নির্বাচন তো চলে এলো বলে, তাই নিয়ে যদি না গ্যাজাই তাহলে কিসের ব্লগ লিখলাম। নাহ, রাজনৈতিক দল অথবা মতাদর্শ নিয়ে আজকে কারো মাথা গরম করব না। আজকে একটু মাথা ঘামাবো ইভিএম ওরফে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে।
যেকোনো ধরনের মেশিনের ব্যবহার সেই শুরু থেকেই জীবনকে সহজ ছাড়া কঠিন করে তুলে নাই। তবে ইভিএম এর কথা ভিন্ন, দ্রুত এবং কম কষ্টে নির্বাচনের রেজাল্ট দিলেও সাথে যে বিতর্ক জুড়ে দেওয়াতে এই মেশিনের ধারে কাছে কোন মেশিন আসতে পারবে না। কেন পারবে না ? কারণ ইভিএম এ ভোটিং সব থেকে নাজুক ভোটিং সিস্টেমগুলোর একটি।
গণতন্ত্রের শুরু থেকেই যতভাবে ভোট নেওয়া সম্ভব সব ব্যবস্থাই কেউ না কেউ , কোথাও না কোথাও ঠিকই চেষ্টা করেছে। সব চাইতে নির্ভরযোগ্য ভাবে নির্বাচনের উপায় হল ফিজিক্যালি নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। কেননা একেটা কেন্দ্রের ফল বেআইনিভাবে পাল্টাতে প্রচুর রিসোর্স খরচ করতে হয়, সে তা সরকারি দল হোক অথবা বিরোধী দল। এইটাই অনসাইট ভোটিং এর সবচাইতে বড় প্লাস পয়েন্ট।
ধরি একটা নির্বাচন ইভিএম এর মাধ্যমে করা হবে বলে ঠিক করা হল। এখন কথা হল ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন নাকি কোন প্রাইভেট কোম্পানির? মনে করি ওপেনসোর্স আমাদের প্রথম পছন্দ। গেলাম ভোটকেন্দ্রে, দিলাম ভোট। খুশি খুশি বাড়িতে এসে শুনি ইভিএম হ্যাক করা হয়েছিল, নির্বাচনের ফল বাতিল। আচ্ছা এই সিনারিও বাদ দেই, মেশিন দেখে কখনও জানার উপায় নাই মেশিনে কি সফটওয়্যার লোড করা আছে, কিভাবে বুঝবেন আপনার ভোট গোনা হয়েছে? ফিজিক্যাল ভোটিং এর ক্ষেত্রে প্রথমে একটা ফাকা ব্যালট বক্স এনে রাখা হচ্ছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের প্রতিনিধিরা দেখছে পরে ভোট গ্রহণের পর তাদের সামনেই আবার ব্যালট বক্স খুলে ভোট গোনা হচ্ছে। একে অপরকে অবিশ্বাস করলে এইভাবেই করতে হয়, লল। কিন্তু ইভিএম এর ক্ষেত্রে নির্বাচন অফিস থেকে নির্বাচন কেন্দ্রে আনার পথে একজন সাহসী দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি দরকার যে কিনা সফটওয়্যারটা বদলে দিবে, বেশি না কয়েক মিনিটের কাজ এটা। অথবা, হয়ত নির্বাচন অফিস থেকেই কেউ চেঞ্জ করে দিল, দেশের যা অবস্থা। এইখানেও ধরে নেই দেশে সৎ লোকের অভাব নাই, কিন্তু সফটওয়্যার এর কোডে কয়েকটা লাইন পরিবর্তন করতে ফিজিক্যালি কাউকে মেশিনের কাছেই আসতে হবে না। মেশিন নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকলে যার যা করার সে তা দেশের বাইরে বসেই করতে পারবে।এখন আসি প্রাইভেট কোম্পানির কথায়। একটা কোম্পানিকে কতটা বিশ্বাস করা যায় যখন টাকার অঙ্ক ট্রিলিয়ন বিলিয়ন ডলার? তাদের কোন পক্ষপাতিত্ব থাকবে না আপনি কিভাবে বুঝবেন?
এইতো গেল ভোট গ্রহণ, এরপর গণনা স্থানান্তরের কথা একবারও চিন্তা করেছেন? কিভাবে ভোট স্থানান্তর করবেন? ইউএসবি ড্রাইভে? নাকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে? নাকি আস্ত মেশিন সাথে করে নিয়ে যাবেন? মেশিনই যদি সাথে করে নিয়ে যাওয়া লাগবে তাহলে লাভ কি হল সিস্টেম ডিজিটাইজ করে ? ইন্টারনেট বা ইউএসবি ড্রাইভ কোনটাই সেফ অপশন না। এরপর ফাইনাল কাউন্টের জন্য ব্যবহারিত সফটওয়্যার কি ওপেনসোর্স ব্যাবহার করবেন নাকি প্রাইভেট কোম্পানির? যদি কোন বাগ থেকে যায় তাতে? আসলে ইভিএম এর ব্যবহার অনিশ্চয়তার কোন দরজা খুলতে বাকি রাখে না।
যতদূর মনে পরে ইরানের নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ গড়বড় করে দেওয়া হয়েছিল খালি কিছু কোড ব্যবহার করে। এরকম স্পর্শকাতর স্থানে যদি এভাবে আক্রমণ করা সম্ভব হয় তাহলে বুঝতেই পারছেন কোন দেশের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করতে কোন কর্পোরেশন বা দেশ উঠে পরে লাগবে না তার গ্যারান্টি কি? বরং উলটোটা ধরে নিয়েই সব হিসাব করা উচিত। সারকথা এই ইভিএম কেন, কোন ডিজিটাল ভোটিং সিস্টেমই ফিজিক্যালি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার মত সিকিউর না। বরং ডিজিটাল পদ্ধতিগুলোই ভোট গ্রহণের সবচাইতে নাজুক পদ্ধতি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪৯