হুট করেই ফেসবুকে আমার বন্ধুরা বললেন , কে বা কারা যেন তাদের পোস্ট রিমুভ করে দিয়েছে । সাধারনভাবেই আমার ধারনা হয়েছিলো ম্যাসিভ রিপোর্টিং-এর কারনে পোস্ট মুছে দেয়া হচ্ছে । বিশাল ফ্রেন্ডলিস্টের মাঝে অনেককেই দেখলাম 'পোস্ট মুছে দেয়া' নিয়ে বেশ সন্দিহান । অর্থাৎ যিনি দাবী করছেন তার পোস্ট মুছে দেয়া হয়েছে, তিনি নিজেই হয়তো প্রাইভেসী চেইঞ্জ করেছেন অথবা নিজেই মুছে দিয়েছেন ।
কিন্তু সমস্যা হলো আরিফ জেবতিকের পোস্ট খুব দ্রুতই মুছে দেয়া নিয়ে । কিছুদিন আগে তার প্রায় ১০-১২টা পোস্ট দেয়ার সাথে সাথে মুছে যাচ্ছিলো । অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করলেন , এত দ্রুত পোস্ট মুছে যাচ্ছে কি করে । কেননা, সাধারনভাবেই আমরা জানতাম , পোস্টে খুব বেশি রিপোর্টিং হলে তা মুছে দেয়া হয় । কিন্তু পোস্ট দেয়ার দুই থেকে তিন মিনিটের মাঝে এত বেশি রিপোর্টিং করা সম্ভব না যে কারো পোস্ট দিলেই মুছে ফেলা যাবে । এবং শুধু আরিফ জেবতিকই নন , ফেসবুকের আরো অনেকেই এইভাবে পোস্ট রিমভের শিকার হয়েছেন বারবার ।
তাহলে কিভাবে ?
এখানেই হচ্ছে রহস্য । যারা সামহোয়ারিন ব্লগের ব্লগার,তাদের অনেকেই হয়তো অটোমডারেশনের সাথে পরিচিত । নির্দিষ্ট সংখ্যক রিপোর্ট জমা হলে সামহোয়ারিন ব্লগ অভিযুক্ত পোস্ট মুছে দেয় । একই উপায় রয়েছে ফেসবুকেও । কোনো ব্যক্তির নামে নির্দিষ্ট রিপোর্ট করা হলে , নির্দিষ্ট সংখ্যার রিপোর্টের কারনে সেই পোস্ট মুছে দেয়া হয় অটোমেটিক্যালি । এইখানে যা উল্লেখ করতে হবে তা হলো , ফেসবুক বুলিইং (bullying ) বা হয়রানীমূলক ( Harassing ) পোস্টের বিষয়ে খুবই কঠোর এবং এইখানে তাদের অটোমেটেড মডারেশনও কঠোর । আর এইখানেই সব পোস্ট রিমুভের খেলা নিহিত ।
সচিত্র দেখাই তাহলে -
১। প্রথমে দূর্যোধন আইডি দিয়ে একটা পরীক্ষামূলক স্ট্যাটাস দেয়া হলো , যা আরেক আইডি দিয়ে রিমুভ করা হবে ।
(হাই রেজোলুশন ইমেজ -বড় করে দেখুন)
দূর্যোধন আইডি একটি পোস্ট দিয়েছে ''স্ট্যাটাস খাওয়াখাওয়ি করে লাভ কি '' ।
২। এখন আপনি একটি আইডি তৈরী করবেন , যার নাম হবে দূর্যোধনের যেই পোস্ট আপনি রিমুভ করতে চান , তার মাঝ থেকে দুইটি শব্দ নিয়ে । খেয়াল করুন , দূর্যোধনের পোস্টে দেয়া আছে ''স্ট্যাটাস'' ও ''খাওয়াখাওয়ি'' দুইটা শব্দ । এই দুইটা শব্দ দিয়ে আমি একটি আইডি বানালাম । নাম দিলাম ''স্ট্যাটাস খাওয়াখাওয়ি'' ।
ইমেইল হিসাবে যা খুশি তাই লিখে সাইন-আপ ফর্ম ফিল আপ করেন । আমি এখানে [email protected] নামে একটি মেইল আইডি দিয়েছি । এই নামে কোনো ইমেল একাউন্ট নেই । এবং ফেসবুকের সিকিউরিটি দূর্বলতার আরেকটি অংশ হলো এইটা , সঠিক ইমেইল ভেরিফাই না করেও আপনি একাউন্ট চালাতে পারবেন, কাউকে ইনবক্স করে হুমকিও দিতে পারবেন এমনকি রিপোর্ট বাটনের অপব্যবহার করে যে কারো পোস্ট মুছে দিতে পারবেন !
