মানুষের ৫ টি ইন্দ্রিয়। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক। আরেকটি ইন্দ্রিয় যাকে আমরা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলি। যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। কিন্তু অনুভব করা যায়। এর অবস্থান কোথায় তাও জানি না। অনেকে বলবেন মস্তিস্কে , অনেকেই বলবেন হৃদয়ে। অবস্থান যেখানেই হোক এ যে আছে এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত।
৫ টি ইন্দ্রিয় দিয়ে জাগতিক সাদৃশ্য সব কিছুর অনুভূতি পাওয়া যায়। অসাদৃশ্য কোন কিছুর অনুভূতি আমরা অনুভব করি এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে।
যেমন যদি কাউকে ভালোবাসি তবে এর অনুভূতি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়েই হয়ে থাকে। কারো প্রতি তীব্র ভাবে অনুভূতি জাগে । সুস্পষ্ট ভাবে কোন জায়গায় অনুভব করি তা বলা মুশকিল। অথবা প্রতিটা ইন্দ্রিয় তাঁকে নিয়ে অনুভূতি সৃষ্টি করে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা ভালোবাসা অন্যান্য ৫ টি ইন্দ্রিয়কে খুব দৃঢ় ভাবে , প্রবল ভাবে নিয়ন্ত্রন করে। কিভাবে যে এ হয় তা অতি বিস্ময়ের ব্যাপার।
যার সাথে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই, যে জীবনে হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়, যে জীবনের শুরু থেকে থাকে না, মাঝ পথ থেকে আগমন ঘটিয়ে সব কিছু পালটে দেয়। যার জন্য চিরচেনা সকল পরিস্থিতি , পরিবেশ, চিন্তা ভাবনা, আবেগ অনুভূতি, বিশ্বাস অবিশ্বাস, ধ্যান ধারণা, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত সব ... সব কিছু নিমিষেই পালটে যায়। হয়তো কারো জন্য ভালোর দিকে পালটে, কারো জন্য খারাপের দিকে। কিন্তু পালটে যায়, পরিবর্তনহীন ভাবে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।
অনেক সময় খুব শোচনীয় ভাবেও জীবন পরিবর্তন হয়। ভালোবাসার অনুভূতি এতই তীব্র হয় বা তাঁর প্রতি আকর্ষণ এমনই দুর্বার রূপ নেয় যে নিজের আর কোন কিছু অনুভব করার ক্ষমতা থাকে না। নিজে কোন কিছু চিন্তা করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা থাকে না। সময়িক ভাবে যদি কিছু চিন্তা করিও তবে তাঁর কথা, চিন্তা, ব্যবহার, মান, অভিমান, এড়িয়ে যাওয়া, ঝগড়া করা, ভুল বুঝা, ভয় দেখানো খুব চমৎকার ভাবে নিয়ন্ত্রন করে।
যেমন আমি জানি রাতে তুমি কারো সাথে কথা বলো। আমি এতে আহত হই, কষ্টে জর্জরিত হই। কিন্তু তোমার একটি মুখের কথা, “ কই আমি তো কথা বলি না” আমাকে আবার তোমার নিয়ন্ত্রনে আনে।
আমি জানি তুমি কারো সাথে কিছু করেছো। এতে আমি তীব্র ভাবে ভেঙে চুড়ে যাই, আমার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা ব্যাথায় নীল বর্ণ ধারন করে। কিন্তু তোমার হাঁসি মুখে একটি উচ্চারণ “ আমি তো তোমাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে যাই না” আমাকে তোমার নিয়ন্ত্রনে আনে। আমার ভেঙে চুড়ে যাওয়া আমিকে আবার জোড়া লাগাই। ব্যাথায় নীল হয়ে যাওয়া শিরাগুলো আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় তোমার কণ্ঠ শুনতে না পেলে সময় আমার অভাবিত ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আমার স্বাভাবিক কাজ কর্ম গুলো জমতে জমতে আমাকে শ্রেষ্ঠ রকম অলস করে তুলে। যেই তোমার কণ্ঠস্বর আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয় স্পর্শ করবে আমার উপর যেন কোন অলৌকিক শক্তি ভর করে। আমি সাবলীল ভাবে স্বাভাবিক হয়ে যাই। আমার মুখে নির্মল হাঁসি লেপে থাকে। আমার কাজ করার স্পৃহা অফুরন্ত ভাবে বেড়ে যায়।
আমি জানি তোমার কোন কথা গুলো মিথ্যা, কোন কথা গুলো সত্য। কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনা বেশিক্ষন আমার নিয়ন্ত্রনে থাকে না। আমি নিজে নিজে ভেবে যখন ক্লান্ত বিমর্ষ হয়ে যাই, ঠিক তখনই তোমার আগমন ঘটে। আমাকে হয়তো তুমি খুব গভীর ভাবে চিনে গেছো বা বুঝে গেছো বা জেনে গেছো আমি তোমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে পারবো না কোনোদিন। তাই যেকোনো কথা, হোক সেটা মিথ্যা বা সত্য আমাকে আনন্দ দেয়। আমাকে তোমার বশে নিয়ে আসে। আমার সব চিন্তাকে তুমি অত্যন্ত দারুণ ভাবে অথবা নিদারুণ ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারো।
প্রত্যেকটি মানুষের কিছু নিজস্ব চিন্তা ভাবনা থাকে। কিন্তু এখন আর আমার নিজস্ব বলে কিছু নেই। আমি আমাকে নিয়ে যদি কিছু ভাবি অথবা তোমাকে নিয়ে যদি কিছু ভাবি অথবা অন্য কিছু নিয়ে ভাবি তবে সেটা সাময়িক। তোমার আগমন আমার সব চিন্তাকে তোমার করে দেয়। আমার সব চিন্তার উপর আজ জেলের কারারক্ষীর নিয়ন্ত্রনের চেয়েও নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়ন হয়েছে। আমার সত্ত্বা আজ তোমার কৃতদাসে পরিণত হয়েছে। তুমি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে আমার সব অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করতে পারো।
আর আমি এই স্বেচ্ছাকৃত দাসী হওয়া ভালোবাসি......