বর্ষণে চলছে চাকরের প্রেম! সিনেমার পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নবাজ কিশোর। লেদার জ্যাকেটে পরিপাটি চুলের ডেনিম জিন্স পরা নায়কই আমাদের চাকর আর তারই প্রেম কাহিনী। কাহিনী কি সেটা জানি না। দেখার সাহস বা পকেটের জোর কোনটাই নেই। তবে সাধারণ হিসেবে এই চাকরের একটাই মাত্র অযোগ্যতা হবার কথা, তার পকেটে টাকা থাকবে না। নইলে কিশোরটির স্বপ্নের সব নায়িকারা তার এই স্বপ্নের চাকরের জন্য পাগল প্রায়! আর টাকা থাকলেই নায়িকার বাবারা লাইন ধরে ফেলতো! তবে শেষ পর্যন্ত ভালবাসা নামক আদিখ্যেতার জয় নিঃশ্চিত যদি ত্রিমুখী লড়াই বা ট্র্যাজিক কোন ব্যাপার স্যাপার পরিচালকের মাথায় না এসে থাকে। আসলে পরিচালকের মাথা নাকি বিদেশী পরিচালকের মাথা সেটাও একটা ব্যাপার। তবে আমার দেখা ঐ কিশোরটির কাছে সেসব কোন ব্যাপার নয়। সে এখন আছে পোস্টারের ঐ রংবাজ চাকরের কাপড়ের মোড়কের ভেতর। স্বপ্নের বাজি সে জিতেই চলেছে পথের ধারে ঐ পোস্টারটার সামনে দাঁড়িয়ে।
বেশিক্ষণ থাকবে না এসব স্ব্প্নালু অতি কল্পনা। একটু পরেই হয়তো মনে পড়ে যাবে কোন গাড়ির পার্টস কিনতে সে বেরিয়েছিল গ্যারাজ থেকে। দেরী হলে ওস্তাদ কি বলবে বা করবে কে জানে? ভাবলেশহীন মুখ হঠাৎ ঝটকা দিয়ে সরিয়ে সে যখন কাজের পথে হাঁটবে, তার মনে পড়ে যাবে চাকরদের এসব প্রেম শুধু সিনেমার পর্দাতেই সম্ভব। রূপালী পর্দার নায়ক রংবাজ চাকরের অভিনয় করতে পারে কিন্তু তার মত দুই পয়সার মেকানিকের হাত কখনও খুঁজে পাবেনা তার স্বপ্নের নায়িকাদের হাতের পেলব ছোঁয়া। সিনেমার বহু কালের একই চর্বিত চর্বণে একেবারে তরল হয়ে যাওয়া অসম ভালবাসার জয় তার তেল-কালি মাখা মুখশ্রীর জন্য নয়। তার জন্য আছে রাস্তায় তার পাশদিয়ে হেঁটে যাওয়া জরিনা-সখিনারা। এদের হাতে সংগ্রামের কড়া আছে, মহলের লতানো লিয়ানাদের মত নমনীয়তা নেই।
একটা সময় তার এত চিন্তা মাথার ভেতর অনেক ঘুর পথের কানাগলি পার হয়ে অন্যরকম একটা অশ্লীল কিছুতে রূপ নেবে হয়তো! রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ভূতের মত ভর করে আসবে রূপকথার চাকরের প্রেম কাহিনী! তার স্বপ্নের নায়িকারা তাকে তার ঘুমের ভেতর নিয়ে যাবে রাঙামাটির কোন পাহাড়ের চূড়ায়! ভুলে যাবে সারাটা দিনের অসংখ্য লাঞ্ছনা যা তার জন্যই রেখেদেয়া শুধু পকেটের দূর্বলতার কারণে!
একটা সময় ছিল যখন মুক্তির ঘুড়িরা ভোকাট্টার সুরে খবর পাঠাতো এই সব কিশোরদের। মুক্তির ঘুড়িরা আজ কোথায় ওড়ে? ওড়ে? নাকি কেবলি ঢাকাপড়ে যাচ্ছে এসব রঙিন রঙিন পোস্টারের রঙে?