জাহেলিয়াতের কাঁচামাল থেকে মানবতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ এই সুব্যাপ্ত ও সুগভীর ঈমান, এই মহাপ্রজ্ঞাপূর্ণ নববী শিক্ষা ও দীক্ষা এবং এই অলৌকিক গ্রন্থ আলকোরআন- যা চিরসজীব, যার বিস্ময় অনিঃশেষ- এবং অতুলনীয় ছোহবত ও সাহচর্য, এগুলোর মাধ্যমে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু মানবতাকে নতুন প্রাণ ও নতুন জীবন দান করলেন। মানবতার যে বিপুল অব্যবহৃত কাঁচা সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছিলো এবং কারোই জানা ছিলো না, এগুলোর গুণ কী এবং সঠিক ব্যবহারক্ষেত্র কোনটি, বরং জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশায় সব হারিয়ে যাচ্ছিলো, তিনি সেই কাঁচা মানবসম্পদে নতুন প্রাণ সঞ্চার করলেন; সুপ্ত সকল প্রতিভা জাগ্রত করলেন এবং চাপা পড়া যোগ্যতার বিকাশ ঘটালেন। প্রতিটি প্রতিভা ও যোগ্যতাকে তিনি যথাস্থানে নিয়োজিত করলেন। তখন মনে হলো জীবনের শূন্য ক্ষেত্রগুলো এত দিন এই সব প্রতিভা ও যোগ্যতারই অপেক্ষায় ছিলো। সব যেন প্রস্তর- মূর্তির মত নিষ্প্রাণ ছিলো, আর তিনি সেগুলোকে জীবন্ত মানবে রূপান্তরিত করলেন, কিংবা সব যেন মৃতদেহ ছিলো, আর তাঁর প্রাণস্পর্শে সেগুলো প্রাণ লাভ করলো এবং সমাজকে জীবনের বার্তা শোনতে লাগলো।
যারা নিজেরাই ছিলো অন্ধ এবং অন্ধকারে নিমজ্জিত, এখন তারাই মনবতাকে আলো দিয়ে পথ দেখাতে লাগলো। কোরআনের ভাষায়- ‘যারা মৃত ছিলো, অনন্তর তাদেরকে আমি জীবন দান করলাম এবং তাদেরকে নূর দান করলাম, যার দ্বারা তারা মানব- সমাজে পথ চলতে লাগলো, তারা কি হতে পারে ঐ ব্যক্তির মত যে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন অন্ধকারে, আর তা থেকে বের হতেই পারছে না!’ তাঁর নূরানী ছোহবত ও জ্যোতির্ময় সাহচর্য এবং হাকীমানা তারবিয়াত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষার গুণে ধ্বংসের কিনারায় উপনীত জাতির মাঝে এমন এক বিপ্লব সৃষ্টি হলো যে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এমন সব ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব হলো যারা সত্যিকার অর্থেই ছিলেন মানবতার বিস্ময় এবং ইতিহাসের অনন্য সম্পদ।
ওমর (রা), যিনি পিতা খাত্তাবের বকরি চরাতেন, আর তিনি তাঁকে অকর্মন্য বলে তিরস্কার করতেন, শক্তি ও সম্মন এবং মর্যাদা ও আভিজাত্যে যিনি কোরায়শের মধ্যম মানের ছিলেন, সমাজে ও সমবয়সীদের মাঝে যার আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য ছিলো না, সেই সাধারণ একজন ওমর হঠাৎ সারা বিশ্বকে আপন প্রতিভা, যোগ্যতা, গুণ ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, কায়সার ও কিসরার সাম্রাজ্য তছনছ করে তাদের রাজমুকুট ছিনিয়ে আনছেন এবং এমন এক ইসলামী সালতানাত গড়ে তুলছেন যা যুগপৎ উভয় সাম্রাজ্যের উপর বিস্তৃত, অথচ সুশাসনে ও সুব্যবস্থায় উভয় সাম্রাজ্যের উর্ধ্বে যার অবস্থান। পক্ষান্তরে তাকওয়া ও ধার্মিকতা এবং ইনছাফ ও সুবিচারের ক্ষেত্রে তো তুলনার কোন প্রশ্নই আসে না; এমনকি ছাহাবা কেরামের মাঝেও এসব বিষয়ে তিনি ছিলেন অনন্য।
খালিদ বিন ওলীদের কথা ধরুন; তিনি কী ছিলেন?! খুব বেশী হলে কোরায়শের উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবকদের একজন, স্থানীয় ও গোত্রীয় যুদ্ধে তার খ্যাতি ছিলো। সেই সুবাদে গোত্রপতিদের কাছে ছিলো তার আলাদা কদর, কিন্তু গোত্রীয় গণ্ডি পেরিয়ে আরব উপদ্বীপেও তার বিশেষ কোন পরিচিতি ছিলো না, সেই সাধারণ এক যোদ্ধা খালেদ বিন ওয়ালীদ ‘আসমানি তলোয়ার’ হয়ে এমন ঝলসে উঠলেন যে, যা সামনে আসে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই খোদায়ি তলোয়ার রোম সাম্রাজ্যের উপর বিজলী হয়ে এমন চমকালো যে, ইতিহাসের দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে ছড়িয়ে থাকলো শুধু তারই খ্যাতি ও সুখ্যাতি ।
আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, যার সততা, বিশ্বস্ততা ও কোমলতার প্রসংশা ছিলো, ছিলো ক্ষুদ্র কিছু বাহিনী পরিচালনার অভিজ্ঞতা, হঠাৎ তিনি হয়ে গেলেন আমীনুল উম্মাহ! উম্মতের বিশ্বস্ততম ব্যক্তি! মুসলমানদের বৃহত্তম বাহিনী পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পিত হলো তার উপর, আর তিনি এমন বিস্ময়কর যোগ্যতার সাথে বাহিনী পরিচালনা করলেন যে, রোমকবাহিনী ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো! এমনকি সমগ্র সিরিয়ায় রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো, আর বিদায়কালে রোম- সম্রাট সিরিয়ার উপর অসহায় দৃষ্টি বুলিয়ে বলে উঠেন, হে সিরিয়া, তোমাকে বিদায় সালাম, এমন বিদায় যার পর নেই কোন মিলন।
আমর ইবনুল আছ, যিনি ছিলেন কোরায়শের বুদ্ধিমানদের একজন। কিন্তু তার কীর্তি ছিলো শুধু এই, কোরায়শ তাকে হাবশার রাজদরবারে দূতরূপে পাঠিয়েছিলো হিজরতকারী মুসলমানদের ফেরত আনাতে, কিন্তু তাকে ফিরে আসতে হয়েছিলো ব্যর্থ হয়ে; সেই তিনি ইসলাম গ্রহণের পর হলেন ফাতিহে মিছর- মিশরবিজয়ী এবং অখণ্ড ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অধিকারী।
সা‘আদ বিন আবী ওয়াক্কাছ, ইসলামপূর্ব জীবনে যার বড় কোন যুদ্ধের খবর কেউ জানে না, তিনি হলেন কাদেসিয়ার বিজয়ী বীর। মাদায়েনের চাবি অর্পিত হলো তার হাতে। ইরাক ও ইরানকে ইসলামী সালতানাতের সবুজ মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে পেলেন ‘ফাতিহে আজম’- এই অমর ও অনন্য উপাধি।
সালমান ফারসী, যিনি ছিলেন পারস্যের কোন ব্যস্তির ধর্মীয় নেতার পুত্র। নিজের এলাকার বাইরে যার কোন পরিচিতি ছিলো না। তিনি পারস্য থেকে বের হলেন। দাসত্বের পর দাসত্ব এবং বিপদের পর বিপদ বরণ করে অবশেষে মদীনায় উপনীত হলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন, আর স্বদেশভূমি পারস্যের রাজধানী মাদায়েনের আমীর ও প্রশাসক হলেন! কালকের সাধারণ এক প্রজা, আজ হলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী শাসক! তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এমন শাসনক্ষমতার অধিকারী হয়েও তার তাকওয়া ও ধার্মিকতায় এবং নির্মোহতা ও অনাড়ম্বরতায় আসেনি সামান্যতম পরিবর্তন! পারস্যের বিমুগ্ধ মানুষ অবাক হয়ে দেখে, তাদের শাসক ঝুপড়িতে বাস করেন এবং বোঝা মাথায় বাজারে যান।
হাবশী দাস বেলাল, যার কোন মূল্য ছিলো না এমনকি বেচাকেনার বাজারেও, গুণ ও যোগ্যতায় এবং সততা ও ধার্মিকতায় তিনি এমন উচ্চ স্তরে উপনীত হলেন যে, আমীরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্তাব পর্যন্ত তাঁকে বলতেন, সাইয়িদুনা বিলাল!
