হযরত উমর (রা) এর শাসনকাল। আলা ইবনে হাযরমী চাইছিলেন ইরানের উপকূলবর্তী এলাকাগুলো ইসলামী শাসনের অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তার এই ইচ্ছার পথে একমাত্র বাধা ছিল পারস্য উপসাগর। তাই নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত উমর (রা) এর অনুমতি ছাড়াই নৌযান প্রেরণ করেন। কিন্তু মুসলমানরা পরাজিত হয়,কারণ একেতো তারা কখনো এর পূর্বে নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নি, অন্যদিকে খলিফার অনুমতি ছাড়াই এ অভিজান চালানো হয়। এই স্বেচ্ছাচারিতার কারণে হযরত উমর (রা) তাকে বহিষ্কৃত করেণ এবং তার এলাকাকে হযরত সাদ ইবনে আবি উয়াক্কাস (রা) এর অধীন করে দেন।
অপরদিকে আমির মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন সিরিয়া ও পশ্চিম জর্দানের গভর্নর। রোমান বাহিনীর সাথে প্রায় সময় উনার যুদ্ধ করতে হতো। আর রোমান বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য যে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীর প্রয়োজন ছিল তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি উমর(রা) কাছে একটি নৌবাহিনী সংগঠিত করার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু হযরত উমর (রা) কাউকেই নৌবাহিনী গড়ার অনুমতি দেননি। উনার মত ছিল, তখনও নৌবাহিনী গড়ে তোলার উপযুক্ত সময় হয় নি।
হযরত উসমান (রা) এর খিলাফতকালে আমির মুয়াবিয়া (রা) পুনরায় মুসলিম নৌবাহিনী গঠনের প্রস্তাব করেন এবং বারবার এ বিষয়ে হযরত উসমান (রা)কে অনুরোধ করতে থাকেন। হযরত উসমান (রা) এই শর্তে তার আবেদন মঞ্জুর করেন যে, যারা স্বেচ্ছায় এই বাহিনীতে প্রবেশ করতে চাইবে শুধু মাত্র কেবল তাদেরকেই নিতে পারবেন আমির মুয়াবিয়া (রা), যারা রাজি রাজি হবে না তাদের যেন বাধ্য না করা হয়।
তারপর ২৮ হিজরীতে সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাসের, গোড়াপত্তন ঘটে মুসলিম নৌবাহিনীর। আমির মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। প্রচণ্ড আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে এই নতুন নৌবাহিনী পরীক্ষামূলক আক্রমণ করে সাইপ্রাসে। সাইপ্রাসবাসী আমির মুয়াবিয়া (রা) এর কাছে সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়। তিনি ৭০০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে তাদের সাথে সন্ধি স্থাপন করেন।
এরপর সূচনা হয় নতুন এক যুগের। স্থাপিত হতে থাকে জাহাজ তৈরির কারখানা (দারুস সানাআ যা পরিচিত তারসানা নামে)। মুসলিম নৌবাহিনীর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত অন্য নৌবাহিনীগুলো। ভূ-মধ্যসাগর সবসময় ঘোলা থাকতো মুসলমান নৌবাহিনীর দ্বারা। ভূমধ্যসাগর, মারমোরা সাগর, ঈজীয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগরে কোন শক্তিই মুকাবিলা করতে পারতো না মুসলিম নৌবাহিনীর। কোন যুদ্ধজাহাজ ভুমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে পারতো না মুসলিমদের অনুমতি ছাড়া, ইউরোপীয় সম্মিলিত নৌবাহিনীগুলো ভয়ে পালিয়ে বেড়াতো মুসলিম নৌবাহিনীর ভয়ে, যেমন ছোট ছোট পাখি পালিয়ে বেড়ায় বাজপাখির ভয়ে। পৃথিবী অবাক হয়ে চেয়ে থাকল এই নতুন শক্তির দিকে-----------
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৫৩