গতকাল শুক্রবার রাতের ঘটনা। আজ শনিবার একটা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার কথা ছিল। তো বসে বসে পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন টা রেডি করছিলাম। সন্ধ্যা থেকেই ফেসবুকে পোলাপান পরের দিন ভার্সিটি তে না যাওয়ার জন্য হাজারটা কারণ দেখাচ্ছিল। যদিও তার কোনও কারণই ক্লাস মিস দেওয়ার মত গুরুতর না। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার বি এন পি কে গালিও দিচ্ছিল কেন হরতাল দিচ্ছে না এই জন্নে।
এরই মধ্যে রাত ১০ টার দিকে হটাত ঘোষণা আসল, শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টা অবরোধ। সাথে সাথেই যেন ফেইসবুকে একটা আনন্দের ঝড় বয়ে গেলো। আমি সেদিন হলে ছিলাম না, ছিলাম বাসায়। ফেসবুকেই জানতে পারলাম হলের সবাই নাকি আনন্দ মিছিল করেছে অবরোধ ঘোষণার কারণে। যাই হোক, সেটা তারা করতেই পারে। পড়াশুনার অনেক চাপ থাকলে হটাত করে যদি একটা অনাকাঙ্খিত ছুটি পাওয়া যায় তাহলে তার আনন্দ সবাইকে ছুঁয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন সেখানে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
।
।
।
আমি এমন একজনকে দেখলাম না, যে একটিবার চিন্তা করেছে আগামী ৭২ ঘণ্টা সারা দেশের জন্য কি ভয়াবহ দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। একটি মানুষকে দেখলাম না যে একবার ভেবেছে কত মায়ের বুক খালি হবে এই সময়ে। বরং সবাই উল্লাসিত, কারণ আগামীকাল তাকে ক্লাসে যেতে হবে না তাই!!! আত্মচিন্তা ও স্বার্থমগ্নতা আমাদের এতটাই নিমজ্জিত করে রেখেছে যে, দেশের অন্যতম সেরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও দেশের আসন্ন দুর্ভোগ আমাদের এতটুকু ভাবিত করে না!!! আমরা মহা খুশিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই, কালকে অবরোধ, ক্লাসে জাইতে হবে না। ফিলিং হ্যাপি!!!
যদি এখন ১৯৭১ সাল হত তাহলে কে জানে হয়ত এমন স্ট্যাটাসও দেখা জেত, "ইয়েস, যুদ্ধ শুরু হইছে, কালকে ক্লাসে জাইতে হবে না, এখন একটা ঘুম দিমু!!!!"
ইদানীং রাস্তাঘাটে প্রথম আলোর একটা বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিজ্ঞাপনে একজন কৃষকের ছবি আর তাতে লেখা, "যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ" । কথাটার সত্যতা যে কতখানি তা গতকালের পর থেকে খুব ভালভাবে উপলদ্ধি করতে পারছি। এই কৃষক আর শ্রমিকরা আছে বলেই বাংলাদেশ এখনও পথ হারায়নি। তথাকথিত শিক্ষিত আধুনিক মানুষ আর অমানুষ রাজনীতিবিদদের হাত থেকে দেশ টাকে তারাই এখনও বাচিয়ে রেখেছে!!
স্যালুট তাদের!!! সত্যিই "যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ" ।