বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের মানুষের অনেক আবেগের একটা জায়গা। হাজারো সমস্যার এই দেশে মানুষের মুখে একটুখানি হাসি ফুটাতে পারে যারা, সব সমস্যা ভুলে গিয়ে মানুষকে আনন্দের জোয়ারে ভাসাতে পারে যারা, সেই ক্রিকেটার আর ক্রিকেট ই যেন এই জাতির বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আগে যদিও বাংলাদেশ খেলতে নামলেই শুধু হারত, এমনও সময় গিয়েছে যে বাংলাদেশ টানা ৫ বছর কোনও ওয়ানডে জিততে পারেনি। কিন্তু এই দেশের ক্রিকেট পাগল মানুষ ক্রিকেটকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনি। চরম দুঃসময়েও পাগলা সাপোর্টারের মত সাপোর্ট দিয়ে গেছে দলকে। এখন সময় পাল্টিয়েছে। বাংলাদেশ এখন প্রতিনিয়তই হারিয়ে চলেছে বিশ্বসেরা দলগুলোকে। চলুন দেখে নেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিখ্যাত জয়গুলো।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিখ্যাত জয় নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নরদাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়। যেই জয় আমাদের ক্রিকেটকে এক লাফে অনেকদুর এগিয়ে দেয়। আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস পেতেও অনেকখানি সাহায্য করেছিল এই জয়।
এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে শাহরিয়ার হোসেনের ৩৯, আকরাম খানের ৪২ আর খালেদ মাহমুদের ২৭ রানের উপর ভর করে ২২৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে খালেদ মাহমুদের বোলিং তোপে মাত্র ১৬১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। টেস্ট খেলুড়ে কোনও দলের বিপক্ষে প্রথম আর বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয় পায় বাংলাদেশ।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর টানা ৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়বঞ্চিত থাকে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পেলে তাও ক্রমাগত হারের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। এর মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মত স্বস্তি নিয়ে আসে ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়। অনেকে হয়ত এই এই জয়কে বড় জয় বলতে অস্বীকৃতি জানাবেন । কিন্তু টানা হারের পর এই জয় বাংলাদেশের জন্য ছিল জয়ের চেয়েও বেশি কিছু।
প্রথমে ব্যাট করে হাবিবুল বাসারের ৬১, রাজিন সালেহর ৫৭ আর আশরাফুলের ৩২ বলে ৫১ রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৩৮ রান। জবাবে ২৩০ রানেই আটকে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ৩ উইকেট নেন তারেক আজিজ। বাংলাদেশ জেতে ৮ রানে।
এরপরের বড় জয়টি আসে বাংলাদেশের শততম ওয়ানডেতে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২২৯ রান। জবাবে ২১৪ রানেই আটকে যায় ভারতের ইনিংস। ১৫ রানের জয় দিয়ে শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টি আসে ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া করে ২৪৯ রান। জবাবে আশরাফুলের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ৪ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।
পরের বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালে বগুড়া তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত জয় পায় টাইগাররা।
এরপর আসে সপ্নের বছর ২০০৭। ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে দিয়ে সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানের বিশাল বাবধানে হারিয়ে আবারও ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় টাইগাররা।
২০০৮ সালের অক্টোবরে ঢাকায় নিউজিল্যান্ড কে প্রথমবারের মত ওয়ানডেতে পরাজিত করে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠে টাইগার বাহিনী।
একই বছর জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে তাদের মাটিতে ৩-০ বাবধানে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। যদিও বোর্ডের সঙ্গে দন্দের কারণে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়রা সেই সিরিজে খেলেননি।
২০১০ সালে ইংল্যান্ড কে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায় টাইগার বাহিনী। একই বছর অক্টোবর মাসে নিউজিল্যান্ড কে ৪-০ তে হোয়াইটওয়াশ করে ক্রিকেট বিশ্ব কে নিজেদের শক্তি আরও একবার জানান দেয় বাংলাদেশ।
২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে আবারো হারায় বাংলাদেশ, যদিও ২০০৭ সালের মত এবার পরের পর্বে যেতে বার্থ হয় তারা। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয়।
একই বছর অক্টোবর মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে মাত্র ৬১ রানে অল আউট করে বিশ্বকাপে ৫৮ রানের লজ্জার প্রতিশোধ নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে ৩০ ওভার বাকি থাকতে ৮ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা।
পরের বছর মার্চে এশিয়া কাপে স্বপ্নের মত পারফর্ম করে বাংলাদেশ। পরপর ২ ম্যাচে ভারত আর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।
নভেম্বর মাসে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে ৩-২ বাবধানে ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সর্বশেষ বড় জয়টি আসে এই বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাল্লেকেলে তে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে লঙ্কানদের পরাজিত করে টাইগাররা।
এই ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বড় জয়গুলো। যেভাবে বড় দলগুলোকে বাংলাদেশ নিয়মিত হারিয়ে যাচ্ছে তাতে করে বলা যায় সেই দিন হয়ত খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ টাও ছিনিয়ে নিয়ে আসবে। গুড লাক বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম