বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'কৃষ্ণকান্তের উইল'
এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'বৈকুণ্ঠের উইল';
লেখক এবং লেখনী উভয় নামেই মিল থাকায় একটানে পড়ে ফেললাম উপন্যাস দুইটি।
উল্লেখ্য 'কৃষ্ণকান্তের উইল' ১৮৭৮ সালে রচিত। এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্রগুলো হল গোবিন্দলাল, ভ্রমর এবং রোহিণী।
পক্ষান্তরে 'বৈকুণ্ঠের উইল' রচিত হয় ১৯১৫ সালে। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো হল গোকুল ও বিনোদ।
'কৃষ্ণকান্তের উইল' এ আমরা দেখতে পাই একটি ত্রিভুজ প্রেমের সমীকরণ। গুণবতী স্ত্রী ভ্রমরের অপরিসীম প্রেম সত্ত্বেও গোবিন্দলাল প্রেমে পড়ে বিধবা রোহীণীর রূপের। ঘটনার নানা পালাবদলে গোবিন্দলাল বুঝতে পারে সংসারে সুখের জন্য গুণই আবশ্যক, রূপ সে ক্ষণিকের মোহ। দুই নায়িকার অকালমৃত্যু এবং নায়কের সন্ন্যাসজীবন প্রেমের এই উপন্যাসকে ট্র্যাজেডী সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়।
'বৈকুণ্ঠের উইল' এ আমরা দেখতে পাব দুই ভাইয়ের মান অভিমান আর সম্পর্কের টানাপোড়নের এক বাস্তবতা। পুরোদস্তুর সামাজিক এ উপন্যাসে আছে ছোট ভাইয়ের প্রতি দাদা গোকুলের অপরিসীম স্নেহের গল্প। ছোট ভাইয়ের অর্জনে গর্ববোধ করা ছাড়াও মা-বাবার প্রতি একান্ত নিষ্ঠার পরিচয়ের নাম গোকুল। কিন্তু স্ত্রী মনোরমা আর শ্বশুর নিমাই রায়ের ষড়যন্ত্রে পড়ে বার বার মা, ভাইকে ভুল বোঝে গোকুল। অপত্য স্নেহের এই উপন্যাসে মাতৃভক্তির প্রবল উদাহরণ আমরা দেখি। অবশেষে ছোট ভাই বিনোদ যখন ভালো মানুষ দাদার পায়ে পড়ে ক্ষমাভিক্ষা করে একটা সুখী ইঙ্গিত দিয়ে শেষ হয় উপন্যাস।
'কৃষ্ণকান্তের উইল' পড়লে পাঠক নামকরণের সার্থকতা খুঁজতে গিয়ে একটু সমস্যায় পড়বে। নিঁখাদ প্রেম ছাড়া উইলসংক্রান্ত কোন বিষয় খালি চোখে দেখা যাবে না। কিন্তু পুরো উপন্যাস অনুসরণ করলে দেখা যাবে কৃষ্ণকান্ত তার উইলে বখে যাওয়া আপন ছেলে রেখে ভাতিজা গোবিন্দলালকে সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে যাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। বলা চলে এই উইলই নেপথ্যে থেকে কাহিনী টেনে নিয়ে যায়।
'বৈকুণ্ঠের উইল' এর নামকারণের সার্থকতা সহজবোধ্য হবে সকলের জন্য। বৈকুণ্ঠ তার দুই ছেলের মধ্যে অশিক্ষিত বড় ছেলে গোকুলকে সব সম্পত্তি দিয়ে যান উচ্চশিক্ষিত ছোট ছেলে বিনোদকে বঞ্চিত করে। মূলত এই সম্পত্তি নিয়েই তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় আর সেই দূরত্বকে আরো বড় করে তোলে সমাজের নিন্দুকেরা। দুই ভাইয়ের বৈপরীত্বকে ভাঙিয়েও খায় কেউ কেউ। প্রত্যক্ষভাবেই এই উইলই পুরো কাহিনীজুড়ে বিদ্যমান থাকে
সুখপাঠ্য দুই উপন্যাসেই ঔপন্যাসিকদ্বয়ের স্বমহিমার স্বাক্ষর বিদ্যমান। সবাইকে পাঠের আহবান করা হল।