somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ আমি মেঘ হবো (গল্প)

২২ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক ভোরে বিছানা ছাড়লো তিথি। পূব আকাশ সবে মাত্র আলোকিত হতে শুরু করেছে। জানলার পর্দাটা সরিয়ে বেসিনে গেলো হাত মুখ ধুতে। আয়নায় কিছুক্ষন নিজেকে দেখলো। নির্ঘুম ক্লান্ত চোখের নিচে কালো ছোপ। সারারাত কান্নার জন্ন্যে চোখ দুটো ফোলা। খুব আদুরে লাগছে মুখটা। একটু করে হাসল তিথি। আর তাতেই ওর গালে ছোট্ট একটা টোল পড়লো। আজ সারাদিন তার অনেক কাজ। বেরুবে অহনার সাথে দেখা করতে। অহনা ওর প্রিয় বন্ধু। এবার ওরা একসাথে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলো। আজ অহনা কে একটা উপহার কিনে দেবে তিথি। উপহার পেলে মেয়েটা এত্ত খুশী হয় যে তিথির খুব ভাল লাগে তখন।

*****

নাস্তার টেবিলে এসে দেখল বাবা বসে আছে পত্রিকা হাতে। কিছুক্ষন ইতস্থত করে বসে পড়লো ওর নির্দিষ্ট চেয়ারে। মা এখনো আসেনি। এটা তিথির আপন বাবা না। ওর নিজের বাবা মারা গেছেন ও যখন খুব ছোট্ট। বাবার কথা ওর একদমই মনে নেই। বাবার মৃত্যুর পর মা কে আবার বিয়ে দেন মামা মামীরা। এক কথায় আপদ বিদায় আর কি। সেই থেকে এই সংসারেই আছে ওরা দুজন। এই বাবাটা তিথির সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করেন না। তবুও তিথি তার সাথে সহজ হতে পারেনি কখনো। মা চায়ের ট্রে হাতে চেয়ারে এসে বসলো। তিথি তাকিয়ে দেখল মার চোখ ফোলা। কেও কোন কথা বলছে না। প্রতিদিনের মত কাল রাতেও বাবা মার ঝগড়া হয়েছে। এবং ঝগড়ার পরিসমাপ্তি হয় মার গায়ে হাত তুলে। বাবা অনেক রাগী। রাগী তো অনেকেই হতে পারে। তাই বলে গায়ে হাত তুলবে কেন? তিথি জানেনা কি নিয়ে ওদের এত্ত ঝগড়া হয়! মাঝে মাঝে ভাবে ঝগড়ার কারণটা ও নয়তো? একবার বলেছিল মাকে,
-মা চলো আমরা অন্য কোথাও চলে যাই। এতো কষ্ট সহ্য কর কেন তুমি?
-কোথায় যাব বল?
-চলো মামাদের কাছে চলে যাই।
মা করুণ একটা হাসি দিয়ে বলল,
-তোর বাবা যতই রাগী হোক তোর বিষয়ে অনেক সচেতন। তোকে ভালো স্কুলে পড়িয়েছেন। ভালো ভালো জিনিস দিয়েছেন। মামার বাড়ি গেলে এই সুবিধাগুলো তোকে দিতে পারবোনা। তোর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমি সব কষ্ট মেনে নিতে রাজি।
আর কিছু বলতে পারেনি তিথি। কাল রাতে যখন বাবা মা ঝগড়া করছিল ও আর সহ্য করতে পারেনি। কঠিন মুখে বলেছিল,
-তোমরা যদি প্রতিদিন এমন করো আমি তবে দূরে কোথাও চলে যাব।
বলেই দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এসেছিল। সারারাত সে টের পেয়েছে পাশের ঘরে ঝগড়া চলছে।

*****

গোলাপি তিথির খুব প্রিয় রঙ। বেছে বেছে সবচে প্রিয় পোশাকটা পড়লো। চোখে গভীর করে কাজল দিলো আর ছোট্ট একটা টিপ। মুগ্ধ হয়ে নিজেকে দেখছে ও। এত্ত সুন্দর কি আগে কখনো লেগেছে ওকে? একটা প্রেমিক থাকলে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারতো আজ। ভাবতে ভাবতে নিজেই হেসে লুটোপুটি। পা টিপেটিপে মার ঘরে গেলো তিথি। মা পাশ ফিরে শুয়ে আছে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে যখন ফিরে আসবে তখন মা জিজ্ঞেস করলো
-কিছু বলবি?
-মা আমি অহনার সাথে একটু ঘুরতে যাব। যাই???
-এই ভর দুপুরে কোথায় যাবি?
-একটু যাই না মা! কত দিন বের হইনা। তাছাড়া...
মা জানতে চাইল,
-তাছাড়া কি???
-মা, আজ আমার অনেক অনেক কাজ বাকি।
মা হেসে বলল,
-আচ্ছা ঠিক আছে যা।
- মা!!!!
-আবার কি হোল? আর কি বলবি?
-আমাকে কিছু টাকা দিবে?
মা হেসে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিলেন। মনে মনে ভাবলেন মেয়েটা কখনো কিছু আবদার করেনা। তিথি টাকা পেয়ে মা কে জড়িয়ে ধরল।
-মা তুমি কি জানো তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মা???
তিথির চোখে পানি। ও মাকে জড়িয়ে ধরেই থাকলো। মা কে কিছুতেই চোখের পানি দেখতে দেয়া যাবে না।

