরে থাকে তাদের। নিরুপমা ওরফে শায়লা লেখালেখিতে সেই ফ্যান্টাসিকে অনুদিত করত। হেমন্তের ওখানে এসএমএস আসার পর আমি শায়লাকে ফোন করেছিলাম। তার নম্বর বন্ধ পেয়েছি। বোঝা যায় সে একাধিক সিম ব্যবহার করে। এবং সম্ভবত এসএমএস ছাড়া সে কারো সঙ্গে কথা বলত না। বললেও তার নির্ধারিত সময়েই।
মোটামুটি এই হলো মামলা। কেস ক্লোজড। বাকিটা তুমি সামলাও।'