প্রথমেই বলে নেই লেখাটি আমার না। নিচে লেখকের নাম দেয়া আছে।
পড়াশোনার চাপে লেখা লেখি খুব কম ই করি। তারপরে আজ মনের দু:খ নিয়ে কিছু কথা লিখতে হচ্ছে। প্রসঙ্গ নতুন নয়, সেই পুরানোই। তবে এবার পুরানো ঘটনায় কিছুটা নতুন ভাবে।
ঘটনার সূত্রপাত:
বেশ কিছুদিন আগে, সাইফ (সাইফ দি বস) এর জেএসসি পরীক্ষা চলছিল, তার ব্লগ saiftheboss.com এ হুবুহু বিজয় এর মত করে তৈরি করা customized একটা লেআউট ছিল। নেহাত এ অভ্র বিজয় ঝামেলার পর অনেকের ই যারা আগে অভ্র ব্যবহার করে বাংলা লিখতেন, তাদের সুবিধার জন্যই এটি তৈরি করা ছিল। যাই হোক, ঘটনা গড়াতে গড়াতে বিজয় এর মোস্তফা জব্বার (ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্ণধার) এর ফেসবুক এর ওয়াল পর্যন্ত গড়াই, এবং তিনি লেআউট টি কপি রাইটের অজুহাতে টা মুছে দিতে বলেন। নেহাত এ ঝামেলাই ই যেতে চাই না, মেডিকেল এ পড়ি, উটকো ঝামেলায় জড়ানোর কোন মনে আমি দেখি নি। আব্বা আম্মার জন্য জেএসসি পরীক্ষার মধ্যে বাসায় নেট ও ছিল না। সাইফ এর সাথেও রাজশাহী থেকে কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। পরে admin হয়ে ওর ব্লগ থেকে লে আউট টি সরিয়ে রাখলাম। ঝামেলা মিটে গেল, কিন্তু প্রযুক্তি প্রেমী এক ছোট বালকের জন্য টা যেন এক অন্যরকম চ্যালেন্জ হয়ে উঠল। এত খেটে খুটে বানানো এক কী বোর্ড আর কারো উপকারে লাগবে না, তা কী হয়? শুরু হয়ে গেল আরেকটি অধ্যায়।
নতুন পথচলা:
ঠিক ই সাইফ আইন না ভেঙ্গেই তার কী বোর্ড যেন সবার কাজে লাগতে পারে সেই চেষ্টা করতে থাকে। আইডিয়া ও চলে আসে, সে বিজয় কী বোর্ড এর প্রতি টা কী স্ট্রোক এর অক্ষর গুলো কে উল্টো করে সাজিয়ে ফেলে। ফলে এক নতুন ধরণের কী বোর্ড ভেসে উঠে, যেমন বিজয় এর সব শিফট চেপে আশা অক্ষর গুলো কে সে শিফট না চেপেই দেবার ব্যবস্থা করে দেই, ফলে বিজয় কী বোর্ড এ যেটা শিফট চেপে দিতে হতো টা এখন, শিফট না চেপে দিলেই হবে। আর আগের সরাসরি গুলো শিফট চেপে আনতে হবে। আইডিয়া টি যেমন প্রশংসার যোগ্য তেমনি কৃতিত্বের দাবিদার ও। বের হল লেআউট এর নতুন ভার্সন 3। বিজয় যদি আসলেও কেও মনে প্রাণে সাপোর্ট করে এ দিয়ে লিখতে তার খুব সমস্যা হবে বই কী! যেমন সে “কলা” লিখতে যেয়ে লিখে ফিলবে “খরঅ”। মূলত যারা সাইফ এর কী বোর্ড ব্যবহার করে লিখবে, পুরাতন বিজয় ব্যবহার কারীদের এই সমস্যাই পড়তে হবে। পোস্ট টি দেখুন এখানে: http://www.saiftheboss.com/1003.html
বিপদের সূত্রপাত :
এই কী বোর্ড লেআউট নিয়ে অভ্র আর বিজয় নিয়ে কত কেচ্ছা কাহিনী হল। কীবোর্ড বিতর্ক আর শেষ হলো না। জব্বার সাহেব মেল করলেন আমাকে আর আমার ছোট ভাই কে, অবিলম্বে এই কী বোর্ড টিও সরিয়ে নেবার জন্য। নাহলে কপিরাইট আইনের মারপ্যাচে যে সাইফ কে বেশ ভুগতে হবে, সে কথাও তিনি মেল এ লিখলেন। আমাকে লিখলেন ঈদ এর দিন তিনি পুলিশ স্টেশন এ যেতে চান না। ক্লাস 8 এ পড়া একজন ছেলেকে যদি কপিরাইট এর মারপ্যাচ বুঝাতে চান সেকি কিছু বুঝতে পারবে নাকি বুঝতে চাবে। আমি ফিরতি মেল এ জানতে চাইলাম, আপনার বিজয় এর কপিরাইট এর এক কপি আপনার ওয়েবসাইট বা কোনো পত্রিকায় দিয়ে দিন, যাতে সে বুঝতে পারে যে সে কোথায় ভুল করছে। তিনি আমাকে টাকা দিয়ে তুলে নিতে বললেন। বেশ অবাক হলাম। ক্লাস ৮ এ পড়া একটা ছেলে বিজয় কীবোর্ড থেকে আলাদা একটা কী বোর্ড বানিয়েছে, তাকে কোথায় বাহবা দিয়ে ভবিষ্যত এ আর যাতে দুনিয়া কাপান সফ্টওয়্যার বানাতে পারে তার ইন্সপিরেশন না দিয়ে তিনি আগারগও থেকে কপিরাইট এর কপি টাকা দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসতে বললেন। বিচিত্র এই দেশ! সেলুকাস! বিচিত্র আমরা!
