{রবীন্দ্রনাথ মানেই অন্যরকম ভাবনা,অন্যরকম গভীরতা। একেবারেই ভিন্ন কিছু অনুভুতি, পরিচিত কথা গুলোর ভিন্ন এক প্রকাশ ভঙ্গি। হঠাত করেই পেয়ে গেলাম কবিতা দুইটা, তাই শেয়ার করা। }
পুণ্যের হিসাব
সাধু যবে স্বর্গে গেল, চিত্রগুপ্তে ডাকি
কহিলেন, “আনো মোর পুণ্যের হিসাব।”
চিত্রগুপ্ত খাতাখানি সম্মুখেতে রাখি
দেখিতে লাগিল তার মুখের কী ভাব।
সাধু কহে চমকিয়া, “মহা ভুল এ কী!
প্রথমের পাতাগুলো ভরিয়াছ আঁকে,
শেষের পাতায় এ যে সব শূন্য দেখি–
যতদিন ডুবে ছিনু সংসারের পাঁকে
ততদিন এত পুণ্য কোথা হতে আসে!”
শুনি কথা চিত্রগুপ্ত মনে মনে হাসে।
সাধু মহা রেগে বলে, “যৌবনের পাতে
এত পুণ্য কেন লেখ দেবপূজা-খাতে।”
চিত্রগুপ্ত হেসে বলে, “বড়ো শক্ত বুঝা।
যারে বলে ভালোবাসা, তারে বলে পূজা।”
দুর্লভ জন্ম
একদিন এই দেখা হয়ে যাবে শেষ,
পড়িবে নয়ন-’পরে অন্তিম নিমেষ।
পরদিনে এইমতো পোহাইবে রাত,
জাগ্রত জগৎ-’পরে জাগিবে প্রভাত।
কলরবে চলিবেক সংসারের খেলা,
সুখে দুঃখে ঘরে ঘরে বহি যাবে বেলা।
সে কথা স্মরণ করি নিখিলের পানে
আমি আজি চেয়ে আছি উৎসুক নয়ানে।
যাহা-কিছু হেরি চোখে কিছু তুচ্ছ নয়,
সকলি দুর্লভ ব’লে আজি মনে হয়।
দুর্লভ এ ধরণীর লেশতম স্থান,
দুর্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ।