১.
দূর থেকে যেটা দেখা যাচ্ছে তা একটা ঝাপসা মতো বস্তু। কখনো মনে হচ্ছে আকার আছে আবার কখনো মনে হচ্ছে আকার নাই। কখনো মনে হচ্ছে বস্তুর মতো কিছু একটা হবে, আবার মনে হচ্ছে এই বুঝি কিছুই নাই। পলকে পলকে মনকে ঘুরপাক খাওয়ায় বস্তুটা। তারপরও মনে হয় কিছু একটা হয়ত হচ্ছে ওখানে। জায়গাটা চোখে দেখা যায় - একটু দূরে। মেঘ ঘোলা হলে যে রং হয় তার রংও কিছুটা ওই রকম লাগল। আবার একটু পরেই মনে হলো অতদূর থেকে ওটা সাদা কিছু একটা হবে। ওদের বাসা থেকেই ওটা বের হতে দেখেছে অয়ন। এই দেখায় কোনো ভুল নাই। চোখের পলকে সাঁই করে মনে হলো কিছু একটা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
কি হতে পারে ওটা!
ওটা ওর দিকেই আসছে। ধুক রে ওঠে বুক। চমকে ওঠে সে ভয়ে।
একবার মনে হলো বস্তুটা দীর্ঘকায় হবে। প্রায় ছয় থেকে সাত ফুটের মতো হতে পারে। আবার মনে হলো অল্প কিছুটা লম্বা হবে, না চার-পাঁচ ফুট হতে পারে। কিন্তু এখন ওটাকে দুই তিন ফুটের মতো লাগছে। এর বেশি হবে না কোনো ভাবেই। ধীরে ধীরে দূর থেকে আরো কাছে চলে আসছে ওটা। স্টার ট্র্যাক বা সায়েন্স ফিকশনে দেখা যায়, ওই আকাশ থেকে কোনো উপগ্রহ তারার শরীর ছেড়ে ছুড়ে পৃথিবীর দিকে আসছে কিংবা দেখা যায় পৃথিবীতে হঠাৎ আবির্ভূত হয়েছে মঙ্গল থেকে কোনো এক এলিয়েন। যত সময় গড়াচ্ছে ওটার আকৃতিও একটু একটু করে বড় হচ্ছে। যার ফলে ওটার ঘোলা ঘোলা ভাব ক্রমেই কেটে যেতে শুরু করেছে। এখন একটু একটু সাদা সাদা ভাবটা আরো স্পষ্ট হতে থাকল। একসময় মনে হলো কোনো একটা কিছুর ভিতর দিয়ে সাদা আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে। আলোটা বস্তুর ভিতর থেকে বিকিরণ হচ্ছে। সাদা আলোর সেই দ্যুতি ওর ভিতর থেকে বের হয়ে চারপাশের অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে চারপাশ আলোকিত মনে হয়। ওটার সাদা আকর্ষণ আরো তীব্র হয়।
আবার মনে হলো আলো যেন বস্তুর শরীর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে এমনভাবে মাটিতে পড়ছে। চোখের পলকে তা আবার উধাও হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অবাক কা-! কীভাবে সম্ভব আলো গলে গলে সবুজ ক্ষেতের ভিতর এক্কেবারে হাওয়া হয়ে যাওয়া। সেগুলো খুব দ্রুত ধানের ক্ষেতের ভিতর মিলিয়ে যায়।
সবকিছু গোলমালে হয়ে গেছে একটা হঠাৎ পেয়ে বসা ভয়ে। শরীর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে এত চিন্তা এত অস্থিরতা। অয়ন কি করবে বুঝতে পারছে না।
এভাবে ক্রমেই একটু একটু সব সাদাভাব ওটার ভিতর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। তবুও বস্তুটার সাদা উজ্জ্বলতা কমে না। আরো কাছে আসছে ওটা। যত কাছে আসছে তার থেকে সাদা উজ্জ্বলতা ক্রমেই আরো বেশি ঠিকরে পড়ছে যেন।
প্রথম থেকে বস্তুটার এলোমেলো নড়াচড়া চোখে পড়ছিল। মনে হয়েছিল হেলেদুলে কেউ যেন এগিয়ে আসছে। একবার ডানে একবার বামে। বাতাস মোটা পাকানো দড়ির মতো ওটাকে ঘিরে দোলাচ্ছে। পাক দিয়ে দিয়ে দুলতে দুলতে আরো সামনে চলে এসেছে। একবার ডানে বস্তুটার বায়ের অংশ জোরে পড়ছে আবার একবার ডানের অংশ জোরে বায়ে পড়ছে। এতে ওটাকে পাকানো দড়ির মতো কিছু বলে মনে হলো।
ওর পা নেই, মাথা নেই। চোখ, কান, নাক, মুখ তো থাকার কথাই না।
অনেক দূর থেকে ওটাকে আসতে দেখেছে অয়ন। তাদের বাসা ভিতর দিয়ে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে ওটা আসছে তার দিকে। সে ক্ষেতের দক্ষিণ অর্থাৎ বাসার উল্টো দিক দিয়ে ফিরছিল। তাদের বাসার সামনে বড় রাস্তা। রাস্তার ওপারেই বিশাল মাঠ। এখন সেখানে ধান চাষ করা হয়েছে। সেই মাঠের তিন দিকে সমান চওড়া রাস্তা। একদিকে কলোনির পাচিল চলে গেছে। পাচিল ঘেষে একটা রাস্তা আছে অপেক্ষাকৃত কম চওড়ার, হাঁটার রাস্তা।
চলবে...
ছবি: ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