পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। আমাদের যে পাঁচটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে পোশাক রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। খাদ্যের পরেই পোশাকের চাহিদা। এ পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে দেশের প্রধান রপ্তানি আয় হয় পোশাক খাত থেকে। এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ। এ পোশাক শিল্পে আবার দুটি ভাগ রয়েছে, একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি অন্যটি বায়িং হাউস। বায়িং হাউসগুলোর কাজ হলো বিদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে কমিশনের বিনিময়ে অর্ডার এনে তা দেশের ফ্যাক্টরিগুলোতে দেয়া এবং সময়মতো সেই পোশাক আমদানিকারকদের পৌঁছে দেয়া। আমাদের আজকের সাফল্যের গল্পে বায়িং ব্যবসায় সফল হয়েছেন এমন দুজন ব্যক্তি মোক্তার হোসেন জাহাঙ্গীর এমডি; ফ্যাশন এক্সপ্রেস ও মোঃ মমিনুল হক একজিকিউটিভ ডিরেক্টর; ফারইস্ট টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লোদিংয়ের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন সাইফুল ইসলাম শান্ত।
মোক্তার হোসেন জাহাঙ্গীর ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষার জন্য ইতালিতে যান। বাবার কন্সট্রাকশন ব্যবসা ছিল তার পরও ১৯৮৩ সালের দিকে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেন। কিন্তু উপযুক্ত জনবল ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে বন্ধ করে দেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। ইতালিতে পড়াশোনার জন্য যাওয়ায় সেখানে পরিচয় হয় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে। ইতালিয়ান ভাষাটাও রপ্ত করে নেন খুব সহজে এবং তাদের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে রপ্ত করে নেন। এরপর দেশে ফেরা ও ইতালি যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন কিছুদিন। ২০০০ সালে কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা বায়িং হাউস প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পার্টনারদের সঙ্গে ব্যাটে-বলে না মেলায় ২০০৪-এর প্রথম দিকে নিজেই শুরু করেন 'ফ্যাশন এক্সপ্রেস' নামে একটি বায়িং হাউস। বর্তমানে তিনি এ বায়িং হাউসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তার ব্যবসায়িক পার্টনার স্ত্রী মাটির্না মেনেজেল্লো। যিনি ইতালিয়ান। ২০০০ সালে মোক্তার হোসেন জাহাঙ্গীর বিয়ে করেন মার্টিনাকে। সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে মোক্তার হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আমার কাছে এ ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই হলো "টাইমিং" এবং "ফলোআপ"। এ বিষয়টা মেনে চললে এ বায়িং ব্যবসা কখনো মরবে না এবং উন্নতি করতে পারবে খুব সহজে। আমরা যে টাকাটা বিনিয়োগ করবো তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সময় ও ফলোআপ করা। এর সঙ্গে কমিটমেন্ট থাকলে টাকা এমনিতেই চলে আসবে। আমি মনে করি, মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট ঠিক রাখলে সে আমার সঙ্গে অবশ্যই থাকবে। এখানে মিথ্যা কথা বলা একেবারেই উচিত নয়। একমাত্র জীবন বাঁচানো ছাড়া মিথ্যা বলা ঠিক নয়। আমি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হয়েও সারাক্ষন সময় মেইনটেইন করি। এখন আমি যদি চিন্তা করি, আমি তো মালিক একটু দেরি করে অফিসে গেলে তো কোনো সমস্যা হবে না, তাহলে আমার প্রতিষ্ঠান সফল হতে পারবে না। আমাকে আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে এবং সবার কাজের খোঁজখবর নিতে হবে প্রতিদিন।
আমার ব্যবসা যেহেতু ইতালিকে কেন্দ্র করে তাই সে দেশে থাকাতে আমার অনেক বেশি সহায়ক হয়েছে ব্যবসার ক্ষেত্রে। আমি সবসময় ইতালিয়ানদের সঙ্গে চলাফেরা করতাম। এর ফলে তাদের দেশের ভাষা আমি খুব সহজে শিখে যাই। এখানে একটি কথা বলে রাখি, ইতালিয়ানরা কিন্তু বেশি ইংরেজি পারে না। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা বেশি পছন্দ করে এবং বাইরেও তা প্রয়োগ করে। ফলে আমার সঙ্গে তাদের কমিউনিকেশনটা অনেক ভালো হয়। এতে আমার কাজের অর্ডার পেতে অনেক বেশি সহায়ক হয়। এ জন্য আমি মনে করি, কেউ যদি বিদেশিদের নিয়ে কাজ করতে চায় তাহলে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি শিখে নিলে অনেক বেশি সহায়ক হয় ব্যবসার ক্ষেত্রে।
