-"মা, আমি তোমাদের কাছে ফিরতে চাইছি, এবং আমার সাথে আমার একজন বন্ধু ও আসবে, তোমাদের কি তাতে কোন আপত্তি আছে?"
-"কেন আপত্তি থাকবে। মা-বাবা উত্তর দিলেন। বরং ওকে দেখে আমরা খুব খুশীই হবো।"
-"ও; তার সম্পর্কে তোমাদের আরোও কিছু জানানো উচিত।"-ছেলে উত্তর দিলো। "যুদ্ধের সময় সে খুব খারাপ ভাবে আহত হয়েছিল। মাটিতে পাতানো মাইন্ডের উপর পা দেওয়ায় তার এই দূর্ঘটনা ঘটে, তার একটি পা আর একটি হাত বোমার আঘাতে উড়ে গেছে। তার কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই। আমি চাই সে আমাদের সাথে থাকুক।"
-"শুনে খুব খারাপ লাগছে তার জন্য।- বাবা-মা উত্তর দিলো। "আমরা তাকে সাহায্য করবো, অন্য কোথায় তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেবো।"
- "না, মা, তাকে আমি আমাদের সাথে রাখতে চাই।"-ছেলেটি উত্তর দিলো।
- দেখ বাবা, তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কি বলছো। এরকম একজন পঙ্গু মানুষ আমাদের জন্য একটা বোঝা। আমাদের নিজস্ব একটা জীবন আছে, সেখানে অন্য কেউ সমস্যার কারন হোক আমরা কেউই তাই চাই না। আমি মনে করি, তুমি একাই বাড়িতে চলে এসো, আর তার কথা ভুলে যাও। সে তার নিজের মতো করে তার জীবন অতিবাহিত করবে।
সেই মুহুর্তে ছেলেটা ফোন রেখে দিলো। তার বাবা মা তার কাছ থেকে আর একটি বাক্যও শুনতে পেলো না।
কয়েক মাস পরে তাদের কাছে থানা থেকে এক পুলিশ ফোন করে বললো-
"তাদের ছেলে উঁচু দালান থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে। প্রাথমিক ভাবে তাদের মনে হচ্ছে, এটা আত্বহত্যা হতে পারে।"
এমন একটা ঘটনা শুনে বাবা-মা পাগলের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছুটে গেলেন, তাদের সন্তানকে সনাক্ত করার জন্য। তারা তাদের সন্তানকে চিনতে পারলেন, সাথে তারা আর একটা ভয়ংকর বিষয় বুঝতে পারলেন, যা তারা জানতেন না। তাদের সন্তানের একটা হাত আর একটা পা আছে।
আমরা অনেকেই এই গল্পের বাবা-মার মতো, আমরা তাদের কেই ভালবাসি যারা দেখতে সুন্দর অথবা সবসময় আমাদেরকে আনন্দিত করতে পারে; কিন্তু যারা স্বাভাবিক নয়, যারা আমাদের স্বাছন্দ দিতে পারে না, তাদেরকে আমরা পছন্দ করি না।
আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আমরা কয়জন মনে করেছি, সেই মহৎ আত্ব-ত্যাগীদের যারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, তাদের মূল্যবান অঙ্গ হারিয়েছেন চিরতরে, বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব।
আজ এই স্বাধীনতা দিবসে সকল শহীদ, এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম।