সবে মাত্র ডিসকভারি চ্যানেলটা চালু করেছি। কোথা থেকে বুয়া এসে বলল,
-আফায় এইগুলান কি যে দেহেন! এই বয়সের মাইয়া দেখবো ইস্টার প্লাস সনি আর সিনামার চ্যানেল।
আমি দুষ্টুমির ছলে জানতে চাইলাম,
-কেনো বুয়া?
-কত কিছু শিখন যায়। আর আপনের তো আরও বেশি কইরা শিখন দরকার।
-কি কি শিখন যায়?
বুয়া আয়েশ করে পান চিবুতে চিবুতে বলল,
-ক্যামনে জামাই রে হাতের মুঠায় রাখতে হয়, ক্যামনে বদ মাইয়া থেইকা জামাই রে দূরে সরাইয়া রাখা যায়, দজ্জাল শাশুড়ি ননদ গো ক্যামনে সায়েস্তা করন লাগে, এই সব আর কি। হাইসেন না। এই মরিয়ম বুয়ার কথা বাসি হইলেই মাইনষে টের পায়।
এই হোল আমাদের মরিয়ম বুয়া। তাকে আড়ালে বিবিসি নিউজ ও বলা হয়। কোন ফ্ল্যাটের কাজের মেয়ের সাথে বাড়ীর দারোয়ানের ইটিস পিটিস চলছে, কোন বাড়ীর বউ বাসা থেকে পালাইছে, কোন বাড়ীর মেয়ে মোবাইল মেরামতের দোকানের ছেলের সাথে প্রেম, এই সব খবরই মরিয়ম বুয়া সবার আগে জেনে যায়। অতঃপর খুব গর্বের সাথে বলে,
-কইছিলাম না? অহন বিশ্বাস হইলো? গরিবের কথা বাসি হইলে ফলে... হুহ।
একদিন সকালে পত্রিকা পড়ছি। মরিয়ম বুয়া গজগজ করছে আর ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে। জানতে চাইলাম,
-কি হয়েছে বুয়া? বাসায় ঝগড়া করে আসছো নাকি?
বুয়া প্রায় বিলাপের সুরে বলল,
-মানুষ এত্ত খারাপ হয় ক্যামনে গো আফা? তুই আরেক জনের সংসার ভাঙ্গতে চাস? আল্লার গজব পরব। ৭জামাই এর ভাত খাওন লাগবো তোর।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-কাকে অভিশাপ দিচ্ছ?
-ফাল্গুনী রে অভিশাপ দেই গো আফা। ধবল এর মতো সাধাসিধা একটা পোলারে ক্যামনে নষ্ট করতে আছে। এত্ত সুন্দর বউ ফালাইয়া এখন ফাল্গুনীর পিছে ঘুরে। আফা গো আমার বুকটা পুইরা যাইতাছে।
আমি মনে মনে আফসোস করলাম, আহা কার এই সর্বনাশ হোল। মরিয়ম বুয়া কে জিজ্ঞেস করলাম,
-আমাদের বিল্ডিং এর? নাকি অন্য বাড়ীর? বউ টা কি জানে এসব?
বুয়া বলল,
-আরে না আফা। আমি ইস্টার প্লাস এর সিরিয়াল এর কথা কইতে আছি।
পান খাওয়া রঙিন দাত গুলো বের করে মরিয়ম বুয়া হাসতে লাগলো।
যেন আমার নির্বুদ্ধিতা দেখে সে খুব মজা পাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১১