নতুন কেউ যদি এ ব্যবসা শুরু করতে চায় তাহলে আমি বলবো তাকে অবশ্যই কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে হবে। তাকে অবশ্যই জানতে হবে একটা পোশাকের নেট খরচ কতো পড়বে। আমাদের এ ব্যবসার ভাষায় একে বলে মার্চেন্ডাইজিং। এ মার্চেন্ডাইজিংটা ভালো করে বুঝতে হবে। যদি কেউ মনে করে, আমি তো মার্চেন্ডাইজার রেখে কাজ করবো তাহলে ভুল হবে। নিজে না জানলে অন্যের ভুল ধরা যায় না। এটা জানার জন্য কিছু কোর্স আছে, তা করে নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্নি করতে হবে। এ কোর্সগুলো করা থাকলে একটা পোশাকের সব খরচ বের করা সম্ভব খুব সহজে এবং সে ব্যবসাও ভালো করতে পারবে।
আমার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র হলো সৎ থাকা। সঙ্গে অর্থ সাপোর্ট থাকলে সফল হওয়া যায় সহজে। এর সঙ্গে কমিটমেন্ট, শ্রম ও ফলোআপ থাকতে হবে। কর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের ভুল হলে শিখিয়ে দিতে হবে। কারণ ও যদি আমার মতো জানতো তাহলে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো না। ও নিজেই একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারতো এটা মনে রাখতে হবে। আমার কাছে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যেহেতু কর্মীর বিষয়টি চলে এসেছে, আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি বার্ষিক ঈদ বোনাস, মেডিক্যাল চেকআপ, ইনসেন্টিভ, লোন, ছাড়াও আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কারণ আমি মনে করি, একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মীরাই প্রাণ। তারা না থাকলে আমার এ প্রতিষ্ঠান চলতো না। যাদের মাধ্যমে আমি অর্থ আয় করছি, সেখান থেকে কিছু অংশ দিতে তো আমার আপত্তি নেই। এতে তারা আরো উৎসাহ নিয়ে কাজ করে এবং ফলাফল ভালো হয়।
যারা বায়িং হাউসে চাকরি করতে চায় তাদের গার্মেন্টস ও বায়িং হাউসের কাজ সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা উচিত। এর কাজ শুরু করার পর প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই শেষ করতে হবে। তাহলে সেই কর্মীকে বায়িংয়ের মালিকরা খুঁজে নিয়ে আসবে। আর একটা বিষয় থাকতে হবে- কাজের সমাধান দেয়ার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। শুধু সমস্যার কথা বললেই হবে না। সমস্যা সমাধান করে তারপর এসে বলতে হবে আমি এভাবে কাজ করেছি এটা ঠিক আছে কি? এভাবে কাজ করলে সে অনেক ভালো করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ হলো- এ বায়িংয়ের সঙ্গে রিলেটিভ সবকিছু ধীরে ধীরে করবো এবং সেই লক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশে হোম টেক্সটাইলের অনেক চাহিদা রয়েছে, এটা নিয়ে আমরা ভাবছি। হয়তো সামনে কাজ শুরু করবো।
আমাদের দেশের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় সেক্টর এ গার্মেন্ট শিল্প। ভবিষ্যতে আরো অনেক এগিয়ে যাবে এবং হাজারো হাজার মানুষের জীবিকার উৎস হবে। তাই এ শিল্পকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করি। শুধু সরকারি কিছু পদক্ষেপ গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। ঠিকমতো বিদ্যুৎ পেলে এবং সুতার সঠিক উৎপাদন হলে এ শিল্প বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দেবে, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
