আমি যেদিন সামুতে প্রথম লগইন করি সেদিন শুধু ডিএক্টিভেশন বাটন খোঁজ করছিলাম। কারণ ভার্চুয়াল জগতে আমার ইতিহাস বেশি সুবিধার ছিল না। ফেসবুকে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছিলাম। সেই ঝামেলার ঝাপটা হালকা করে আমার পরিবারের উপর দিয়েও গিয়েছিল। কাজেই ফেসবুক ডিএক্টিভ করি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি সামুতে ঢুকে প্রথমেই ডিএক্টিভ বাটন কোথায় আছে তা বের করতে চাইলাম। এখানেও যদি ঝামেলা বেঁধে যায় তাহলে পালাবো- এমন পরিকল্পনা করছিলাম।
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কত অজগর পেয়ে গেলাম, পেলাম না কেঁচোটিকে।
আমি প্রথম দিকে দিকভ্রান্তের মত কত কাজ করলাম সামুতে। ফেসবুকের সেই প্রো পিক সামুতেও প্রো পিক হিসেবে দিয়েছিলাম। তারপর কেউ কেউ বলল, একটা ভালো প্রো পিক দাও, ভালো প্রো পিক দিলে তাড়াতাড়ি সেফ হওয়া যায়। আমি ভাবলাম আমি যেহেতু মেয়ে তাই এনোনিমাস একটা মেয়ের ছবিকেই প্রো পিক দেবো। নেট থেকে খুঁজে একটা মেয়ের ছবি বের করলাম, সমস্যা হল সেই মেয়ে হিজাব পরা। হিজাবের ছবি দেবার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু সেই ছবিটা আমার এতো পছন্দ হয়েছিল, যে কারণে সেটাকেই ব্যবহার করলাম। দুসপ্তাহের মাথায় হঠাত সেফ হয়ে গেলাম, আমার সেফ হবার পেছনে ছবিটার আসলেই কোন ভূমিকা ছিল কি না তা জানি না। সেফ হবার পরেই সেই ছবি ফেলে আবার আমার প্রিয় পিকটাকে প্রো পিক বানাই।
প্রথম প্রথম সামুতে আরও পাগলামি ছিল, যেমন কেউ আমার পোস্টে অপ্রিয় কোন মন্তব্য করলে পুরো পোস্টটাই মুছে ফেলতাম।
আমি সেফ হলাম, আমার লেখা প্রথম পাতায় গেল, তারপর নির্বাচিত পাতায় গেলো, তারপর সামুর ফেসবুক পাতায় গেলো, এককথায়, ব্লগার হিসেবে আমি সামুতে সফল হলাম।
তারপরেও কোথায় যেন ঘাটতি ছিল। সামুতে লেখার আগ্রহটা হঠাত মরে যেতে লাগলো।
এমন দিনেই আমি ব্লগারদের কিশোরী ভাবনা নিয়ে পোস্ট দিই। সেখানে আমার ব্লগিং নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। ব্লগারদের নিয়ে ট্রল করাকে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখা হল। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, কিরে বাবা! অন্যায় করে ফেললাম না তো? আমি কি তবে ব্লগারদের অংশ হতে পারিনি?
আবার মাথায় ডিএক্টিভেশন বাটনের চিন্তা ঘুরছিল। এমন সময় স্বয়ং সামুর মোডারেটর ভাইয়া আমার পোস্টে মন্তব্য করে আমাকে লেখালেখি চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করলেন।
আমার আর কি চাই? এই স্বীকৃতির উপর আর কি বলার আছে?
এখন আমি ইস্পাতের মত দৃঢ় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমি সামুর একটি অংশ, আমি এই সামুতেই থাকবো আজীবন।
মাত্র কয়েকদিন আগেও আমার সবচেয়ে প্রিয় ওয়েবসাইট ছিল উইকিপিডিয়া। আর এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় সাইট একমাত্র সামু। গুগলে অচেনা হৃদি লিখে সার্চ দিলেই আমার সামু পেজ চলে আসে। ওল্ডম্যান এন্ড দ্যা সি উপন্যাসের বুক রিভিউ সার্চ দিলেই দেখি আমার লেখাটি চলে আসে। এমন তৃপ্তি আমি কোথায় পাই? এসব তো সামুর অবদান।
ব্লগার সনেট কবির সনেট নিয়ে কারো কারো কোন আগ্রহ নেই, কিন্তু সনেট কবি “ব্লগার অচেনা হৃদি” নামে এক সনেট লিখে কামনা করেছিলেন যেন আমার হাতে এই ব্লগের সম্ভ্রম বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ সনেট কবির প্রার্থনা কবুল করুক। আমি এখন বিশ্বসেরা ব্লগারদের নিয়ে স্টাডি করছি। যদি পারি এই ব্লগকে আমি ব্লগিং জগতের সবচেয়ে সেরা অবস্থানে নিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
সবাই আমার সাথে থাকুন প্লিজ, যদি সাথে থাকার ইচ্ছে না হয় তবে দূরে থাকুন, দোহাই লাগে, অযথা আমাকে বিব্রত করার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করবেন না। এতে আপনার যেমন লাভ হবে না, আমার নিজের কোন ক্ষতিও হবে না।
[উৎসর্গঃ লায়নহার্টকে। এই লোক আমার পক্ষে কথা বলার কারণে একজন মনে করেছিল লায়নহার্ট স্বয়ং আমার মাল্টিনিক। আমি লায়নহার্টকে একদম চিনি না। মনে হয় পরিচিত কোন ব্লগারের মাল্টি হবে। এনিওয়ে, লায়নহার্টকে অনুরোধ করব চোরাগোপ্তা কমেন্ট বন্ধ করে তিনি যেন ভালো কিছু লিখে তাড়াতাড়ি সেফ হন।]