আজকে যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলো, কালকেই সে বড় হবে, স্কুলে যাবে পড়াশোনা করতে, মিশবে হাজার মানুষের সাথে, মিলবে শত রকমের ভাবনার সাথে। সাইকোলজির মতে, আমাদের মস্তিষ্কে সবকিছুর একটি ছবি/ইমেজ থেকে যায়। যেটা থেকে আমরা চট জলদি বিষয়টি সামনে আসার পড়ে সিদ্ধান্ত বা মতামত জানাতে পারি। আবার সেই একই ভাবে, বিষয়টি জানা না থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। ধর্ষক কিভাবে ধর্ষক হয়? কেন হয়? সমাজের শিকরে লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা কি কখনও আদৌ করা হয়েছে?
ক) ভুমিষ্ট শিশুটি(হোক ছেলে বা মেয়ে) জন্মের পড়ে প্রথম যে নারীটিকে দেখে, তার মা, তাকে দেখে নারীর প্রতি তার প্রথম ইম্প্রেশন তৈরী হয়। তার মা কেমন? অনেক কিছু নির্ভর করে সেটির উপরে, শিশুটির মানসিকতা, চিন্তাধারা ঠিক করে দেয় অনেক সময় মায়ের বৈশিষ্ঠ্য।
মাকে যদি তার পিতার দ্বারা ডমিনেট্যাড্ একজন নারী হিসেবে দেখে, তাহলে নারীদের বিষয়ে তার প্রথম ধারনাটি ওটিই হবে। নারীরা ডমিনেট্যাড্। মা যদি বাবার মতই শিক্ষিত হয়, তার ধারণা হবে নারী শিক্ষায় সমান। মায়ের প্রতি কোমল/রুক্ষ আচরণকারী বাবাকে দেখে একজন পুরুষের একজন নারীর প্রতি এপ্রোচ শিখবে। এভাবেই স্বভাবে একটি একটি ইট বোনা হয় একটি মানুষের।
তাই মায়েদের শিক্ষিত ও গর্বিত একটি আদর্শ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, যা থেকে তার মেয়েটি/ছেলেটি শিখবে নারীর শক্তি কতটুকু, মর্যাদা কত বেশি। মাকে অবশ্যই অনুধাবন করার শক্তিটি দিতে হবে যে হ্যাঁ, নারীরা অধীনস্ত নয়, বরং তোমার আমার মতই মানুষ। লিঙ্গ নয়, মানুষকে মানুষ হিসেবে চিনতে ও তার মর্যাদা দিতে শিখতে পারবে সন্তান। ছেলে ও মেয়ে শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য কিন্তু মূল প্রভাবক কিন্তু মা। কারণ তিনিই সবথেকে আপন ও প্রভাব বিস্তারকরি চরিত্র হন একটি মানুষের জীবনে।
মনুষত্বের জাগরণ এভাবেই শুরু, পারিবারিক এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিতরা আসলে মানুশ্পুরি জানোয়ার হয়ে যেতে পারে।
খ) স্কুলে গিয়েই যদি প্রথমদিন আলাদা দিকে টেবিল দেখিয়ে বসতে বলা হয়, দুভাগ হয়ে ছিঁড়ে যায় মানুষের(নারী+পুরুষের) ব্যাপারটি, সেটি তখন হয়ে দাড়ায় নারী-পুরুষ।
সমাজের উচিত হবেনা এমন কোনো বদ্ধমুলতা ঢুকিয়ে দেয়া। কারণ শিশুরা শুধুই শিখতে থাকে, তাদেরকে যদি এভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ফারাকটা প্রথমেই ধরিয়ে দেয়া হয়, ভালো খারাপের বিচার করার আগেই সে একটা Pre-determined মানসিকতা তৈরী করে ফেলে এবং যেটি মেয়েদের সাথে তাকে কখনই সহজ হতে দেয়না। আর নারীদের থেকে দুরে থাকা তাকে আরো বেশি কৌতহলী করে তোলে ও নষ্ট চিন্তাভাবনার তৈরী হতে থাকে। এদের ভালো মেয়ে বন্ধুও অনেক সময় থাকেনা, তাহলে এরা কি করে জানবে মেয়েদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়? তাই বলব সহজ সম্পর্কের সহজাত শিক্ষাটি এখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত।
ঘ) তার বিনোদন, শৈশব থেকে কৈশোরে যে ধরনের বিনোদন সে গ্রহণ করবে তার অবস্যম্ভাবী প্রভাব থাকবে তার আচরণে, চলা ফেরায় ও কাজে।
বেড়ে ওঠার সময়, কি দেখছ, শিখছ, সমস্ত জীবনে তার দ্বারা তুমি প্রভাবিত হতে থাকবে, কথাতি মিথ্যে নয়। পর্ণ সাইটের ছড়াছড়ি, হিন্দি ফিল্ম/বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সবকিছুতে মেয়েদেরকে ভোগ্য পন্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ার জন্যে বিষয়টি “চোখে সয়ে গেছে।” আলাদা সংস্কৃতির আমরা কিন্তু নানাভাবেই এর কুতশিত রুপ দেখছি। পথে-ঘাটে মেয়েদের দেখা বা অসম্মানের দৃষ্টিতে তাকানো আর তার উপরে ঝাপিয়ে পড়ার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু সেই বোধ কিছু মানুশের মধ্যে জন্মায়ই না!! যা দেখছ প্রতিদিন, কি শিখছ তা থেকে? খারাপ টাই! তাহলে বর্জন নয় কেন?