ফারইস্ট টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লোদিংয়ের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে। আমার ভাই এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করতাম। যখন দেখলাম মাত্র দুই বছরে এ প্রতিষ্ঠান ভালো একটা স্থানে চলে গেছে তখন আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখানে জয়েন্ট করি ২০০৫-এর দিকে। আমাদের নিজস্ব একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিও আছে। আমরা মূলত নিটের কাজ করে থাকি। নিট মানে হলো গেঞ্জি জাতীয় কাপড়। সামনে ওভেন ও সোয়েটারেও যাবো, তার আগে উপযুক্ত একটা টিম তৈরি করতে হবে। আমার কাছে কমিটমেন্ট সাফল্যের অন্যতম একটি শর্ত। যদি কমিটমেন্ট ঠিক না রাখি তাহলে সফল হওয়া যাবে না। আর গার্মেন্ট সেক্টরে টুকটাক কিছু সমস্যা থাকেই, কারণ আমাদের অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তারপর কর্মীর আসা-যাওয়া তো থাকেই।
যদি কেউ বায়িং হাউস দিতে চায় তাহলে তাকে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। যেহেতু আমাদের কাজই হলো সম্পর্ক রক্ষা করে কাজ করা তাই এখানে কমিটমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বায়ারদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা প্রয়োজন এবং ক্যালকুলেশন ঠিক করতে হবে। যদি একটা কাজ করে হাতে কিছু না থাকে তাহলে তো সে ব্যবসা চলবে না। তাই পোশাকের সঠিক খরচ যাচাই করতে জানতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি গার্মেন্ট সম্পর্কে তার অনেক বেশি ধারণা থাকতে হবে। এ জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে হবে। তাহলে সে অবশ্যই ভালো করতে পারবে বলে আমার ধারণা।
আমার কাছে সাফল্যের মূলমন্ত্রই হলো বিশেষ করে এ বায়িং ব্যাপারে, কমিটমেন্ট ঠিক রাখা, সৎ হওয়া, একটা লক্ষ নির্দিষ্ট করা। এগুলো থাকলে সফল হওয়া সম্ভব।
আমাদের এখানে নতুনদের কাজে জয়েন করানোর পরপরই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের ট্রেনিং দেয়ার পর একজন অভিজ্ঞ কর্মীর সঙ্গে কিছুদিন কাজ করানোর পর তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর যারা এ কাজে আগ্রহী তাদের বলবো, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা খুবই প্রয়োজন এ সেক্টরে। এর জন্য কিছু কোর্স করা যেতে পারে। অথবা কোনো গার্মেন্টস এ ইন্টার্নি করা যেতে পারে।
আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গার্মেন্টস ফেক্টরি এবং বায়িং অফিস একই সঙ্গে আনা। এবং ভালো একটা টিম গঠন করে অন্য সেক্টরেও কাজ করা ও সাফল্য ধরে রাখা। এ লক্ষ নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রয়োজন যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা : বায়িং হাউসগুলোর যেহেতু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির সঙ্গে কাজ করতে হয় তাই ফ্যাক্টরির কাজের বাধা হলে এর প্রভাব বায়িং হাউসেও পড়ে। ফ্যাক্টরির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা বিদ্যুৎ। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে অনেক ফ্যাক্টরি চললেও কস্টিং অনেক বেড়ে যায়। ফলে দেশের বায়িং এবং ফ্যাক্টরিগুলোর লাভের একটা অংশ চলে যায়। তাই এ পোশাক শিল্পকে ধরে রাখতে হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও সরকারের কিছু সাহায্য পেলেই আরো অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন বায়িং ব্যবসায়ীরা।
[তথ্যসূত্র : দৈনিক পত্রিকা]
বাংলাদেশের গার্মেন্টস বিষয়ক দুটি বড় সংগঠনের ওয়েবসাইট। এই সাইট দুটি একটু স্ট্যাডি করতে পারেন।
http://www.bgmea.com.bd/
http://www.bkmea.com
• নিজের হবে বায়িং হাউস
আমাদের দেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এ সুযোগে বিদেশি ক্রেতার কাছে দেশের তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য অনেকেই বায়িং হাউস দিচ্ছেন। বর্তমানে দেশে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত বায়িং হাউসের সংখ্যা ৯১১টি এবং বিজিবিএ’র ১৭৯টি। এ দুই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন বায়িং হাউস রয়েছে প্রায় ৮ শত। অর্থাত্ সব মিলিয়ে দেশে বায়িং হাউসের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। চাইলে আপনিও পুঁজি বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারেন বায়িং হাউসের ব্যবসা। মৌনতা বায়িং হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে আগামীতে বায়িং হাউসের ক্ষেত্রে একটি শিল্প বিল্পব ঘটবে বলে আশা করা যায়। কেননা তরুণদের এ পেশার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।
