ফ্যাক্ট, ল, থিওরি, হাইপোথিসিস আমরা সাধারণ ভাষায় যেভাবে ব্যবহার করি সায়েন্টিফিক জার্নাল অথবা বিজ্ঞানীরা তা সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে ব্যবহার করেন। অনেক সময় এই শব্দগুলি গুলিয়ে যায় অথবা ব্যবহৃত হয় না ঠিকমত, কিন্তু শব্দগুলি একে অপরের সাথে ভালভাবেই সম্পর্কযুক্ত।
ফ্যাক্টঃ সরাসরি কোন ঘটনা দেখা, পর্যবেক্ষণ করা হল ফ্যাক্ট। মনে করেন, কোন এক সকালে জানালা খুলে দেখলেন বাইরে আলো,এটি একটি ফ্যাক্ট।
হাইপোথিসিসঃ কোন ঘটনা বিশ্লেষণ করতে যে ব্যাখ্যা দাড় করানো হয় সেটি হাইপোথিসিস। কখনো একটি ঘটনার এক বা একাধিক হাইপোথিসিস থাকতে পারে। হাইপোথিসিস হল এমন কিছু হতে হবে যা পরীক্ষা করা যায়। পরে গবেষণা অথবা তদন্ত করে অসম্ভব হাইপোথিসিসগুলিকে বাদ কার্যকরী হাইপোথিসিস নিয়ে সামনে আগানো হয়। মনে করেন, জানালা খোলার পর মনে প্রশ্ন আসলো বাইরে কিসের আলো? হাইপোথিসিস দাঁড়া করালেন হয়ত কেউ অনেক পাওয়ারফুল লাইট জানালায় তাক করে রেখেছে, হয়ত খুব কাছেই কোন সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটেছে, হয়ত সূর্যের আলো। এরপর বাইরে গিয়ে দেখলেন সূর্য উঠেছে, তাহলে 'সূর্যের আলো' হাইপথিসিস গ্রিন লাইট পেয়ে গেলো।
থিওরিঃ অনেকজনকে হয়ত বলে শুনেছেন 'আমার একটা থিওরি আছে অমুক কেন ঘটে, তমুক কেন হয়'। আসলে তারা যা বলতে চেয়েছে তা হল তারা একটা হাইপোথিসিস তৈরি করছে। প্রথমে ফ্যাক্ট নিয়ে তার উপর ভিত্তি করে হাইপোথিসিস তৈরি করা হয়। হাইপোথিসিসকে নানাভাবে পরীক্ষা করে যখন দেখা যায় যে হাইপোথিসিসটি কোন যেকোনো সিনেরিওতে ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে তখন সেই হাইপোথিসিসকে থিওরির মর্যাদা দেওয়া। হাইপোথিসিস যখন তার সকল অগ্নিপরীক্ষা পাস করে নিশ্চয়তা দেয় যে ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটলেও তার আউটকামটি সে প্রেডিক্ট করতে পারবে তখন থেকে সেই হাইপোথিসিস থিওরিতে রূপান্তরিত হয়। এজন্য কোন থিওরিকে 'জাস্ট অ্যা থিওরি' বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোন স্কোপ নেই। সে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেই থিওরি হয়েছে।
যেমন, থিওরি অফ ইভল্যুশন বাই ন্যাচারাল সিলেকশন একটি থিওরি।
লঃ 'ল' হল কোন ঘটনা কিভাবে ঘটে গণিত ব্যবহার করে ঘটে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা ।যেমন গ্যাসের অণুগুলির নাড়াচাড়া তাপের সাথে সম্পর্কিত অথবা শক্তির নিত্যতা। 'ল' কোন কিছু কেন ঘটল তার ব্যাখ্যা দেয় না। শুধুবলে কিভাবে ঘটল , অনেক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করে পাই-টু-পাই আগাম বলেও দিতে পারে কি ঘটতে যাচ্ছে। 'ল' থিওরি হতেও পারে নাও পারে।
'ল' অফ গ্রাভিটি একটি থিওরি এবং 'ল' , কারণ F=Gm1m2/r² সূত্র থেকে নির্ভুলভাবে জানা যায় বস্তু তার দূরত্ব ও ভর অনুযায়ী অন্য বস্তুকে আকর্ষণ করে আর থিওরি অফ গ্রাভিটি আমাদের জানাচ্ছে কেন বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। আবার বিবর্তন একটি থিওরি কারণ 'কেন' 'কিভাবে' এর ব্যাখ্যা করতে পারলেও ১০০% নির্ভুলভাবে তা আমাদের কিছু প্রেডিক্ট করে দিতে পারবে না।
দিন শেষে, একটি আপেল হাত থেকে ফেলে দেন, আপেল নিচে পরবে।( ফ্যাক্ট )
কত গতিতে , কত সময় নিয়ে নিচে পরবে সেইটা আপনি সূত্র ব্যবহার করে জানতে পারবেন। ( 'ল' )
কেন আপেল নিচে পড়ল, হয়ত কিছু তাকে নিচের দিকে টানছে। ( হাইপোথিসিস কাম থিওরি )
আগামীতে কাউকে এই শব্দগুলি ভুল ব্যবহার করতে করতে দেখলে ধরিয়ে দিতে নিশ্চয় ভুলবেন না
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২২