*****

ধানমণ্ডি লেক এর গেটের পাশে একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে তিথি। অহনা এখনো এসে পৌছায়নি। তাতে অবশ্য ওর কোন সমস্যা হচ্ছেনা। বরং বেশ মজা পাচ্ছে। ওর বয়সী একটা মেয়ে একা একা রাস্তার পাশে বসে চা খাচ্ছে এটা যেন সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য, এমন ভাবেই পথচারীরা ওকে দেখছে। কিন্তু তিথির সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। ও খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ করছে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে। মানুষজন গাড়ি রিক্সা চলে যাচ্ছে গা ঘেঁষে অথচ কুকুরটার তাতে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা নেই। কুকুরটা আজ যেন তিথির মতই নির্বিকার। তিথি কয়েকটা ছোট্ট পাথর কুড়িয়ে নিয়ে ঢিল ছুড়লো। কুকুরটা তাচ্ছিল্য ভরে একবার শুধু দেখল তিথি কে। তিথি অবাক হয়ে দেখল কুকুরটার চোখ বেয়ে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জলধারা। মায়া হোল তিথির। কুকুরটার মনেও কি না বলতে পারা অনেক দুঃখ? চায়ের দোকানদার কে বলল,
-চাচা একটা বনরুটি দেন তো?
বনরুটি টা নিয়ে ছুড়ে দিলো কুকুরটার দিকে। কুকুরটা ছুয়েও দেখলনা। একবার তাচ্ছিল্য ভরে রুটিটা দেখে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। তিথি একটু আনমনা হয়ে গেলো। পেছন থেকে অহনার ডাক,
-কিরে এখনো একটা সঙ্গী জুটেনি? কি করলি এতক্ষন?
অহনার কথায় হেসে ফেলল তিথি।
-তোর মত একটা বন্ধু থাকতে আবার সঙ্গী লাগে নাকি?
-বাব্বা এত্ত প্রেম আমার প্রতি?
দুজন একসাথে হেসে উঠল। তিথি ব্যাগ থেকে গিফট বক্স বের করে অহনার হাতে দিলো। অহনা অবাক হয়ে বলল,
-কি এটা?
-খুলে দেখ! তোর জন্য।
অহনার চোখ ঝলমল করে উঠল,
-নুপুর!!! আমার জন্য নুপুর!!!
-তোর ভালো লেগেছে?
-খুউউউব।
তিথি বলল,
-শোন মাঝে মাঝে তুই যখন এই নুপুর পরে রুনঝুন শব্দ করে হাঁটবি। তখন আমি যত দুরেই থাকি ঠিকই শুনতে পাবো।
তিথি অহনা দুজনই হাসতে লাগলো।

*****

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যটা লাল হচ্ছে ধীরে ধীরে। তিথি দাড়িয়ে আছে ওদের ছাদে। বাতাসে ওর গোলাপি ওড়না উড়ছে। ওকে ঠিক যেন গোলাপি পরীর মত লাগছে। মনে হচ্ছে এই মাত্র একটা পরী এসে নামলো ওদের ছাদে। তিথি এক হাতে ছাদের রেলিংটা ধরে রেখেছে। ৯তলার ছাদ থেকে নীচের মানুষ গুলোকে মনে হচ্ছে এক একটি পোকা। তিথি একটু করে হাসলো। পোকাই তো। মাঝে মাঝে পোকামাকড়ের সাথে মানুষের জীবনের কোন পার্থক্যই থাকেনা। সূর্যের লাল আভা তিথির চোখে মুখে। লুটিয়ে পরা এলো চুলগুলো এক হাতে সরালো মুখ থেকে। তিথির খুব ভালো লাগছে। আর তো মাত্র কিছু সময়! তারপর তিথি মেঘ হয়ে যাবে। ভেসে বেড়াবে মহাশূন্যে। চোখ বুজে ফেললো তিথি। মনে মনে প্রিয় কবিতাটি আওরালো একবার,
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।
ভালো থেকো পাখি সবুজ পাতারা।
ভালো থেকো চর, ছোট কুড়ে ঘর, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো পাতা, নিশির শিশির।
ভালো থেকো জল, নদীটির তীর।
ভালো থেকো গাছ, পুকুরের মাছ, ভালো থেকো।
ভালো থেকো কাক কুহুকের ডাক, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মাঠ, রাখালের বাশিঁ।
ভালো থেকো লাউ, কুমড়োর হাসি।
ভালো থেকো আম, ছায়া ঢাকা গ্রাম, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ঘাস, ভোরের বাতাস, ভালো থেকো।
ভালো থেকো রোদ, মাঘের কোকিল,
ভালো থেকো বক আড়িয়ল বিল,
ভালো থেকো নাও, মধুমতি গাও,ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।
ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো।।

*****

(উৎসর্গ- সেই মেয়েটিকে... যে সবকিছুর নীরব সাক্ষী)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×