প্রথম অংশ আগে পড়ুন। যারা কাল পড়েননি।
আরো কিছু পেতে চাইলে...........!
সবুজ এসে হাসি মুখে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,ভাই কিছু মনে কইরেন না, রাস্তায় প্রচ- জ্যাম ছিল। তাই আসতে দেরি হলো। আমি ওর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, তোমার বাসা যেন কোথায়?
শাহবাগ।
শাহবাগ থেকে কাটাবন তুমি কোন বাসে এসেছো?
ও মাথা চুলকায়। জবাব খুজে পায়না। জ্যাম নিয়ে এমন মিথ্যা অজুহাত সবাই দিয়ে যাচ্ছে। বলা যায় এটা জ্যামের উপকারী দিক। তবে অন্য সময় এরকম মিথ্যে কথা শুনলে খুব মেজাজ খারাপ হতো। এখন হলো না।
সুন্দরী মেয়েরা ফ্লাটে ডাকলে বোধকরি সহজে কারো মেজাজ খারাপ হয়না। এমনকি এক মুরব্বী আংঙ্কেল আমার পায়ের উপর পানের পিক ছুড়ে দেওয়ার পরও আমি হাসি মুখে তার দিকে তাকালাম! হায় আল্লাহ আমার কি হলো?
রাস্তার পাশের একটি দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম। দোকানের নাম লাল নীল ফ্যাশন হাউজ। ফাউল সব জামা কাপড় ঝুলিয়ে রাখছে। কি মনে করে আমি সেখান থেকে একটি টিশার্ট কিনে ফেললাম ৩৫০টাকা দিয়ে। টাকাটা অবশ্য ধার হিসেবে দিলো সবুজ। অন্য সময় হলে মনটা খচখচ করতো। কেননা গুলিস্তানে এই টাইপের টিশার্টের দাম বড় জোড় ৬০টাকা!
নীশিতাকে ভাবছি।
গত দুই বছর আমরা একই ভবনের পাশাপাশি ফ্লাটে আছি। খুবই স্মাট একটি মেয়ে সে। তার চলাফেরা আচার ব্যাবহার দেখে মনেই হয়না সে বিবাহিত। সব সময় হাসি খুশি ভাবে থাকে। আমার বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে তার খুব ভাব। প্রায়ই তারা একত্রে শপিং করতে বের হয়। ভাল কিছু রান্না হলে আমাদের বাসায় শেয়ার করে। আমার ভাবির রুমে প্রায়ই বিকেলে নীশিতা আড্ডা দেয়। তবে আমি কখনোই নীশিতা ভাবীর দিকে তেমন আগ্রহ দেখাইনি। এখন তাই হালকা অনুশোচনাও হচ্ছে। শত হলেও প্রতিবেশি!
আমি এখন বসে আছি সংসদ ভবনের সামনের মাঠে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সূর্য তার ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরবে। লাল আলোয় ভরে গেছে চারপাশ। আমি এখনও ঠিক জানিনা সন্ধায় নীশিতার বাসায় যাব কিনা?
সংসদ ভবনের মাঠে এসেছি সিধান্ত নিতে। দেশের ভাগ্য নিয়ে নানান কঠিন সিধান্ত গুলিতো এখান থেকেই যায়। আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনীধিরা এখানে বসেই নানান সিধান্ত নিয়ে জনগণের ভাগ্য নির্ধারন করেন। যদিও সম্প্রতিকালে তারা সংসদের চেয়ে মুখে পাউডার মেখে টিভির টকশোতে বসে এক অন্যর চোখ তুলে নেবার চেষ্টা করতেই বেশি মজা পাচ্ছেন।
শেষ পযন্ত আমি সিধান্ত নিলাম নীশিতা ভাবির ফ্লাটে আমি যাব। আমার গায়ে নতুন টিশার্ট। সামনে একটি র্ফামেসী দেখে থমকে দাড়ালাম। দোকানি মুরব্বী টাইপের আংঙ্কেল। নাহ অস্বস্থিকর!
নীশিতার দরজার সামনে যখন দাড়ালাম আমার কেমন যেন লাগতে থাকলো। মনে হল হাত পা গুলো আর আমার নেই। বুকের ভেতর ড্রাম পেটানোর শব্দ হচ্ছে। নিজের অধঃপতন দেখে লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছিলাম। তারপরও কলিং বেলে চাপ দিলাম। আমার হাত কাঁপছে। উত্তেজনায় শরীরের রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ওপাশে কোন শব্দ নেই। তবে কি নীশিতা আমার সাথে ফান করেছে! দরজা কেন খুলছে না?
নাকি ওর হাজবে- বাসায়? এসব ভাবতে ছিলাম। হঠাৎ দরজা খুলে গেল। ভয়ে ছিলাম কে আবার দরজা খুলে, কিন্তু নীশিতাকে দরজা খুলতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওর সেই হাসিটা আমার বুকের ভেতর শিরশির করে ঢুকে পড়লো। নীশিতা বললো, কি খোকা আজ আবার দৌড়ে পালাবে নাতো? তার আগে বলো তোমাকে এমন চোরের মত লাগছে কেন?
বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমাকে চোরের মত লাগে! সব দোষ টিশার্টেওর, কেন যে এটা পড়ে আসতে গেলাম? আমি নীশিতার ডোয়িং রুমে ঢুকে পড়লাম। নীশিতা দরজা বন্ধ করে দিলো। সোফায় বসলাম। মুখোমুখি দুইজন।
- কি খাবে বলো?
- আপনার যা ইচ্ছে, দেন। আমার সম্যসা নেই।
ও ভুরু নাচিয়ে বলে, আমার যা ইচ্ছে তুমি তাই খাইবা? তাহলে আমার ইচ্ছে তোমাকে তেলাপোকা খাওয়াবো!
নীশিতা শব্দ করে হাসে। ওর হাসিটা যদিও অনেক সুন্দর কিন্তু আমার কেমন অস্বস্তি লাগে। মনে হচ্ছে সত্যি ফ্লাটটি ফাকাঁ। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম ঘরটা সুন্দর গোছানো। দেখেই বোঝা যায় রুচিশীল কারো হাতের ছোয়া লেগে আছে সবর্ত্র। গৃহিনী হিসেবে নীশিতা যে চমৎকার তা বুঝলাম দেয়ালে টানানো সুন্দর একটি শিল্প কর্ম দেখে। প্রেইন্টিংটা খুব ভাল লাগলো আমার।
- কি হলো কথা বলছো না কেন?
- কি বলবো? এমন সুন্দরীদের সামনে কথা খুজে পাওয়া খুব ঝামেলার! যা বলবো তাতেই ঠকে যাবো। আপনি বিদ্রুপ করবেন।
- আমি কি সুন্দরী?
- ভয়াবহ সুন্দরী। আপনাকে দেখলে আমার কথা হারিয়ে যায়।
- তাই!
- হুম, আপনার দেয়ালে ছবিটাতো ভারী সুন্দর। দেখে ভালো লাগছে।
নীশিতা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার বেড রুমে এরচে ভাল একটা প্রেইণ্টিং আছে তুমি দেখবা?
আমি মাথা দুলিয়ে বলি,দেখবো।
- আগে তাহলে চা খেয়ে নাও। আমি চা নিয়ে আসছি।
নীশিতা উঠে দাড়ায়। ডিভিটি প্লেয়ার অন করে ও। সামিনা চৌধুরী গাইছে।
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে উঠে।
চেনাশোনার কোন বাইরে..
যেখানে পথ নাই নাইরে.. ..
সেখানে অকারনে যাই ছুটে..।
আহা কি অপূর্ব! রবীন্দ্র নাথ আসলেই বড় মাপের রোমাণ্টিক ছিলেন। নীশিতার বেডরুমে গেলাম টানা পনেরো মিনিট পরে।
বেড রুমে পা দিয়েই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল কি আশ্চর্য উনি কে? ভূত নয়তো!
নীশিতা হাসি মুখে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, ছিঃ ভূত হবে কেন? ও আমার ছোট বোন শায়মা। তবে ওর আর আমার চেহায় খুব বেশি মিল। অনেকেই জমজ ভাবে। তবে ও আমার আড়াই বছরের ছোট। ফরিদপুর মেডিক্যালে পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার। কদিন পরেই ডাক্তার হয়ে বেরুবে।
আমি বিস্ময় কাটিয়ে বলি, ও!
এরপর কি বলবো খুজতে থাকি। নীশিতা বলে, তোমার ভাবি ওরে ভীষণ পছন্দ করেছে। সে বললো তোমাকে দেখাইতে।
আমি কিংকতর্ববিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছি। শায়মা বলে কি হলো বসছেন না কেন? বসে পড়–ন। কিছুটা আদেশের স্বরেই কথাটা আমাকে বলে শায়মা। আমি বোকার মত শায়মার পাশের চেয়ারে বসে পড়লাম। সত্যি বলতে নিজের প্রতি কোন কণ্টোল আমার যেন নেই।
শায়মা বলে, আপু সৌরভকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার জামাই এর মত তাল গাছ নয়। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাবি আপনিতো জানেন আমি বেকার মানুষ। কামাই রোজগার নাই! বিয়ে করে কি খাওয়াবো?
আমার এমন অসহয় কণ্ঠ শুনে চারপাশে হাসির রোল পড়ে যায়।
চারপাশের অট্রহাসিতে ঢাকা পড়ে আমার গো বেচারাটাইপের কণ্ঠ!
তাকিয়ে দেখি আলমারির পেছন থেকে বেড়িয়ে আসছে আমার ভাবি।
আমাকে নিয়ে যে ওয়ান এলিভেন টাইপের ষড়যন্ত্র হয়েছে তা বুঝতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