আবু হোযায়ফা (রা)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম, আরব জাহিলিয়াতে যার আলাদা কোন পরিচয় ছিলো না, ইসলাম তাকে এমনই অত্যুচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলো যে, খলীফা ওমর (রা) তাকে খেলাফতের গুরু দায়িত্ব বহনেরও উপযুক্ত মনে করেছেন। তিনি বলেছিলেন, আবু হোযায়ফার আযাদকৃত গোলাম সালিম যদি বেঁচে থাকতো, তাকে আমার স্থলবর্তী করে যেতাম।
যায়দ ইবনে হারিছা, যিনি লুণ্ঠিত কাফেলা থেকে দাসবাজারে গিয়ে বিক্রি হয়েছিলেন, মুতার যুদ্ধে তিনি ছিলেন মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি, যে বাহিনীতে ছিলেন জা‘ফর বিন আবু তালিব এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদের মত অভিজাত কোরায়শবীর; আর তাঁর পুত্র উসামা ছিলেন সেই বাহিনীর প্রধান যাতে ছিলেন আবু বকর ও ওমর (রা)-এর মত ছাহাবী।
আবু যর, আলমিকদাদ, আবুদ্-দারদা, আম্মার বিন ইয়াসির, মু‘আয বিন জাবাল ও উবাই ইবনে কা‘আব- জাহেলী যুগের এই সাধারণ মানুষগুলোর উপর দিয়ে যখন ইসলামের সুরভিত বায়ু প্রবাহিত হলো, তারা হয়ে গেলেন যুহদ ও তাকওয়ার আদর্শ এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জগতে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।
আলী ইবনে আবু তালিব, আয়েশা বিনতে আবু বকর, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, যায়দ ইবেন ছাবিত ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস- উম্মী নবীর ক্রোড়ে প্রতিপালিত হয়ে এাঁরা প্রত্যেকে হয়ে গেলেন মুসলিম উম্মাহর এমন জ্ঞানপ্রদীপ যার আলোতে উদ্ভাসিত হলো সারা বিশ্ব। তাঁদের কলব থেকে প্রবাহিত হলো ইলমের এমন ঝর্ণাধারা এবং তাদের যবান থেকে নিঃসৃত হলো হিকমত ও প্রজ্ঞার এমন অমীয় বাণী, যার তুলনা হতে পারে শুধু যমযমের ঝর্ণধারা। তারা এবং অন্যসকল ছাহাবা- এককথায় তাদের পরিচয় হলো, হৃদয়ের দিক থেকে মানবসমাজে পবিত্রম, ইলম ও প্রজ্ঞার দিক থেকে গভীরতম এবং লৌকিকতার দিক থেকে সহজতম।
তারা যখন কথা বলতেন, যামানা নিশ্চুপ হয়ে তাদের কথা শুনতো এবং ইতিহাসের কলম তা লিখে রাখতো। ভারসাম্যপূর্ণ মানবগোষ্ঠী দেখতে দেখতে সবকিছু বিস্ময়কর ভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেলো! জাহেলিয়াতের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই যে ‘মানবকাঁচাপণ্য’, সমসাময়িক জাতি যাদের দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাতো এবং প্রতিবেশী দেশ যাদের অবজ্ঞা করতো হঠাৎ করেই তারা দেখতে পেলো সেই তুচ্ছ কাঁচা পণ্য থেকে তৈরী হয়ে গেছে এমন মহামূল্যবান মানব- সম্পদ যার চেয়ে উত্তম কিছু সভ্যতার ইতিহাসে কখনো ছিলো না, কখনো হবে না। যেমন সুষম ও সুসংহত তেমনি সুবিন্যস্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ, যেন গোল আঙটা, যার প্রান্ত বোঝা যায় না, কিংবা যেন একপশলা বৃষ্টি, যার শুরুতে বেশী কল্যাণ না শেষে, বলা যায় না। এমন এক মানবগোষ্ঠী, যা মানবীয় প্রয়োজনের সকল দিকে পরিপূর্ণ ও সুসম্পূর্ণ। কোথাও কোন খুঁত নেই এবং কমবেশী করার সুযোগ নেই। বিশ্বের কাছে তাদের নেই কোন প্রয়োজন, অথচ তাদের কাছে বিশ্বের আছে প্রয়োজন এবং তা সর্ববিষয়ে।