বর্তমান অবস্থা:
মা বাবা ভদ্রতা শিখিয়েছেন ছোট বেলা থেকেই। বাইরে যত কোথায় শুনি বিজয় দিয়েই বাংলা লেখার হাতেখড়ি, মোস্তফা জব্বার সাহেব কে শ্রদ্ধা করি। মেল করেছেন, বিজয় কী বোর্ড এর লে আউট ডাউনলোড লিঙ্ক আপাতত স্থগিত রেখেছি। নিজে মাইক্রোসফ্ট এর বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ টূল দিয়ে বাংলা লিখি। তিনি আব্দার করলেন তার নামে ব্লগ এ যত গুলো কমেন্ট এসেছে সেগুলো ও মুছে দিতে হবে, এও কী সম্ভব? মানুষের ভাল খারাপ কমেন্ট করবে, ভাল না লাগলে মুছে দিতে হবে?
বাংলা দেশ বাংলা ভাষা নিয়ে আমার আশা:
যুদ্ধ দেখিনি, তবে ভাষার জন্যই যে যুদ্ধ হয়েছিল তা জানি। তবে যুদ্ধ শেষ হয়েছে কিনা জানিনা! আজও হাজার মানুষ জানে না কিভাবে ওয়েবসাইট এ বাংলা লিখতে হয়, কিভাবে তার জানা চিরাচরিত বিজয় এ সে ওয়েবসাইট এ বাংলা লিখবে, জানেনা, এক্সপি তে বিজয় ইনস্টাল থাকার পর ও কেন ফেস বুক এর বাংলা লেখা বক্স বক্স আসে। জানেনা সে কোনও কপিরাইট লংঘন করছে কিনা। জানেনা টাকা ছাড়া লিগাল ভাবে কিভাবে সে চেনা লেআউট এ সহজে বাংলা লিখতে পারবে! জানতে পারবেও না! ভাষা কে যাদের সামনে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তারাই আজ ভাষা কে শিকল দিয়ে রেখেছে। হইত কোনও ব্যক্তিস্বার্থ বা অর্থলোলুপ দৃষ্টিভঙ্গি। চেয়েছিলাম ফেব্রুয়ারী এর কড়া ভাষণের মত “সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু কর”, আপাতত ভাই পুরান চেনা লে আউট এ কোনরকম বাংলা টা লিখতে পারলেই বাচি।
দেশের স্বার্থ সবার আগে!
লে আউট এর কপিরাইট থাকবে না টা বলছি না! থাকবেই! তিনি এত কস্ট করে একটি কীবোর্ড বানিয়েছেন তার মেধার মূল্য আপনি দেবেন না! মেধাসত্ব আইন বলে একটা কথা আছে না! কিন্তু যে আইনে এক মেধার জন্য হাজার মেধা বিকশিত হবার পথ রুদ্ধ হয়, যে আইনে ক্লাস ৮ এ পড়া একটি বাচ্চা ছেলে কে জেলের ভয় কিংবা উকিল আদালতের ভয় দেখতে হয়, সেখানে মেধা কী হাওয়া থেকে আসবে? দেশকে গড়বে নতুন প্রজন্ম। দেশ কে ভালো বসলে আমাদের কিছু ব্যক্তিস্বার্থ কে বলিদান দিতে হবে।
শেষ কথা:
Inception মুভি তে দেখেছিলাম, নায়ক বলে “When an idea has taken hold of the brain, it is almost impossible to eradicate” সাইফ এখন নব আবিস্কারে উন্মত্ত। ওর ই তো সময়। এভাবে যদি আপনারা এক একটি প্রতিভা কে মূলেই কেটে ফেলেন, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তো বন্ধ্যা হয়ে যাবে। শুধু নামে দেশ ডিজিটাল হলেও হতে পারে কিন্তু কাজে দেশকে আগাতে হবে। একটি মাত্র আইডিয়া ও দেশের চেহারা কে বদলে দিতে পারে, নতুন আইডিয়া কে গ্রহণ করার মানুষিকতা দাও আমাদের প্রভু। দেশকে ভালোবাসার শক্তি দাও, সাহস দাও।
আমি তৌফিক হাসান (শাওন দি বস 4)
রাজশাহী মেডিকেল এ আছি. . .
যে কেও লেখাটা যেখানে খুশি সেখানে নাম উল্লেখ পূর্বক শেয়ার করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:২০