আজকের আকাশটা বেশ নীল ছিল। দেখলাম শুধু আবছা কাঁচে ঢাকা জানলা দিয়ে। আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখাটা অনেকদিন হয় না। সন্ধ্যার আকাশ। সময় তাচ্ছিল্লের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে চারপাশটাকে বদলে দিয়ে। আমরা শুধু বুঝতে থাকি, ফেলে আসা সময়টাকে অনুভব করা হয়নি পুরো হৃদয় দিয়ে। নাকি করেছি তবু যথেষ্ট হয় নি? কে জানে! যাই হোক।
এই জানালাটার কাছে আসার জন্য হেঁটে আসা রাস্তায় আজ বড় জ্যাম ছিল। রিক্সা, মোটোরবাইকার, ফুটপাথ বাইকার, প্লাস্টিক আর লোহার ভীরে আমরা চলমান মাংসপিন্ড, কোন রকমে ফাঁক ফোকোর গলে বেরিয়ে যাই। নিরাবেগে ছুটে আসা গতিশীল বস্তুগুলোকে উপেক্ষা করে পেরিয়ে যাই মোড়টা। সে সময়ে হঠাৎ ট্রাফিকের হাতে মার খায় এক রিক্সাওয়ালা। এভাবে মারার অধিকার পুলিশকে কে দিল? কোন আইন কি আছে এভাবে মারার অধিকার নিঃশ্চিত করার জন্য? অবশ্য আইন না থাকলেও বোধহয় চলে। এভাবে যখন তখন রিক্সাওয়ালাদের গায়ে হাত তোলার অধিকারটা আমরা বোধহয় জন্ম সূত্রে পেয়ে এসেছি। তবে যে শ্রেণীঘৃণার জন্ম হল, তা যদি আগুন হয়ে জ্বলে ওঠে, তাহলে আমাদের পোড়ানোর অধিকার কিন্তু তৈরী হয়ে গেল! কিন্তু আগুন কি জ্বলবে? কে জানে! যাই হোক!
এই মোড়টার কাছে আসার আগে যে ফুটপাথের অবশিষ্টাংশ ধরে এসেছিলাম তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর মা কে দেখলাম। ভিক্ষুক নয়! পোশাকের ভাষায় বলে সে এমন কেউ, যাকে আমরা রাতে চাই, দিনে সাহস করিনা চাওয়ার। তবে নিরুপায় মানুষটা সবসময়েই আমাদের জীবনে আছে আমাদের গালি গালাজের অর্ধেকটা জুড়ে। অনেকের চোখ, হয়তো আমারও, শরীরের মানচীত্র খোঁজার আশায় বড় হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের শারীরীক ও মানসিক অক্ষমতা ঢাকতে সচেষ্ট হয়ে উঠি নিজেদের অজান্তেই। হই না? কে জানে! যাই হোক!
এ পর্যন্ত আসার আগে ছিলাম নিজের চার দেয়ালের ভেতর। খুবই বাস্তব সময়ের ছোঁয়ায় যেখানে আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে উঠি, বড় থেকে বুড়ো। অনেক লম্বা ইতিহাসের পাতা উল্টে ঠিক এখানেই প্রথম আমাদের কল্পনা ক্লান্ত মনটা হার মানে। তারপর তিল তিল করে গড়ে ওঠা (নাকি ভেঙে পড়া) দেহটা আর ভার বইতে পারে না। তার পর হঠাৎ সমস্ত অস্তিত্ব অস্তিত্ব হীনতায় বিলিন হয়। মাত্র তিন চারটা কথায় যা ব্যাখ্যা করা যায় সময় তা আমাদের কতইনা সমইয় নিয়ে বোঝায় এ চারদেয়ালে বাধা ঘরটার ভেতর! সময় কি বেকুব নাকি বুদ্ধিমান? কে জানে! যাই হোক!
জানালাটার কাছ থেকে ফিরে যখন আবার এই চারদেয়ালের দিকে ফিরতে থাকি, আকাশটা সব আলো নিয়ে পকেটে পুরেছে। আমরা তখনও হাঁটছি। আজকের এই দিনটাতেও মানুষের মুক্তি নিঃশ্চিত হয় নি। আজও মানুষ বেঁচেছে শুধু শরীরটাকে টেকানোর জন্যই। মানুষকি মুক্তি পাবে? নাকি আমরা শুধু বড় হব আর বুড়ো হব? কে জানে! যাই হোক...................