এবার আসা যাক টেলিভিশন বিমুখ এই ম্যুভি প্রিয় দর্শক কিভাবে একটা টিভি সিরিজ নিয়ে মজে গেল। ঘটনাটি গত বৎসর। আমার চেহারা আর কথাবার্তার মধ্যে মনে হয় হালকা (বেশি না)আতলামী ভাব আছে, তো একদিন বসন্তের বিকেল বেলা ক্যাম্পাসে এক বান্ধবীর সাথে হাটছিলাম, আর মহাবিশ্বের বিকাশ নিয়ে জ্ঞানগর্ভমূলক আলোচনা করছিলাম,ও আবার লিটেরেচারের ছাত্রী। হঠাৎ বলে বসলো,
সেঃ জুজুলী ইওর অ্যাটিচ্যুড ইজ যাস্ট লাইক লেনার্ড, আই লাইক হিম মোস্ট।
(মেজাজ গেল বিলা হয়ে, এই ঘোড়ার ডিমের লেনার্ডটা আবার কে! কাবাবের মধ্যে হাড্ডী নাকি?)
আমিঃ লেনার্ড? হু ইজ দ্যাট গাই? হাউ ড্যু ইউ নো হিম? ফ্রম আওয়ার স্কুল?
সেঃ নোউপ, হি ইজ আ রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ইন ক্যালটেক, আই হেয়ার্ড ইউ সায়েন্স গাইজ হ্যাভেন ইজ দ্যাট প্লেইস।
আমিঃ ইয়াহ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)! রাইট ইউ আর, বাইদ্যওয়ে, হাউ ড্যু ইউ নো হিম? (কন্ঠে উষ্মা –স্বাভাবিকভাবেই!)
সেঃ (হেসে) কামওন, ডোন্ট বি জেলাস, হি ইজ এ্য ফিকশনাল ক্যারেক্টার ফ্রম দ্যা টিভি সিরিজ ‘দ্যা বিগ ব্যাং থিওরী’
আমিঃ (স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে) আ হা! রিয়েলি? টেল মি মোর এ্যবাউট দ্যাট…
যা হোক মোটামুটি এভাবেই আমার এই সারকাস্টিক্যাল কমেডী সিরিজটির সাথে পরিচইয় হয়। এর আগে ফ্রেন্ডস এর কিছু সিজন দেখেছিলাম, ভালো লেগেছিলো। কিন্তু বিগ ব্যাং থিওরীর ভালো লাগাটা যেন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এবার মূল প্রসঙ্গে আসিঃ
পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে গড়ে ওঠা এই শো। লেনার্ড, শেল্ডন, হাওয়ার্ড ও রাজ এরা কাজ করে ক্যালটেকে রিসার্চার হিসেবে আর পেনি একটা রেস্ট্যুরেন্টের ওয়েইট্রেস আর লেনার্ড ও শেল্ডনের প্রতিবেশী। লেনার্ড আর শেল্ডন একই এপার্টমেন্টে থাকে, হাওয়ার্ড থাকে তার মা-র সাথে আর ভারতীয় রাজ একাই থাকে তার বাসায়। চারজনেই চরম আঁতেল, কিন্তু এদের মধ্যে শেল্ডন একেবারেই অসহনীয় পর্যায়ের একটা পশু! কমিকস আর ফ্যান্টাসী ম্যুভিগুলো তাদের জান-প্রান, আর আছে ভিডিও গেইমস! আসুন এদের ওপর একটু চোখ বুলাই।
লেনার্ড হফস্ট্যাডটারঃ বলার অপেক্ষা রাখেনা সে আইকিউ টেস্টে ১৭৩ ও মাত্র ২৪ বৎসর বয়সে পিএইচডি প্রাপ্ত একজন আঁতেল, কিন্তু যথেষ্ট সহনীয় পর্যায়ের।ক্যালটেকের এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিসিস্ট ও কাজের ব্যাপ্তি লেজার নিয়ে গবেষণা করা বিশেষত হিলিয়াম-নিওন বা ফ্রি ইলেক্ট্রন লেজার বীম নিয়ে। বোস-আইন্সটাইন ঘণিভবনের ওপরও তার কাজ আছে। কিন্তু তার রুমমেট ও বন্ধু শেল্ডন মনে করে তার কাজ কোন মৌলিক বিষয়না যা কিনা অনেক আগেই তত্ত্বীয় পদার্থবীদরা শেষ করে রেখেছেন। মনেমনে লেনার্ড পেনিকে পছন্দ করে আর মাঝে ডেইট-ও করে ফেলেছে, আগেও তার কিছু বান্ধবী ছিলো, কিন্তু ব্রেকআপ হয়ে গেছে, এর মাঝে একজন আবার তার রিসার্চের কাজ চুরি করে নর্থকোরিয়ার কাছেও বিক্রি করে দিয়েছিলো!
শেল্ডন কুপারঃ ক্যালটেকের থিওরীটিক্যাল ফিজিসিস্ট ১৮৭ আইকিউ স্কোর ও ডবল পিএইচডি-র অধিকারী শেল্ডনকে নিয়ে পুরো পাতা লিখেও শেষ করা যাবেনা! সিরিজের সবথেকে বিরক্তিকর ও হাস্যোদ্দীপক চরিত্র হল এই শেল্ডন কুপার। সে সুপিরিয়রিটি কম্পলেক্সে ভোগে, নিজেকে মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) নয় বরঞ্চ ‘হোমো ন্যুভাস’ বা নতুন প্রজন্মের জিন যুক্ত এক অতি-বুদ্ধিমান গোত্রের শ্রেণীভূক্ত বলে মনে করে। ড্রাইভিং যানেনা কারন সে সময় (১৬ বছর বয়সে) নাকি সে প্যারাডাইম শিফটিং নিয়ে কাজ করছিলো, পিএইচডি-র থিসিস হিসেবে আর ১১ বৎসর বয়সে ক্যাটস্ক্যানার আর এক্সরে মেশিন বানিয়েছিলো যার নাম দিয়েছিল সে ‘মৃত্যু রশ্মি’! বাকি চার বন্ধুর কেউই তাকে দেখতে পারেনা তার বিরক্তিকর শিশুসুলভ আচরনের জন্য! প্রেম-রোমান্টিকতা কিচ্ছু বোঝেনা, কোন গার্লফ্রেন্ড হবার তো প্রশ্নই আসেনা, বাকি বন্ধুরা ভাবে তার বংশ বিস্তার হবে নিজের কোষ বিভাজনের মাধ্যমে, এ্যমিবার মতন!
