সুপ্রাচীন শহর বিক্রমপুর। চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেক রাজা রানী,জমিদার আর ইংরেজদের জীবনের অজস্র প্রেম ভালবাসা, জয়, পরাজয় নিয়ে গল্প ছড়িয়ে আছে এই শহরের মানুষের মুখে মুখে। প্রচলিত এমনই এক গল্প জোয়ারানকুসা।
বিক্রম পুর শহরে জোয়ারা নামে একটি মেয়ে ছিল। সে মেয়েটি শহরের ইদ্রাকপুর কেল্লার সরকারি বাসভবনে তার পরিবারের সাথে থাকতো। ইদ্রাকপুর কেল্লা তখন বাংলাদেশের প্রাচীন পরিত্যক্ত স্থাপত্য। তাই সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলো হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
সেখানকার সেই মেয়েটি সাধারন মানুষের চোখের সামনে অসাধারন রুপবতী হয়ে বড় হতে থাকে। জোয়ারার আসল নাম জুই। কিন্তু কেন জানি খুব ছোট বয়স থেকে নিজের নাম সে জোয়ারা বলে। তার অদ্ভুত সব আচরনে তার মা বাবা ও অবাক হতো। কেউ কেউ বলে জোয়ারারা এটা দ্বিতীয় জন্ম। অনেক কিছু সে আগেই বলে দিতে পারতো। তাই মা বাবা ও তাকে সব জায়গায় নিতো না।
প্রকৃতির অদ্ভুত নিয়মে তার মুখ দিয়ে অনির্বায নিয়তির কথা প্রকাশ হয়ে যেতো। কিন্তু সে মেয়ে টির জীবনেও প্রেম এলো
ষোড়শী জোয়ারা প্রেমে নোয়েল নামের কলেজ ছাত্র বদ্ধ উন্মাদ। সব সামাজিক নিয়ম কানুন আর মানুষের দৃষ্টি কে পরোয়া না করে নানা অজুহাতে কেল্লায় গিয়ে দেখা করে। পৃথিবীর সব সত্যিকারের ভালোবাসার ও কিছু অমোঘ নিয়তি থাকে। যে নিয়তি কে কোন প্রেমিক প্রেমিকা অতিক্রম করতে পারেনা।নোয়েলের কাছে জোয়ারা যেন ছিল অদ্ভুত নেশার মতো। প্রায় দিন কেল্লার সামনের সবুজ পানির পুকুরে নিজেদের চেহারার প্রতিচ্ছবি দেখতে ভালবাসতো। আর জোয়ারার গায়ের গন্ধ নিয়ে সে নিশ্বাস নিতো। ষোড়শী কিংবা অষ্টাদশ বয়স কে ঝাপিয়ে সব মানুষের জীবনে কতো প্রেম না উকি মারে। একদিন মনের অজান্তে কিংবা নিয়তির বেড়াজালে পড়ে নোয়েলের জীবনে হঠাৎ অন্য নারীর প্রবেশ হলো। সহ্য করতে পারলো না জোয়ারা। ইদ্রাকপুর কেল্লার ঘরের পাশের পরিত্যক্ত প্রাচীন সুড়ঙ্গ ধরে নামতে নামতে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল। তারপর রহস্যময় সুড়ঙ্গপথে কুকুড়, ঘোড়া, হাতি পাঠানো হল। জোয়ারার যেন পুরনো গল্প হয়ে গেল। এই দিকে হঠাৎ এক দুপুরে সেই সবুজ পানির পুকুরে নোয়েলের লাস ভেসে উঠলো। কেউ জানে না। কিভাবে এই শহর থেকে মানুষের জীবন গল্প হয়ে যায়। তারপর অনেক দিন পর ইদ্রাকপুর কেল্লার পিছনের বাগানে ঘাসের মতো কোন গাছ। নিজে নিজেই বেড়ে উঠছে।
তারপর একদিন কেল্লা সংস্কারের কাজে সরকারী গবেষক দল গেলেন। সেই ঘাসের মতো গাছ গুলোর নাম জানালেন সুগন্ধি গাছ জোয়ারানকুসা। এই দিকে হারিয়ে যাওয়া জোয়ারা বাবা বিস্মিত হলেন ভেবে তার সে মেয়েটি নিজেকে জোয়ারা বলতো। যতদিন সে চাকরীর কারনে কেল্লায় ছিলেন ততোদিন গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে অশ্রু ফেলতেন। আর সবুজ পানির পুকুর সব সময়ের জন্য একেবারে নিসঙগ হয়ে গেলো। একটা জীবন্ত ভালোবাসার ছায়া বুকে নির্বাক ইতিহাসের গল্প হয়ে রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২০