কোন এক সময় এক ব্যক্তির আশ্রয় হলো পশু চামড়া ব্যবসায়ীর ট্যানারীর পাশে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। বেচারা প্রতিদিন অভিযোগ করতে থাকে। কিন্তু ট্যানারী মালিকের জবাব ছিল ওই একটাই, 'আর দুইটা দিন সময় দিন। ঠিক করে ফেলব।' এভাবে মাসের পর মাস চলে যেতে লাগলো। এক সময় অভিযোগ আসা বন্ধ হয়ে গেলো। জনৈক ব্যক্তির চামড়ার দুর্গন্ধে অভ্যেস হয়ে গেছে ততদিনে।
জাফর ইকবাল স্যার তার একটি লেখায় প্রশ্ন ফাঁসে বিচলিত হয়ে আবেগী এক শিরোনাম দিয়েছেন, 'দোহাই, আমাদের শিশুদের ক্রিমিনাল বানাবেন না।'
স্যারদের মতো দুই একজন আকুতি জানিয়ে যাবে তবে আমাদের একসময় এসব সয়ে যাবে। ওই ট্যানারীর পাশে বসবাসরত মানুষটির মতো। এক সময় আমরা অভিযোগ করতেও ভুলে যাব, নির্বিকার হয়ে যাব। এই চিন্তাটা স্রেফ আতংকিত করে!
এসএসসি, এইচএসসির পরে এবার জুনিয়র বোর্ড পরীক্ষাগুলোতেও প্রশ্ন ফাঁসের নেক্কারজনক ঘটনা ঘটলো। এর প্রভাব শুধু দুই একজন শিশুর উপরে পড়বে ভাবলে তা হবে মস্ত ভুল। একটি মেধা শুন্য জাতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা! অভিভাবকদের বিবেক বর্জিত প্রত্যাশার চাপ সবাইকে এই পথে ঠেলে দিচ্ছে। সায় দিচ্ছে অনেক অভিভাবক, অনেকে আবার নিজ উদ্যোগে ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে আত্মহননের হাতিয়ার! বিষাক্ত কাগজগুলো। ছোট ছোট শিশুরা শিখছে অন্যায় করার উপায়। এরা বড় হয়ে প্রশ্ন ফাঁসের আশায় থাকবে না তো কি করবে? এরা দুর্নীতি করবে না তো কারা করবে? এরা অপরাধী হবে না তো কারা হবে?
এই আঘাতটা অনেক বড় আঘাত, এই আঘাতটা আমাদের শিক্ষায়! জাতির মেরুদন্ডে। আর একটি জাতিকে ধ্বংস করতে তার শিক্ষা দীক্ষায় নষ্টামির বীজ বপণ করে দেয়াই যথেষ্ট। এই ঘৃণ্য চক্রান্তে সবাই সোল্লাসে মেতেছি, পরিণাম যে কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা চিন্তা করছেনা কেউ।
সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা কোলাপ্স হতে যাচ্ছে এসবের পরিণামে। ধ্বংস হতে চলেছে এগিয়ে যাবার, পরিশ্রম করে মেধাকে শানিত করার স্পৃহা।
গত শাসন আমল ও এবারের সময়টুকু মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সবচে বড় ব্যর্থতা আমার দৃষ্টিতে এটিই। শিক্ষামন্ত্রীর আচরণও ছিল যথেষ্ট শিশুসুলভ। প্রথমে তো তিনি প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিই অস্বীকার করলেন। এখনও মেনে নিতে চাইছেন না নিজেদের ব্যর্থতা, সিস্টেমের ব্যর্থতা! যদি সমস্যাকেই স্বীকার করা না হয় তবে সমাধান আসবে কি করে? শিক্ষামন্ত্রীর উচিত এ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করা। আর যদি তার সামর্থ্যে না কুলায় তবে যোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে পদত্যাগ করা।
আর ব্যবস্থা গ্রহণ মানে ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি বিরুপ আচরণ নয় মোটেই, যেটা এখন পর্যন্ত তিনি বক্তব্যে বা কার্যকলাপে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। সমস্যা সিস্টেমে, সমস্যা প্রশ্ন তৈরির ব্যবস্থায়, সমস্যা প্রশ্নের নিরাপত্তায়। এগুলোর সমাধান করতেই হবে শিক্ষামন্ত্রীর!
অন্যথায় তিনি শুধু সরকার কিংবা তার গদিকে বিপদে ফেলবেন না, ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবেন সমগ্র জাতির জন্যই।