হাওয়ার্ড ওলোউইটজঃ চার বন্ধুর মধ্যে অন্যতম যার কোন পিএইচডি ডিগ্রী নাই, বাসায় মায়ের সাথে থাকে আর কোন মেয়ে দেখলে তাকে পটানোর জন্য নানা কৌশল খাটাতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ধরা খায়!এমআইটি থেকে স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স করে স্যাটেলাইট ও মার্স রোভারের প্রজেক্টের সাথে যুক্ত আর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ডিসপোজেবল স্পেস টয়লেট নিয়ে কাজ করছে!জাতে ইহুদী, পাচটা ভাষা জানে বলে দাবী করে আর কোন মেয়ে দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় হাওয়ার্ডের। মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য টাইট ফিটিং চকমকি শার্ট, চিপা জিন্স আর অদ্ভুত সব পোশাক পড়ে ৬০এর দশকের স্টাইলের, আর ক্লাবে গিয়ে মার্স ল্যান্ড রোভার চালানোর লোভ দেখিয়ে মেয়ে পটানোর ধান্দা করে, মাঝে মাঝে মিলিটারী স্পাই স্যাটেলাইট হ্যাক করে মডেলদের বাসা খোঁজার জন্য। রাজের সাথে বেশী দোস্তির কারনে অনেক সময় অনেকে তাকে সমকামী বলে সন্দেহ করে, বেচারা!
রাজেশ খুত্রাপালি(রাজ) ভারত থেকে আগত এ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট যে কিনা লজ্জায় মেয়েদের সাথে কথাই বলতে পারেনা কিন্তু নারী ভাগ্য নেহায়েত খারাপ না, অন্তত হাওয়ার্ডের থেকে! বেশীরভাগ সময়েই মেয়েদের সাথে চুপকরে থাকে কিন্তু পেটে ১ ফোটা এলকোহল পড়লেই মুড়ির মতন কথা ফুটতে থাকে (আর বেশীর ভাগ-ই স্ল্যাং)!বলিউডের ঐশ্বরিয়া রায়ের ভক্ত, নতুন একটা এ্যস্ট্রইয়েড আবিস্কার করে নাম দিয়েছিলো ‘প্ল্যানেট বলিউড’!বাবা-মা ভারত থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলে সবসময় আর বিয়ের জন্য চাপ দেয়।
পেনিঃ প্রধান চরিত্র গুলোর মাঝে একমাত্র নারী সদস্যা,লেখাপড়ার দৌড় স্কুল পর্যন্ত, চাকুরী করে ওয়েইট্রেস হিসেবে ‘চীজ কেইক ফ্যাক্টরী’ রেস্ট্যুরেন্টে কিন্তু প্রবল সৌন্দর্য্য, বুদ্ধিমত্তা আর সামাজিকতার বৈশিষ্টে পরিপূর্ণ যার কারনে চার চারটা আঁতেলকে খুব সহজেই সামলে রাখতে পারে। এক এক সময় এক এক বয়ফ্রেন্ড যোগার করে পেনি, কিন্তু একটা সম্পর্ক-ও স্থায়ী হয়না। লেনার্ডকে মনে মনে পছন্দ করে আর, শেষে সিজন-৩ এ এসে লেনার্ডের সাথেই থিতু হয়। হাওয়ার্ড মাঝে মাঝে চান্স নিতে যায় কিন্তু পেনি পাত্তা দেয়না।
এইতো গেলো প্রধান চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট। এছাড়াও আছে লেসলি উইংকল , এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সের পিএইচডির আঁতেল ছাত্রী, যে কিনা একই সাথে লেনার্ড আর হাওয়ার্ডের সাথে প্রেম করে, আর শেল্ডনের প্রধান শত্রু, ক্যান্টিনে পেলেই তুলোধুনা করে ছেড়ে দেয়। আর ডঃ গ্যাবলহাউজার, ওদের সুপারভাইজর সহ আরও অনেকে।
যদি পর্বগুলো না দেখে থাকেন তবে আজ থেকেই দেখা শুরু করুন। কথা দিচ্ছি, ভালো লাগবে। আমার এক মহা আঁতেল ল্যাবমেইট যাকে কিনা কেউ কখনও হাসতে দেখেনাই, শেল্ডনের মতন রিসার্চ নিয়ে মহা সিরিয়াস, ঐদিন রাতে দেখি ওর ডেস্ক থেকে বিলাপ ও হাসি মিশ্রিত খিক খিক শব্দ আসছে...উকি মেরে দেখি চান্দুও 'দ্যা বিগ ব্যাং থিওরী'-তে মত্ত ...।
টরেন্ট লিঙ্কঃ
সিজন-১
সিজন-২
সিজন-৩
অনলাইনে দেখার লিঙ্কঃ
সিজন-১ (এপিসোড ১ থেকে শুরু )
সিজন-২
সিজন-৩