আসলে বাংলাদেশ যেনো আসলেই কোন দিকে যাচ্ছে। আমরা যেনো সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি করছি। কাউকে তোয়াক্কা করছিনা। না বিরোধীদল, না বিচার ব্যবস্থা। যা মন চায় তাই করে যাচ্ছি। আর বলি হচ্ছে কিছু ভালো মানুষ।
২নভেম্বর ‘ ২০১১, ঘটনাস্থল নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন নরসিংদী জেলা পৌরসভার তুমুল জনপ্রিয় মেয়র ও জেলা আ’লীগের প্রভাবশালী নেতা লোকমান হোসেন। কিছু বুঝে না উঠতেই তার ওপর হামলে পরে একদল মুখোশধারী।
তাদের গুলিতে ঝাঁঝড়া হয় তার পুরো শরীর। তাকে অবস্থার অবণতি হওয়ায় নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। তিনি বেচে নেই এমনটাই অনেকটা সত্য জেনেও শেষ বারের মতো চেষ্টা চালাতে ঢামেকের চিকিৎসকেরা তাকে নিয়ে গেলেন অপারেশন থিয়েটারে। রাতেই তার মৃত্যু হলো। আর হ্রদয় বিদারক ঘটনার খবর আমরা নিউজরুমে বসে সবাইকে জানাচ্ছিলাম।
একটু পরপরই কথা বলার চেষ্টা করছিলাম মেডিকেল রিপোর্টার, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও আমাদের ফটোগ্রাফার ও তার সঙ্গে আসা আত্বীয়-স্বজন ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তাৎক্ষণিক আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আসে তাতে দলীয় চক্রান্তেই তার ওপর হামলার বিষয়টা বুঝতে পারি।
যাই হোক ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় ও ২ বারের নির্বাচিত মেয়রের ওপর এ পৈশাচিক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ হামলার বিচার হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাকে আমি স্বাগত জানাই। আমার মনে হয় দেশের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষই এ জঘণ্যতম হামলার বিচার চায়। বৃহস্পতিবার এ হত্যাকা-ের পিছনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু ও তার ছোট ভাইয়ের নাম সন্দেহের তালিকায় এসেছে। দেখা যাক আসল খুনী কারা।
কিন্তু ঘটনার রাতেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, ৯০‘র গণঅভ্যুথ্থানের অবিসংবাদিত নেতা খায়রুল কবীর খোকনকে আটক করা হয়। আর এর মাধ্যমে এ সরকার প্রথমেই এর একটি রাজনৈতিক রুপ দিল। যা দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
আর লোকমান হোসেনের জানাযায় উপস্থিত লাখো জনতাও আমার মনে হয় এ হত্যাকা-ের বিচারে চায় স্বচ্ছতা। চায় আসল খুনীদের মুখোশ উন্মোচন।
এবার একটু অন্যভাবে বলি, জনপ্রিয় মেয়রের হত্যাকা-ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় জনতা। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে।কিশারগঞ্জগামী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৪টি বগির মধ্যে ৯টি বগিই দাউ দাউ আগুনে পুড়ে যায়। হয়তো উত্তেজিত জনতা কোনো কিছু না বুঝেই দেশের ক্ষতির কথা না ভেবেই তারা এসব করেছে। ক্ষতি করেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তাদের প্রতিবাদ জানানোর ভাষা এরুপ না হলেই হয়তোবা ভালো হতো।
এবার আসি এক বছর আগের একটি ঘটনায়। অক্টোবর ২০১০। সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম পাশে মুলিবাড়িতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক জনসভা। খালেদা জিয়া তখনও পৌঁছাননি। জনসভাস্থলে লাখো জনতার উপস্থিতি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল দেখার মতো। দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রবাহী ট্রেন ওই সময় যমুনা সেতু পার হবে।ইঠক জনসভাস্থলের কাছেই ওই ট্রেনের চাপায় মারা গেলেন ৭জন। আরও বেশি মানুষ মারা গেছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়েছিল। এসময় উত্তেজিত জনতাও লেঅকমান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদের মতো ওই ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। করেছিল হামলা।
কিন্তু আমরা দেখলাম ওই ঘটনায় ৯টি মামলা হলো। সিরাজগঞ্জ জেলা ব্এিনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৮ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। ঘরছাড়া হলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। যারা আটক হয়েছিলেন তারা জামিন না পেয়ে কারাগারেই ঈদ করেছিলেন।
পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমান জামিনে রয়েছেন। এখনও কোর্টে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি যতটা জানি গত ৩১ অক্টোবরও ওই ঘটনার একটি মামলার তারিখ ছিল।
তাই মেয়র লোকমানের ঘটনায় উত্তেজিত জনতার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতিসাধনে যখন একটি মামলাও হলো না, হলো না কেউ আটক। আর যে হামলা নিজেদের দলের কাছ থেকেই হয়েছে বলে সবাই বলছে।
আর সেখানে আওয়ামী লীগের এই সরকারই ওই সময় সিরাজগঞ্জে কি না নারকীয় তা-ব ঘটালো। কত হাজার মানুষকে বাড়িতে ঘুমুতে দিল না। যার রেশ এখনো চলছে। এই বাংলাদেশই কি আমরা চাই। ধিক এ নষ্ট রাজনীতিকে।