আশে পাশের মানুষদের দদৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা সবসময়েই প্রভাব ফেলে। সমাজে যদি শক্ত প্রতিরোধ থাকে, গুরুজনেরা বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন এবং ঘৃণ্য মানসিকতার এসব মানুষদের যদি সমাজ খারাপ চোখে দেখে ও ঘৃণার প্রকাশ করে, মানুষ এ পথে যেতে চাইবেনা। অনেক সময়েই আমরা মেয়েটির উপরে দোষ চাপিয়ে শাস্তিও দিয়ে দেই!!!! যারা এমনটি ভাবতেও পারেন যে ধর্ষণের জন্যে একটি মেয়ে দায়ী, তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভাবা দরকার!
ঙ) সমাজ, নিয়ম, আইন পারিপার্শিক বিষয় এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তার প্রভাব।
সর্বোপরি কঠোরতর আইন ও তার নিয়মিত বাস্তব প্রয়োগ তৈরি করতে পারে সেই উদাহরণ, যা একজন পশুকেও শিউরে উঠতে বাধ্য করবে এই জঘন্য কাজ করার ক্ষেত্রে।
এগুলো ছিল দৃষ্টিকোন, যেগুলোর তারতম্য ঘটাতে পারে একটি ধর্ষণ মুক্ত সমাজ। যেখানে ধর্ম বা পোশাকের ভুমিকা খুবই সামান্য। সব সময়য় , মেয়েদের পোশাক নিয়েই কথা হয়, কিন্তু কে বানিয়েছে এই নিয়ম যে মেয়দেরকেই শরীর সামলে চলতে হবে? ধর্ম এবং তারপরে সমাজ, বেশিরভাগ সমাজই এই নিয়মের সাথে গিয়েছে। ফলাফল হচ্ছে, পুরুষরা হয়ে পড়েছে বড় বেশি লজ্জাহীন! আরও কোণঠাসা ও কনজারভেটিভ হয়ে ছেলেদের থেকে দূরে পালাচ্ছে মেয়েরা। শালীনতা ভাল গুন, কিন্তু না এটিকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব বা উচিৎ আর না এতে বাস্তবে কোন সমাধান হবে। নারী পুরুষের একে অপরকে প্রয়োজন। কিন্তু পাশবিক এই নিয়মে কারুরই কাউকে প্রয়োজন নেই। পোশাকের বিষয়ে কথা বলে যারা ধর্ষককে সমর্থন দেন, তারা কি কোনভাবে বলতে পারবেন কিভাবে একটি ৫/৪ বছরের শিশু এর নির্মম শিকার হয়? আরেকটি বিষয়, গ্রামাঞ্ছলের থেকেই বেশি খবর পাওয়া যায় এমন ঘটনার। তাহলে ওখানে তো কেউ অশালীন পোশাক সাধারনত পড়েনা। আর ওখানকার পুরুষরাও হয়ত গ্রামেই থাকে, যারা কিনা তথাকথিত “হট” পোশাকের “অত্যাচারে” অত্যাচারিত নয়। তবে কেন ধর্ষণ হয়?
উত্তর হল, আইন ও আইনের প্রয়োগে অপ্রতুলতা, সমাজের প্রতিরোধের অভাব, কুশিক্ষা ও পাশবিক মানশিকতা। পোশাক বা ধর্ম নিয়ে টাই কথা বলাই বোকামি!!
এখনি সময়, আসুন সমাজের সর্বস্তরে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, জোরালো আবেদন জানাই কঠোর আইন ও তার প্রয়োগের। আর সামাজিকভাবে একঘরে করে দেই এমন মানসিকতার মানুষদের সাথে।
অন্য কোন দেশের দিকে তাকিয়ে আপনি নিজেদের পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন না, মধ্য প্রাচ্চ্যে থাকিনা আমরা, আমরা ভারতের মতো না, না আমরা ইউরোপ এর অংশ। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদেরকে নিজেদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে। কোন দেশের সংস্কৃতির সাথে আমাদের কপি পেস্ট সম্পর্ক নেই, তাই আমাদের সমস্যা ও তার সমাধানের পথ আমাদের ধরন-ধারন বুঝেই করতে হবে।
পিতা-মাতাদের বলছি , আপনার সন্তানকে(হোক ছেলে বা মেয়ে) ঠিক ভাবে চলতে বলুন, সমাজে চলতে ছেলেটির যেমন মেয়েটিকে সম্মান করতে হবে, আপনার মেয়েটিকেও সম্মান করতে হবে সমাজের নিয়মকানুন। কারন শেষ পর্যন্ত আমরা মেয়েটিকেই “ভিকটিম” বলি। আপনার সন্তান ধর্ষক হলেই সেটি আপনার কাছে জাস্টিফাইড হতে পারেনা, ঠিক যেমন আপনার মেয়েটি ধর্ষিতা না হলেই আপনি সেটাকে নিয়ে না ভেবে থাকতে পারেন না! সমাজ এর সজ্ঞাটা এমন নয়, না এরকম মানুষকে সামাজিক বলা যায়।
“আর নয় ধর্ষণ,
ওদের করুন বর্জন।।”
Join us: http://www.facebook.com/groups/stoprape123
পরামর্শ দিন, আরো জানতে দেখুন: টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া,নরপশুদের নিঃশ্বাসে বিষাক্ত সমগ্র বাংলাদেশ,বাঙালী প্রতিবাদী হও ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