বায়িং হাউস কীবর্তমানে দেশে পোশাক তৈরি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। বিদেশ থেকে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সরাসরি কোনো তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তারা পণ্য কিনতে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়। দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে তাদের মধ্যে চুুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধরনের পণ্য সরবরাহ করার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকেই বায়িং হাউস বলে।
জানতে হবে নিয়মবায়িং হাউস দিতে হলে এ ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে। লাগবে এ ব্যবসার বৈধ সনদ। এ জন্য প্রথমেই ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। এরপর বিজিএমইএ-এর সদস্যপদ পেতে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র বিজিএমইএ থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। আবেদন করার পর তদন্ত শেষে সদস্য হিসেবে একটি সনদপত্র দেবে বিজিএমইএ। আবেদন পত্রের সাথে ট্রেড লাইসেন্সের কপি, মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল বা অংশীদারি দলিলের কপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, ভাড়ার চুক্তিপত্র বা ক্রয় দলিল, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের কপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র (যদি থাকে) এবং বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ার্ক পারমিট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে স্বাক্ষরসহ জমা দিতে হবে। বিজিএমইএ কর্তৃক বায়িং হাউসের জন্য নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে এক বছরের সদস্য ফি আরও ৮ হাজার টাকা। বিজিএমইএ-এর নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব নাম্বারে এ টাকা জমা দিতে হবে। তবে সদস্যপদ নবায়নের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সহযোগী সদস্য হিসেবে এক বছরের জন্য সনদ দেওয়া হয়। ফলে এক বছর পর সনদ নবায়ন করে নিতে হবে।আপনার বায়িং হাউস বিজিএমইএ-এর নিবন্ধনকৃত না হলে ব্যবসা করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। কারণ ক্রেতা চুক্তি করার আগে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে বিজিএমইএ-এর দ্বারস্থ হবে। সদস্য না হলে বিজিএমইএ আপনার সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবে না। তখন আপনি কাজটি না-ও পেতে পারেন। কারণ বিদেশি ক্রেতারা ব্যবসায়িক ঝুঁকির কারণে বিজিএমইএ-এর সদস্য নয়, এমন বায়িং হাউসগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে চায় না।
আরও যা প্রয়োজনবায়িং হাউসের জন্য অফিস নেওয়ার পর সাজিয়ে নিন। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দিন। বায়িং হাউসের আসল কাজ হল গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এ কারণে অফিসে টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার লাগবে। যে কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এ পেশায় আসতে পারেন। এ ব্যবসায় ভালো করতে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। দেশের তৈরি পোশাক সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। কারণ বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। একই সঙ্গে কম্পিউটার জানাটাও আবশ্যক। কারণ বায়ারদের সঙ্গে ই-মেইলের মাধ্যমেই যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। আনাম বায়িং হাউসের নিবার্হী পরিচালক সাদিক হোসাইন বলেন, এই ব্যবসাটা মূলত যোগাযোগ দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে। এর বাইরে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে গ্রাহককে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে কি না পরবর্তী সময়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
(অনলাইন থেকে সংগৃহিত)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৪০