এই নতুন মানবগোষ্ঠী পৃথিবীতে এক নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করলো এবং নতুন রাষ্ট্র ও শাসন- ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করলো, অথচ আধুনিক সভ্যতা ও রাষ্ট্র- ব্যবস্থার সাথে তাদের কোন পরিচয়ই ছিলো না। তবু কোন জাতির কাছ তাদের মানুষ ধার করতে হয়নি এবং কোন রাজ্য ও সরকার থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে হয়নি। সম্পূর্ণ আত্মশক্তি ও আত্মযোগ্যতায় তারা এমন এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন যা বিস্তৃত ছিলো দুই মহাদেশের বিশাল এলাকায়। প্রতিটি স্থান ও অবস্থান এবং প্রতিটি আসন ও উপবেশন এমন সব মানুষ দ্বারা পূর্ণ করা হয়েছিলো যারা যোগ্যতা ও ধার্মিকতা এবং শক্তি ও সততার মাঝে অপূর্ব সমন্বয় সাধন করেছিলেন। এই বিশাল বিস্তৃত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পর স্বভাবতই তা রক্ষা ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিলো সর্বোচ্চ যোগ্যতার অসংখ্য মানুষের।
অথচ উম্মাহর তখন মাত্র আবির্ভাবকাল; কয়েকটি দশক মাত্র তার বয়স এবং সেটাও পার হয়েছে শুধু প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা এবং জিহাদ ও সংগ্রামের মাঝে। কিন্তু বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেলো নবআবির্ভূত উম্মাহ কীভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও শাসনযন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি স্তরে কেমন যোগ্যতম মানুষ সরবরাহ করেছে! যেমন আদর্শ শাসক ও প্রশাসক, তেমনি সুদক্ষ পরিচালক ও ব্যবস্থাপক; যেমন বিশ্বস্ত কোষাগার ও হিসাব রক্ষক তেমনি ন্যায়পরায়ন বিচারক, সুদক্ষ সেনাপতি ও একনিষ্ঠ সৈনিক। সর্বোপরি ধার্মিকতা ও সাধুতায় এবং সরলতা ও উদারতায় অতুলনীয়। সর্ববিষয়ে অন্তরে তাদের আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর কাছে জবাবদেহির চিন্তা। যেহেতু দ্বীনী তারবিয়াত ও ইসলামী দাওয়াতের ধারা অব্যাহত ছিলো সেহেতু সদাপ্রবাহমান ঝর্ণার মত উম্মাহ তার রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসনযন্ত্রকে যোগ্য, দক্ষ, দায়িত্ববান ও নিবেদিতপ্রাণ এবং মুত্তাকী ও ধর্মাপ্রাণ কর্মী ও কর্মকর্তা সরবরাহ করে যেতে পেরেছে। কখনোই উম্মাহ যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা, প্রতিভা, সততা ও ধার্মিকতার সংকটে পড়েনি। শাসনক্ষমতা সবসময় তাদেরই হাতে ছিলো যারা বিশ্বাস করতেন যে, এ ক্ষমতা কর ও রাজস্ব সংগ্রহের জন্য নয়, বরং মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের পথে হিদায়াত করার জন্য। ব্যক্তিত্বে ও চরিত্রে সবসময় যারা সততা ও যোগ্যতার একত্র সমাবেশ ঘটিয়েছেন। ফলে ইসলামী সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে এবং সমাজ ও মানুষের ধর্মীয় জীবন ঐ সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যসহ উদ্ভাসিত হতে পেরেছে যা মানব জাতির ইতিহাসের কোন অধ্যায়ে ঘটেনি।
বস্তুত এত অল্প সময়ে এমন অসাধ্য সাধন হতে পেরেছে শুধু এজন্য যে, আল্লাহর নবী মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবস্বভাবের বদ্ধ তালা খোলার জন্য সঠিক চাবিটি ব্যবহার করেছিলেন। ফলে প্রথম প্রচেষ্টাতেই তা খুলে গিয়েছিলো এবং মানবস্বভাবের লুকায়িত সকল সম্পদ ও শক্তি, গুণ ও বৈশিষ্ট্য এবং প্রতিভা ও সম্ভাবনা দুনিয়ার সামনে চলে এসেছিলো। জাহেলিয়াতের মর্মমূলে তিনি সঠিকভাবে আঘাত হেনেছিলেন এবং প্রথম আঘাতেই তা ধরাশায়ী হয়েছিলো। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিতে তিনি অবাধ্য বিশ্বকে নতুন দিকে এবং সহজ সরল পথে চলতে বাধ্য করেছিলেন, যাতে মানব- জাতি তার সৌভাগ্যের নতুন যুগের শুভ উদ্বোধন করতে পারে, আর তা হলো ইসলামী সভ্যতার সেই স্বর্ণালী যুগ, যা মানবতার ললাটে একমাত্র শুভ্র তিলকরূপে এখনো জ্বলজ্বল করছে।
{ লেখাটি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র) এর " মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো" বই থেকে নেওয়া}
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০১