৩। ভুয়া একাউন্টের সব গুলো স্টেপ SKIP করে যান । যখন আপনাকে ফোন ভেরিফিকেশনের কথা বলা হবে , তখন আপনি ফোন ভেরিফিকেশনে যাবেন না । এটাও ফেসবুকের সিকিউরিটিতে আরেকটা দূর্বলতা, যেখানে আপনি নতুন একটি একাউন্টের কোনো ভেরিফিকেশন ছাড়াই অন্য যে কারো একাউন্টে লাইক কমেন্ট শেয়ার বা রিপোর্ট করতে পারেন । ছবিতে বর্নিত স্টেপ পর্যন্ত এসেই আরেকটি ট্যাব খুলুন এবং যেই স্ট্যাটাস বা পোস্ট রিমুভ করতে চান, সেখানে সরাসরি লিংক পেস্ট করুন ।
(হাই রেজোলুশন ইমেজ -বড় করে দেখুন)
৪ । এবার আপনি যেই পোস্ট রিমুভ করতে চান , সেখানে যান । ডান দিকের X (Cross) বাটন খেয়াল করুন । সেটা ক্লিক করলে দেখবেন রিপোর্টের অপশন এসেছে কয়েকটি ।
Is this post about you or your friend ?
yes, this post is about me or a friend
* i don't like this post
*it's harassing me
*it's harassing a friend .
আপনি It's harassing me বাটনে ক্লিক করবেন ।
(হাই রেজোলুশন ইমেজ -বড় করে দেখুন)
৫। এবার আপনি রিপোর্ট বাটন পাবেন । সেখানে রিপোর্ট কমপ্লিট করে বের হয়ে আসুন ।
(হাই রেজোলুশন ইমেজ -বড় করে দেখুন)
৬।
Voila !
পোস্ট রিমুভড হয়ে গেলো !
(হাই রেজোলুশন ইমেজ -বড় করে দেখুন)
হ্যাঁ পাঠক । এতই সহজভাবে ফেসবুকের অটোমডারেশন ব্যবহার করে আপনি যেকারো পোস্ট খেয়ে দিতে পারেন । ফেসবুকের অটোমডারেশনে কেউ যদি দাবী করে It's harassing me এবং ফেসবুক অটোমডারেশন যদি দেখে অভিযোগ/রিপোর্টকারীর আইডির সাথে পোস্টের কন্টেন্টে মিল আছে ,তবে সাথে সাথে তা রিমুভ হয়ে যায় - কোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখার সময়ও নেয় না কর্তৃপক্ষ ! এইজন্যই যে কেউ ইছা করলে যে কারো পোস্ট রিমুভ করে দিতে পারে , ফেসবুকের রুলস এন্ড রেগুলেশন ও অটোমডারেশনের এই ত্রুটিকে কাজে লাগিয়ে । এমনকি ইচ্ছেমত বারবার আপনি আইডির নাম পরিবর্তন করে একের পর একজনকে ভিকটিম বানাতে পারেন, নতুন আইডি খোলার লাগবে না !
সুতরাং ,ফেসবুকে আমরা দেখছি মোটামুটি তিনটি সিকিউরিটি ফ্ল বা দূর্বলতা রয়েছে যা দিয়ে আপনি অন্যের পোস্ট সরিয়ে দিতে পারেন বা অনধিকার চর্চা করতে পারেন -
১। ভেরিফাইড ঈমেইল একাউন্ট ছাড়াই একাউন্ট খুলে তা দিয়ে ইনবক্স (inbox threat) করা,কমেন্ট করে গালিবাজি অথবা ঘৃনা ছড়ানো ( hate speech) করা ।
২।ভেরিফাইড ইমেইল একাউন্ট ছাড়াও ফোন ভেরিফিকেশন ছাড়া আপনি যে কোনো উদ্দেশ্যে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতে পারেন । এবং একইসাথে বারবার নাম পরিবর্তন করে তা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারেন ।
৩ । অটোমেটেড মডারেশনের জন্য স্পেসিফিক কি ওয়ার্ড কে কাজে লাগিয়ে তা ব্যবহার করে রিপোর্ট করে যে কোনো ব্যক্তির স্ট্যাটাস / ছবি / পোস্ট রিমুভ করতে পারেন ।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে আমার কয়েকটি স্ট্যাটাস সরিয়ে দেয়া হয় একই উপায়ে । আমি বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমানো নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম । আড়াইহাজার 'লাইক' ও তিনশত 'শেয়ারের' পরপরই যখন পোস্ট সরিয়ে দেয়া হলো , তখন ভেবেছিলাম বিটিআরসি বা অন্য কোনো ইনফ্লুয়েনশিয়াল কোনো অর্গানাইজেশনের কারনে পোস্ট সরিয়ে দেয়া হয়েছে । কেননা এত এত রিপোর্ট করে সরিয়ে দেয়ার মতন সামর্থ্য বা সময় ফেসবুকে কারও আছে বলে মনে হয় নাই । পরবর্তীতে ফেসবুকের একজন সুহৃদ আমাকে ইনবক্স করে জানালেন , অনেকের এইভাবে স্ট্যাটাস সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তা কোনো রিপোর্টিং করে না । তখনই বিষয়টা খোলাসা হয় এবং একইসাথে ফেসবুকের আরো কয়েকটি দূর্বলতা চোখে পড়ে ।
এর মাঝে আমি বিবদমান বেশ কয়েকটি গ্রুপসহ অনেককেই বলেছিলাম , যদি তারা এইভাবে সবার স্ট্যাটাস রিমুভ করে দিতে থাকে , তবে অবশ্যই অবশ্যই আমি সবার কাছে এই ''ক্ষমতা'' (!)র খবর জানিয়ে দেব । দুয়েকজন এই ত্রুটিকে ব্যবহার করে অন্যদের জিম্মি করে রাখবে , অন্যরা তটস্থ থাকবে , তা হওয়া উচিত নয় । ফেসবুকের আরিফ আর হোসেইন ভাই একইসাথে চেষ্টা করেছিলেন , ফেসবুকে হানাহানি এবং স্ট্যাটাস রিমুভের অপংসস্কৃতি বন্ধের । তাতেও কাজ হয় নি ।
এখানে স্পষ্টতই জানিয়ে দেয়া যাক , দূর্যোধন সিপি গ্যাং , বেঙ্গল এনোনিমাস বা পাগলা গ্রুপের সাথে যুক্ত নয় । এইভাবে একের পর এক পোস্ট রিমুভের খেলা বন্ধ করার জন্য আমি আহবান জানালেও তারা ( আমি জানি তারা কে ) আমার পোস্ট সরিয়ে দিয়েছে বারবার । কিন্তু এইভাবে কতদিন ? এই বিষয়টা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার জন্য অনেকেই চেষ্টা করছেন , রিপোর্টের এই ত্রুটির সমাধান না হলে কয়েকজনের কাছে ফেসবুক জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না , সুতরাং খেলাটা সমান হোক । সবাই জানুক । ফেসবুকে হানাহানি বন্ধ করার জন্য এই পোস্ট রিমুভকারীদের অনেককেই আমি বারবার আহবান জানিয়েছি , তাদের বলেছি- তারা এই কাজ চালিয়ে গেলে ''সুপ্ত জ্ঞান'' প্রকাশ করে দেয়া হবে । আমি নিরুপায় । এই পোস্ট রিমুভের খেলা আর চলতে পারে না । সাধারন শত্রুতার কারনেও অনেকেই যখন এই 'জ্ঞান' কাজে লাগিয়ে অন্যদের পোস্ট 'খেয়ে' দিচ্ছে , তখন তা থামাতে ''জ্ঞানের'' গুরুত্ব কমিয়ে দেয়াটা উচিত বলেই এইমূহুর্তে মনে হচ্ছে ।
সবাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে মেইলে জানাই (অথবা এখানে ) অথবা মেইল করা যেতে পারে [email protected] -এ এই অপব্যবহারের বিষয়ে , তবেই হয়তো রক্ষা পাবে আপনার মত এবং মতপ্রকাশ । নতুবা একেকজন নিজেকে সর্দার বানিয়ে ফেলবে , এবং সর্দারের মর্জিতে চলতে থাকবে গ্যাং-ওয়ার ।
আমরা সেই ফেসবুক চাই না ।
এডুকেশন ফর অল ! ( )
পোস্টে কোনো কমেন্ট অপশন রাখা হলো না ।
@ যেকোন দরকারে দূর্যোধন(ফেসবুক) দূর্যোধন(টুইটার) । সবাইকে ধন্যবাদ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৯