somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি তথাকথিত এনজিও ও আমার কোমল স্মৃতি

২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকালে শুভ্র রোদই ছিল। রাস্তায় পড়লাম তুমুল বৃষ্টির কবলে। ঠাই নিলাম একটা ছাদের নিচে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখলাম এটা একটা সুনামধারী এনজিও এর স্কুল। খুবই বেহাল একটা একতলা ক্লাব। স্থানীয় ক্লাব। দুবেলা নাকি এখানে স্কুল বসে। তাকিয়ে দেখি ২০ থেকে ২৪ জন বস্তির ছেলেমেয়ে। আর একজন মহিলা তাঁদের দাড় করিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াতে চেষ্টা করাচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীত গাইবে তাই আমি বসার চিন্তা বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারস্বরে ছেলেমেয়েরা গান ধরল। লক্ষ্য করলাম “ আমার সোনার বাঙলা আমি তোমায় ভালোবাসি” এই লাইনটি ছাড়া আর কোন লাইন ঠিক মতো গাইতে পারছে না কেউ। শিক্ষিকা মহোদয় কিন্তু ঠিকই গাইছেন। কিন্তু শিখানোর দায়িত্বে অবহেলা করছেন। কাউকে বুঝাচ্ছেন না যে পরের লাইনগুলো কি এবং কিভাবে গাইতে হয়। যা হোক, অনেকদিন পর জাতীয় সঙ্গীত শুনলাম। ভালো লাগলো। আমিও তাঁদের সাথে গাইলাম। মনে পড়লো স্কুল থাকতে আমিও গাইতাম। এখানে একটা টিনের ঘরের নিচে এলোমেলো ভাবে গাওয়া হচ্ছে, আর আমি গাইতাম এসেম্বলি করে এবং গানটি পুরোপুরি ভালো ভাবে গাইতে পারতাম। এই পার্থক্য। এও মনে পড়লো যখন স্কুলে প্রতিদিন গানটি গাইতাম হৃদয়ে কোন অনুভূতি জাগত না। গাইতে হয় তাই গাওয়া। কিন্তু এখন যখনই গানটি শুনি কিছু একটা অনুভব করি। একটা ভালো লাগা বয়ে যায় সারা অঙ্গ জুড়ে , অনুভূতি জুড়ে। তীব্র ভাবে গর্ব বোধ করি। প্রতিটা ইন্দ্রিয় আমাকে জানান দেয় আমি এই দেশকে ভালোবাসি, এই বাংলাদেশকে ভালোবাসি।
এরপর শুরু হয় পাঠ্য প্রক্রিয়া। সবাইকে বই দিতে দিতে চলে প্রায় আধঘণ্টা সময়। অবশেষে সবাই বই পায়। শুরু হয় বাঙলা দিয়ে। সবাই তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে “ মা, আম খাবো”। বুঝলাম না এতে কি শিখানো হচ্ছে। অবশেষে বুঝতে পারলাম শিক্ষিকা বুঝাতে চাচ্ছেন বাক্য কি , শব্দ কি, বর্ণ কি। তিনি বললেন, “মা” একটি শব্দ, “মা , আম খাবো” একটি বাক্য, “ম” একটি বর্ণ। সবাই তাঁর সাথে সাথে তাঁকে অনুকরণ করে করে তাই বলল। কেউ বুঝল বলে মনে হল না। বুঝতে হলে তো আগে বলতে হবে বাক্য কি, শব্দ কি, বর্ণ কি। কেউ কেউ এলোমেলো ভাবে বলল ‘মা’ একটি বাক্য, ‘আম খাবো’ একটি বর্ণ, ‘ম’ একটি শব্দ। শিক্ষিকা সেদিকে কর্ণপাত বা দৃষ্টিপাত বা লক্ষ্যপাত কিছু করলেন বলে মনে হল না। এই হল তথাকথিত এনজিও। ও তার উন্নয়ন কার্যকলাপ।
আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয় এই ছেলেমেয়েদের সুতীক্ষ্ণ তীব্র চিৎকার আর সহ্য করতে পারছিলো না বলে ওখান থেকে বের হয়ে আসলাম। হাঁটতে লাগলাম। কিছু স্মৃতি চারণ করতে লাগলাম। মনে পড়লো আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। যেটাকে আমার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে মনে হয়। সেখানেই আমি প্রাথমিক জ্ঞান পাই। আমিও এমন চিৎকার করে করে পড়তাম, সবার আগে পড়া বলতে চাইতাম, সবার চেয়ে বেশি যাতে আমার কণ্ঠস্বরটি শুনা যায় তাই যতটা সম্ভব চিৎকার করতাম। কোন কোন শিক্ষিকাকে আমার খুব ভালো লাগতো, আমাকে আদর করতো বলে। প্রায় সময় বাসায় আমি নিজে নিজে খেলা করতাম শিক্ষিকা সেজে। দরজাকে ব্লেকবোর্ড বানাতাম। আমার এক অতি প্রিয় খেলা ছিল সেটা। স্কুল শেষ করার পর আর কখনও যাওয়া হয় নি। আর কখনও দেখা হয় নি শিক্ষিকার পড়ানো, তারস্বরে চিৎকার আর কখনও শুনা হয় নি। এতো বছর পর এই প্রথম। সেই সময়কে মনে করা যেখানে আমি, শুদ্ধ আমি ছিলাম। যেখানে জীবন অতি চমৎকার ছিল, ছিল অতুলনীয়। যেখানে আমার ছায়ার আসে পাশেও কোন যন্ত্রণার ছিটেফোঁটাও ছিল না। যেখানে জীবন মানেই ছিল সুন্দর, স্বাভাবিক, কোমল, স্নিগ্ধ,রঙিন, উচ্ছল, প্রাণবন্ত, ভাবনাহীন, কষ্টহীন। আজ সবকিছু বীভৎস। কালো ছাড়া এখানে আর কোন রঙ নেই। হতাশা ছাড়া কোন আশা নেই। এখানে আজ সবই অতীতে পরিণত হয়েছে। এখানে শুধু অতীত মনে করা ছাড়া কিছুই নেই। ভাবতে অবাক লাগে সময় এমন নির্মম ভাবে পালটে যায় কেন। অতুলনীয় সময়গুলো কেন এমন তুলনাহীন হয়ে যায়। কেন কুৎসিত পচে গলে যাওয়া দুর্গন্ধময় ঘটনাগুলো জীবনের সাথে এমন আঠার মতো লেগে থাকে। যা থেকে বের হওয়া চরমভাবে অসম্ভব। কেন ভালো সময় গুলো শুধু স্মৃতিতেই অবস্থান করে। কেন সেগুলোকে আর জীবিত করা যায় না। কেন চাইলেই জীবনকে আর রঙিন করা যায় না?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×